স্টাফ রিপোর্টার – সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’। দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি পরিণত হয়েছে গভীর নিম্নচাপে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’য় রূপ নিতে পারে। এটি এখন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল থেকে ১৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এমনটি জানিয়েছেন। বুধবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ নিয়ে প্রস্তুতির বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি।
তিনি জানান, আগামী ১৩ মে রাতে অথবা ১৪ মে ভোরে কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকায় আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় মোখা। কক্সবাজার, টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকাংশ বাড়ি ঘর ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জানমাল রক্ষায় সকল প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা সবদিক থেকেই প্রস্তুত আছি৷ প্রতিবারের মতো ইনশাহআল্লাহ এবারও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করতে পারব। সেনা, নৌ, কোস্টগার্ড প্রস্তুত আছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের জন্য নগদ ২০ লাখ টাকা, চাল এবং শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি গভীর সমুদ্র থেকে সকল নৌযানকে সরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে ঘূর্ণিঝড় মোচা মোকাবেলায় প্রস্তুতিসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে সভায় সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম জহিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শংকর কুমার দাস, ঝালকাঠি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ইউনুচ আলী সিদ্দিকী, ঝালকাঠি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম তালুকদার, জেলা তথ্য কর্মকর্তা আহসান কবির, নলছিটি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান, রাজাপুর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা আক্তার লাইজু, জেলা কাজী সমিতির সভাপতি মাওলানা এস এম বশির উপস্থিত ছিলেন।
ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে পরিস্থিতির মোকাবেলায় ক্ষয়ক্ষতি রোধে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয় সভায়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে ঘূর্ণিঝড়ের গতি-প্রকৃতির ওপর নজর রাখার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি জেলার সবগুলো সাইক্লোন শেল্টার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নদীতীরের বাসিন্দাদের সতর্কসংকেত মেনে চলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এখন এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। প্রতি মুহূর্তে এর গতিবেগ বাড়ছে। দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরে এক নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। বুধবার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় থাকা নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গভীর নিম্নচাপকেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপকেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। আবহাওয়া অফিসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।