দেশে ফেরার পথে বিমানে ঘুরে ঘুরে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হঠাৎ বিমানে নিজের আসনে বসে পাশে প্রধানমন্ত্রীকে দেখে অনেক যাত্রী বিস্মিত ও আনন্দিত হয়ে ওঠেন। তাদের সহযাত্রী যে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা!
সুইজারল্যান্ড সফর শেষে শুক্রবার (১৬ জুন) দিনগত রাত ১টা ৫৫ মিনিটে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়মিত ফ্লাইটে স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে জেনেভা থেকে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা করেন তিনি।
এমন মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে সরকারপ্রধানের সঙ্গে অনেকে ছবি তোলেন। সেই ছবি তোলার আবদারও মেটান তিনি। এতে নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইটে সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধুকন্যার মহান হৃদয় ও মমতার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য দেখলেন।
এদিন জেনেভা থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বিমানের যাত্রীরা আসনে বসে হঠাৎ নিজের পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখতে পান। বাংলাদেশের সরকারপ্রধান ঘুরে ঘুরে সব আসনের পাশে গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ফ্লাইটে যাত্রীদের আসনের পাশে প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে অনেকেই বিস্মিত ও অবাক হয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে তারা ছবি তুলতে চান। প্রধানমন্ত্রী অনেক যাত্রীর অনুরোধ মেনে তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন।
শেখ হাসিনা শিশুদেরও স্নেহ করেন। তাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্পে-আড্ডায় মেতে ওঠেন। কয়েকজন শিশুকে পরম মমতায় কোলেও তুলে নেন তিনি। এ সময় বিমানের ভেতরে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেও কয়েকজন যাত্রী গত সাড়ে ১৪ বছরে দেশের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৪-১৫ জুন অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট: সোশ্যাল জাস্টিস ফর অল’ সম্মেলনে যোগদান শেষে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে দেশে ফিরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুক্রবার দিনগত রাত ১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
‘ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ার্ক সামিট: সোশ্যাল জাস্টিস ফর অল’-এ যোগ দিতে গত ১৩ জুন চারদিনের সরকারি সফরে জেনেভা যান প্রধানমন্ত্রী।
গত ১৪ জুন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ইউএনএইচসিআর প্রধান ফ্লিপো গ্র্যান্ডি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বাসস্থানে সাক্ষাৎ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী প্যালাইস ডি নেশনসে সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালেইন বারসেটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এরপর সেখানে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী প্যালাইস ডি নেশনসে ‘ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট ২০২৩’-এর প্লেনারিতে ভাষণ দেন।
সফরকালে শেখ হাসিনা মাল্টার প্রেসিডেন্ট ডক্টর জর্জ ভেলার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হাউংবোর সঙ্গে বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় আইএলওর সদরদপ্তরে ডিজির আয়োজিত উচ্চপর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ডব্লিউইএফ কার্যালয়ে এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে একটি বৈঠকের পর ‘অ্যা টক অ্যাট দ্য ডব্লিউইএফ’-এ যোগদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেখানে তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) আয়োজিত ‘নিউ ইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটি ইন স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
ওইদিন সন্ধ্যায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক ড. ওকোনজো-আইওয়ালা তার বাসস্থানে সাক্ষাৎ করেন। পরে সন্ধ্যায় একটি সামাজিক সংবর্ধনায়ও যোগ দেন শেখ হাসিনা।
‘দ্য ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট ২০২৩: সবার জন্য সামাজিক ন্যায়’ হলো সামাজিক ন্যায়বিচারকে সমর্থন করার জন্য বিস্তৃত, সমন্বিত ও সুসঙ্গত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা মোকাবিলায় সোচ্চারদের উচ্চপর্যায়ের বৈশ্বিক ফোরাম।
সম্মেলনে বেশ কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের অতিথিদের পাশাপাশি মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। দুই দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলনে আরও টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব গড়তে সমন্বিত যৌথ পদক্ষেপের কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়।