আন্তর্জাতিক ডেস্ক- ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এশিয়ার লৌহমানবী হিসেবে উল্লেখ করেছে। সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনটি বুধবার (২৪ মে) প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শক্ত হাতে শেখ হাসিনার ক্ষমতা ধরে রাখায় লাভবান হয়েছে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা নারী সরকারপ্রধান।
তিনি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে দুই দশকের সময় তিনি তার ১৭ কোটি মানুষের দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৭৫ বছর বয়সী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ পর পর তিনটি নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। সব মিলিয়ে চারটি, যা ইন্দিরা গান্ধী বা মার্গারেট থ্যাচারের চেয়ে একটি বেশি। আগামী বছরের শুরুর দিকে নির্বাচনে জয়ী হবেন বলে তিনি আশা করছেন।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এই দেশটিকে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ করতে চাই’।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার এ বিজয় নিয়ে একটি এর আগে নিবন্ধ ছাপিয়েছে জাপানভিত্তিক সংবাদপত্র নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ। এশিয়ান রিভিউ মনে করছে, শেখ হাসিনার এই বিজয়ে তার সরকারের বিদেশনীতির হাতকে আরও শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করেছে। বিশেষ করে ভারত ও চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো পরিচালনায় শেখ হাসিনার অবস্থান আরও দৃঢ় হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমটিতে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয়বার ও নিজের চতুর্থ দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরপরই শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শ্রীরাম চাউলিয়া নামে নিবন্ধকার লিখেছেন, বিশ্বের প্রভাবশালী এই দুই নেতা এতটুকু বিলম্ব করেননি শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাতে।
শেখ হাসিনাকে লৌহমানবী অভিহিত করে শ্রীরাম নিবন্ধে লেখেন, শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কঠোর কর্তৃত্ব দিয়ে নিজের দেশের বিরোধী পক্ষকে যেমন উড়িয়ে দিয়েছেন, তেমনি পূর্ব ও পশ্চিম উভয়বিশ্বে নিজের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে নিয়েছেন তিনি। এশিয়ার পরস্পরবিরোধী প্রধান দুই শক্তি ভারত-চীনের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রেখে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য ছোট দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে সবচেয়ে ঊর্ধ্বে তুলে এনেছেন শেখ হাসিনা। নিবন্ধকার মনে করছেন- নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের ক্ষেত্রে চীন ও ভারত রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থানে। সেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ এমন এক মধ্যমপন্থা নিয়ে এগোচ্ছে, যা নয়াদিল্লি-বেইজিংয়ের ঠাণ্ডাযুদ্ধে স্থিরতা এনে দিতে পারে।
তিনি লিখেছেন, শেখ হাসিনার এই বিপুল নির্বাচনী বিজয় নয়াদিল্লি ও বেইজিংকে হ্যান্ডল করার সক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে বলেও মনে করছেন শ্রীরাম চাউলিয়া। নিবন্ধকারের অভিমত, বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক দেখতে চায় ভারত। আর তাই কৌশলগত কারণে শেখ হাসিনার কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাবের বিষয়টি ছাপিয়ে তার সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী উদ্যোগগুলো ভারতের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে।
অন্যদিকে চীনও শেখ হাসিনার নেতৃত্ব নিয়ে অনেকাংশেই সন্তুষ্ট। বৈদেশিক অর্থসহায়তা অর্জনের ক্ষেত্রে দেশটি শেখ হাসিনার বাস্তবমুখী কঠোর নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেয় দেশটি। নিবন্ধকার লিখেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের পর শেখ হাসিনা এখন জানেন তাকে গুরুত্ব না দিয়ে কোনো উপায় নেই চীনের। ফলে অন্য যে কোনো উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে চীনের সঙ্গে এখন তার সম্পর্কটিই সবচেয়ে ভালো। চীনের সঙ্গে শেখ হাসিনার এই ভারসাম্যের অর্থনৈতিক কূটনীতি ভারতকে কিছুটা শান্ত রেখেছে বলে মনে করছেন নিবন্ধকার শ্রীরাম চাউলিয়া। তার অভিমত, বাংলাদেশ এখন চীন থেকে যা প্রয়োজন তা নিচ্ছে, কিন্তু তার জন্য দেশের চাবিকাঠি হাতে তুলে দিচ্ছে না। আর এবারের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর শেখ হাসিনার দরকষাকষির হাত আরও দৃঢ় হয়েছে।
নিবন্ধকার মনে করছেন, ভারতের জন্য শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্বই প্রয়োজন। যিনি সীমান্তে ইসলামপন্থীদের চাপে রাখবেন, আবার চীনকেও নিয়ন্ত্রিত সম্পর্কে বেঁধে রাখবেন। শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবার শপথ নিলেন- তাতে ধরেই নেয়া যায়, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কূটনীতিতে এখন চালকের আসনে শেখ হাসিনাই।