গত ১৯ দিন ধরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি রয়েছে বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। ইতোমধ্যে জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দস্যুরা।
এমনকি দুইপক্ষের সমঝোতার আভাসও মিলেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আসন্ন ঈদুল-ফিতরের আগেই জাহাজসহ নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে জাহাজটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপ।
এদিকে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে জিম্মি ২৩ নাবিকের সঙ্গে আচরণে পরিবর্তন এনেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। নাবিকদের এখন থাকতে দেওয়া হচ্ছে নিজ নিজ কেবিনে।
নাবিকদের খাবারে ভাগ বসানো বন্ধ করে এখন উপকূল থেকে দস্যুরা ছাগল-দুম্বা নিয়ে আসছে। যার থেকে নাবিকদেরও খাওয়ানো হচ্ছে। তবে বিশুদ্ধ পানির সংকট এখনও কাটেনি। পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে রেশনিং করে।
এ প্রসঙ্গে কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাজের নাবিকরা সবাই সুস্থ আছেন। তাদের প্রতি দস্যুরা কোনো খারাপ আচরণ করছেন না।
তিনি আরও বলেন, নাবিকদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। দস্যুদের সঙ্গেও আলোচনায় অগ্রগতি আছে। ঈদের আগে যাতে জিম্মি নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা যায় আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি।
এদিকে জাহাজের মালিকপক্ষের তরফে জিম্মিদের উদ্ধারে জোরদার আলোচনার মধ্যে ২৩ জনের একটি নাবিক গ্রুপকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। যাতে এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করা দস্যুদের সঙ্গে মুক্তিপণের বিষয়টি মীমাংসা হলে এই নাবিকেরা এমভি আবদুল্লাহ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে পারেন
নতুন ২৩ নাবিককে এমভি আবদুল্লাহতে প্রতিস্থাপন করার পর জিম্মি ২৩ নাবিককে উড়োজাহাজ করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
মালিকপক্ষের মুখপাত্র মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, সোমালিয়া থেকে জাহাজটি আরব আমিরাত যেতে লাগবে ১৩ দিন। নতুন নাবিকেরা জাহাজের দায়িত্ব নিতেও সময় লাগবে। সবকিছু মিলে ঈদের আগের জাহাজ ও জিম্মিদের উদ্ধারের বিষয়টি বাস্তবসম্মত কিনা সেটাও দেখতে হবে।
দস্যুদের কবলে জিম্মি থাকা এক নাবিকের স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা প্রতিদিন এসআর শিপিংয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জিম্মি নাবিকদের খবর নিচ্ছি। তারা সর্বশেষ আমাদের বলেছেন, নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে দস্যুদের সঙ্গে কথা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাহাজের মালিক দস্যুদের চাহিদামতো অর্থ দিতে রাজি হয়েছেন। এখন নাকি সমস্যাটা হয়েছে ডলার নিয়ে। দস্যুদের এই টাকা দেশ থেকে নাকি যোগান দেওয়ার সুযোগ আইনে নেই। এ টাকা অন্য দেশ থেকে সংগ্রহ করে দিতে হবে। এখন টাকা সংগ্রহের জন্য নাকি নাবিকদের মুক্তিতে দেরি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকসহ কয়লাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করে সোমালি দস্যুরা। পরে তারা জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলের কাছে নিয়ে যায়।
চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জিফল উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করা আছে।