অবৈধ উপায়ে অর্জিত প্রায় ৫৭ কোটি টাকা সম্পদের খোঁজ মিলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেনের। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেননি আপিল বিভগের চেম্বার আদালত। তবে তার পাসপোর্ট দাখিল করার শর্তে বহাল রাখা হয়েছে জামিন।
আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি দেশ ছাড়তে পারবেন না। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান। ওই কর্মকর্তা বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে কর্মরত বলেও জানান আইনজীবী।
তার জামিন বাতিল চেয়ে দুদকের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহীমের চেম্বার আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ তার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। পরে ওই জামিন স্থগিত ও বাতিল চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সে আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ।
এরে আগে গত ২৯ আগস্ট ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সাল বিন আতিক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন।
আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলায় উচ্চ আদালত ছয় সপ্তাহের মধ্যে জাকির হোসেনকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দিয়েছিলেন। উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আসামি ২৯ আগস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। তবে আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর অবকাশকালীন আদালত তার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। বর্তমানে মামলা তদন্তাধীন রয়েছে বলেও জানান দুদকের আইনজীবী।
গত ১৪ মার্চ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলের অভিযোগ আনা হয়।
জাকির হোসেনের জমা দেওয়া আয়কর নথি ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে দুদক তার অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের তথ্য পায়। ২০২১-২২ আয়কর নথি অনুযায়ী, জাকির হোসেনের নামে ধানমন্ডির ১ নম্বর সড়কে ৫০ লাখ ৮৪ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট, খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ায় ২৬৩ অজুতাংশ জমির ওপর ৭৫ লাখ ৭৫ হাজার ৭০০ টাকা খরচ করে পাঁচতলা ভবন নির্মাণসহ মোট ১ কোটি ৫১ লাখ ১০ হাজার ২০০ টাকার স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। এছাড়া ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা গাড়ি, নগদ ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৯৭০ টাকা ও ব্যাংক হিসাবে রক্ষিত ৭২ হাজার ৫০৬ টাকাসহ মোট ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭৬ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য রয়েছে আয়করে। সব মিলিয়ে জাকির হোসেনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৬ টাকা।
ওই সম্পদের বিপরীতে আয়ের উৎস সম্পর্কে তিনি সঠিক তথ্য প্রদর্শন করতে সক্ষম হননি বলে ওই সম্পদ তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়।
তাছাড়া অনুসন্ধানে আসামির নামীয় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, বাগেরহাট শাখায় বিভিন্ন সময়ে ৭টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৩১ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার নয়শ ১৩ টাকা, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ভিকারুননিসা নুন স্কুল শাখার ১টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৪ কোটি ৩ লাখ ১০ হাজার নয়শ ৩০ টাকা এবং পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের ধানমন্ডি শাখায় এফডিআর হিসাবে ৫ কোটি ৬২ লাখ ৩৫ হাজার একশ ৫৯ টাকাসহ সর্বমোট ৪১ কোটি ৩৬ লাখ ৭ হাজার টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকগুলোতে লেনদেন করা ওই অর্থের বৈধ উৎস সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডপত্র অনুসন্ধানের সময় পাওয়া যায়নি।
মামলার বিবরণীতে আরও বলা হয়েছে, আসামিরা আরও অনেক অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন, যেগুলোর আয়ের উৎস উল্লেখ নেই।
জাকির হোসেন ১৯৯২ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। তিনি ১৯৯৫ সালে কুয়েত দূতাবাসে এবং ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কেনিয়ার নাইরোবিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।