পর্যটকদের বরণে পুরোপুরি প্রস্তুত সৈকত শহর কক্সবাজার। নতুন করে সাজানো হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে অগ্রিম বুকিং হয়েছে মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রুম। পর্যটক টানতে অনেক হোটেলে দেওয়া হচ্ছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। তারপরও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত পর্যটক।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এখন অনেকটাই পর্যটক শূন্য। সোমবার (২৬ জুন) সারা দিনে সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে সৈকতে মাত্র দুই হাজারের মতো পর্যটক নামতে দেখা গেছে। তার মধ্যে স্থানীয় লোকজনও রয়েছেন।
সৈকতের অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকানপাট বন্ধ। কিছু দোকানপাট-রেস্তোরাঁ খোলা রাখা হলেও ক্রেতা নেই মোটেও। হোটেল-মোটেল জোনের ব্যস্ততম সৈকত সড়কটিও অনেকটা ফাঁকা, যানবাহনের দৌড়ঝাঁপও তেমন নেই। এখন সব কটি হোটেল-মোটেল মিলিয়ে তিন হাজারের মতো পর্যটক রয়েছে।
তবে ঈদুল আজহার ছুটিতে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে হোটেল-মোটেল মালিকরা কক্ষভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় ঘোষণা করছেন।
ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এবারের ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি থাকলেও বুকিং হয়নি। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে ঈদের ৩য় দিন থেকে কিছুটা পর্যটক সমাগম হবে বলে আশা করছি।
তারকা মানের হোটেল রয়েল টিউলিপের এজিএম নাবিদ চৌধুরী বলেন, আমাদের হোটেলে এখনো তেমন বুকিং হয়নি। আমাদের হোটেল থেকে বিশেষ ছাড় দিলেও অনলাইন-অফনলাইনে তেমন সাড়া পাইনি। হোটেলে এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশও বুকিং হয়নি।
একই অবস্থা ১২তলা ‘সি উত্তরা’ হোটেলের। হোটেলের মহাব্যবস্থাপক ওসমান গণী বলেন, তারাও ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষ ভাড়ায় ছাড় দিচ্ছেন, কিন্তু পর্যটকের সাড়া মিলছে না। আমাদের হোটেলে এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। অন্যান্যবার এসময়ে শতভাগ বুকিং হয়। তবে এবারে ব্যতিক্রম।
শহরের কলাতলী, লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা এলাকার অন্তত ৫০টি হোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটা হোটেলে তিন থেকে সর্বোচ্চ ১০টি কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। তাও সীমিত সময়ের জন্য। কটেজগুলোতে ৪ হাজার টাকার রুম, ১ হাজার টাকা ঘোষণা দিলেও সাড়া মিলছে না।
শহরের সি গাজীপুর রিসোর্টের ব্যবস্থাপক আব্দুল জাব্বার বলেন, আমার কটেজে ২০টি রুম আছে। সেগুলো ৪ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়ে থাকি। এবারে বুকিং না থাকায় ১ হাজার টাকা ঘোষণা দিলেও কোনো সাড়া পাচ্ছি না।
এদিকে বর্ষা মৌসুমে উত্তাল সাগরের কথা মাথায় রেখে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় ৩টি পয়েন্টে সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য প্রস্তুত লাইফগার্ড কর্মীরাও।
সি-সেইফ লাইফ গার্ডের ইনচার্জ জয়নাল আবেদীন ভুট্টু বলেন, কক্সবাজার কয়েকদিন ধরে টানা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। পশ্চিম বঙ্গপোসাগরে সৃষ্টি হাওয়া লঘু চাপের কারণে সাগর উত্তাল। তারপর সবকিছু মাথায় রেখে আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। সমুদ্র সৈকতে যে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট রয়েছে সেখানে আমাদের ওয়াচ টাওয়ারে পর্যবেক্ষণ বাড়ানো হবে।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা প্রস্তুত। কক্সবাজার যেসব পর্যটক কেন্দ্র আছে সেখানে আমাদের টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি পয়েন্ট আমাদের টুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হবে, পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।