Search
Close this search box.

বিরোধী রাজনীতির নামে পাকি-দালালীর স্বরূপ

বিরোধী রাজনীতির নামে পাকি-দালালীর স্বরূপ

মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপি

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে একটি উপসর্গের আবির্ভাব ঘটেছে। প্রায়শ শোনা যায় আর অল্প ক’দিন, তারপরই সরকারের পতনতো হবেই পালাবার পথও পাবেনা। বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে এসব হুমকী-ধমকী বেশী বেশী দেয়া হচ্ছে। বিদেশে পালিয়ে গিয়েও কেউ কেউ টেবলেট মার্কা অনলাইন টিভি খুলে ওসব অপ-প্রচার চালাচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছে তাজ হাশমী, মেজর দেলোয়ার ও অন্যান্য খুছরা-খাছরা চেহারা। কেউ কেউ আছেন তারা শেখ হাসিনার নামটিও ঠিক মত উচ্চারন করেন না। হাছিনা বলে ডাকেন। তাঁর নামের সাথে সাথে যে শেখ বলে একটি শব্দ আছে তা তারা বলেন না। নামের অর্ধেক বলেন। চরম হীনমন্যতা কাজ করে। শেখ হাসিনা যখন তাঁর উদাহরনসম রাষ্ট্র নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বের ১০ জন সফল রাষ্ট্রনেতার অন্যতম কিংবা বিশ্বের তিনজন সৎ রাষ্ট্রনেতার মধ্যে ২য় ঘোষিত হন তখন গা জ্বলে, পেট ব্যাথা শুরু হয় এবং যাচ্ছে তাই মুখ দিয়ে নোংরা ভাবে বেরোয়।

পাকি-দালালীর একটি নমুনা হলো বিএনপির তথাকথিত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি এক গেদারিংএ বলেছেন, “পাকি-আমলে অর্থাৎ পাকিস্তানি আমলেই ভালো ছিলাম”। এর কি জবাব দেওয়া যায়। কেবল মোশতাকের লাশ দাউদকান্দির গ্রামের বাড়ি নেবার সময় যেভাবে রাস্তার দুই পাশের মানুষ থুতু ছিটিয়ে ছিল এই জীবিত মোশতাকের মুখেও তেমনি থুতু ছিটানো দরকার। আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খান যখন বললেন মীর্জা ফখরুল এবং তার বাবা উভয়ই রাজাকার ছিল তখন পাঠক বুঝতে পারেন তাদের এই পাকিস্তানপ্রীতি নতুন কিছু নয়।

অথচ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রিকেটার ইমরান খান রাজনীতির মাঠে নেমে ব্যাটিং করতে করতে রান তুলে এবং বোলিং করে প্রতিপক্ষের একটার পর একটা উইকেটের পতন ঘটিয়ে অতি অল্প দিনেই ক্ষমতার শীর্ষে বসে গেলেন তখন পাকিস্তানিরা একটু অবাকই হয়েছিল। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা তখন ভঙ্গুর। বাংলাদেশের তুলনায় পর্যূদস্ত। এক সংবাদ সম্মেলনে খান সাহেব সাংবাদিকদের উদ্দেশে বললেন “ভাইয়োঁ-বহিনোঁ ঘাবড়াইয়ে মত, ইয়ে দিন নিহি রাহেগা। মুজে স্রেপ ৩ সাল কি মহল্লত দিজিয়ে, মায় পাকিস্তানকো এক সুইজারল্যান্ড বানা দেয়োঙ্গা। সাংবাদিকদের মধ্যে একজন দাঁড়িয়ে বললেন “মুহতারম উজিরে আযম সাহেব হামে সুইজারল্যান্ড নিহি চাহিয়ে। হাম আপকো ৩ সাল কেয়া দশ সাল দেতাহোঁ আপ হামে এক বাংলাদেশ বানা দিজিয়ে”। পাকিস্তানিরা যখন বাংলাদেশ সম্পর্কে এত উচ্চ ধারণা পোষণ করছে তখন মির্জা ফখরুলরা বলছেন পাকিস্তান আমলেই ভালো ছিল। একে ধরে পোটলায় ঢুকিয়ে পাকিস্তানে ফেলে আসা দরকার। কেবল এই মীর্জাই নয় বিএনপির সমাবেশে প্রতিটি কেন্দ্রীয় নেতা এমনি ফাউল টক করে চলেছেন। মনে হয় তারা ক্ষমতার সিঁড়িতে পা রেখেছেন আর এক স্টেপ নিলেই ময়ূর সিংহাসন দখলে চলে যাবে। তাদের মধ্যে এক কুৎসিত সম্রাটের বেহায়াপনা লক্ষণীয়।

একটা গল্প মনে পড়ে গেল। এক রাজা দরবারে কথা বলে বলে ক্লান্ত হয়ে সিংহাসন ছেড়ে বিশ্রাম নেবার জন্যে অন্ধর মহলে চলে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে সভাসদ পাইক-পেয়াদা চলে গেল। পুরো দরবার খালি। ময়ূর সিংহাসনও খালি। রাজবাড়ির আশেপাশে অনেক বাগান। গাছে গাছে বানরের দল। হঠাৎ এক বান্দরের চোখ পড়ল খালি সিংহাসনের দিকে। সে দুই তিন লাফে গাছ থেকে নেমে সিংহাসনে বসে পড়ল। আগে সে দেখেছে রাজা সিংহাসনে বসার সাথে সাথে সভাসদ দাঁড়িয়ে সম্মান দিত, তার বেলায় কেউ দরবারেই আসছে না। দু তিনজন পেয়াদা বান্দরকে তাড়াতে গেলে সে মুখ ভ্যাংচি দিয়ে তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। একজন লাঠি আনলে সে আরো হিংস্র হয়ে ওঠে। সে দেখেছে রাজা সিংহাসনে বসলে পেয়াদা চাপরাশি সবাই রাজা কে কুর্নিশ করে কিন্তু তাকে করছে না, এ দেখে সে আরো জোরে জোরে চেঁচামেচি শুরু করে। পেয়াদারা উপায়ান্তর না দেখে বিষয়টি রাজাকে জানায়। রাজা তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশ প্রদান করেন ‘গুলি মারদো’ তারপর যা হবার হয়ে গেল। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ক’দিন আগে বললেন, তারা আন্দোলন করছেন দেশটাকে ‘মেরামত’ করার জন্য। ক্ষমতায় গেলে তারা দেশ ‘মেরামত’ করবেন। গত রোববার চ্যানেল ২৪ এর মুক্তবাক টকশোতে প্রশ্নটি উথাপিত হলে সঞ্চালক অন্যতম আলোচক (জুম) বিএনপি’র হারুনুর রশিদ এমপির কাছে জানতে চান মেরামত বলতে কি বোঝাতে চাইছেন? হারুনুর রশিদ এমপি সরকারের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন, গণতন্ত্র ধ্বংস, অর্থনীতি ধ্বংস এমনি বিশাল নেগেটিভ কথা বলেন বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভাঙ্গাচোরা বিষয়াদি মেরামত বা সংশোধন করা হবে। এই টকশোতে ট্রেজারি বেঞ্চের এমপি হিসেবে আমি মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপি ছাড়া প্রথম আলোর সোহরাব হাসান অংশ নেন। সোহরাব হাসান তাদের লাইন অনুযায়ী দুদিকে ব্যাট করলেন। আমি আলোচনায় অংশ নিয়ে বললাম এই ‘মেরামত’ শব্দটি সন্ত্রাসী শব্দ। এটি বিএনপির জন্মগত। বিএনপির ‘মেরামত’ মানে ১৫ ই আগস্ট এবং ৩রা নভেম্বর এবং একুশে আগস্টের হত্যাকান্ড, বিএনপির ‘মেরামত’ মানে ২০১৩-১৪ এবং ১৫-এর পেট্রোল বোমা বা অগ্নিসন্ত্রাসে দেড় শতাদিক লোকের প্রানহানি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ জল্লাদ মিলিটারি ইয়াহিয়ার সেনাদের গুলিতে এক রিকশাওয়ালার মরদেহ নিথর নিস্তব্ধ রিক্সার ওপর যেভাবে পড়েছিল ঠিক সেভাবেই কাভার ভ্যান চালক ১৩-১৪ বছরের মুনিরের নিথর দেহ জাতি দেখেছে। তাদের মেরামত মানে ১ কোটি ২৪ লাখ ভুয়া ভোট দিয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতা দখল এবং সেই পহেলা অক্টোবর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার ৫/৬ ঘন্টা আগে থেকেই শুরু করে নৌকার ভোটার এবং সনাতন ধর্মাবলীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অত্যাচার নির্যাতন, কুঠার দিয়ে ঘরের বেড়া ভেঙ্গে দেয়া, গাছ কেটে নেয়া, পুকুরের মাছ ধরে নেয়া, গরু জবাই করে মাংস নিয়ে যাওয়া, ছোট ছোট দোকানদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় এইভাবে নির্যাতন চালানো হয়। সনাতন ধর্মাবলীদের নারীদের ওপর চালানো হয় ধর্ষণ তথা পাশবিক নির্যাতন। পহেলা অক্টোবর নির্বাচনের দিন থেকে ১০ অক্টোবর ২০০১ এই ১০ দিন মানুষের ওপর যেভাবে নির্যাতন চালানো হয় তা কেবল দেশের কোন কোন এলাকায় একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর জামাত শিবির নির্যাতনের সাথে তুলনা করা যায়। অবশ্য একাত্তরে যে জামাত-শিবির পাকি সেনাদের সাথে থেকে নির্যাতন চালিয়েছিল সেই জামাত শিবির ২০০১ এর পহেলা অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপির দোসর ছিল। বিএনপির মেরামত দেখেছি সিইসি লতিফুর রহমানের দায়িত্ব গ্রহণের আগেই ১৩ জন সচিবকে চাকরিচ্যুত করার ঘটনা। এরকম ভুরিভুরি তথাকথিত মেরামতের ঘটনা রয়েছে। যেমন ১৯৭৭ সালের ২রা অক্টোবর ক্যুর মাধ্যমে বিমান বাহিনীকে অফিসার শূন্য করা হয়। এমনকি এই ক্যুর পর দেশের বিভিন্ন কারা অভ্যন্তরে সামরিক ট্রায়ালের মাধ্যমে শত শত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। লাশের কফিন তাদের অনেকের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। যে কর্নেল তাহের নভেম্বরের সৈনিক হত্যার পরিস্থিতিতে মিলিটারি জিয়াকে বাঁচিয়েছিল সেই কর্নেল তাহেরকেও মিলেটারি জিয়া জেলের অভ্যন্তরে সামারী ট্রায়াল করে হত্যা করেছিল। এবং এইসব হত্যাকাণ্ডকে ৫ম সংশোধনির মাধ্যমে জায়েজ করে। জাতির পিতার খুনিদের বিচার করা যাবে না এই আইন পাশ করে ইনডেমনিটি জারি করেছিল। কারাফিউ’র মধ্যে ১৯৭৯ এর সংসদ নির্বাচন করেছিলেন এবং এসবও ৫ম সংশোধনের মাধ্যমে জায়েজ করেছিলেন। মির্জা ফখরুলের এমনি মেরামতের ফিরিস্তি দিতে গেলে বড়সড় একখানা গ্রন্থ রচনা করতে হবে বরং মীর্জা ফখরুলের কাছে আমার পরামর্শ হলো পথে-ঘাটে এইসব না বলে নিজের দলের মেরামতের দিকে তাকান। আপনার দলের এক নম্বর নেতা বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে কারারুদ্ধ (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দয়ায় কারাগারে না রেখে বাড়িতে থাকবার সুযোগ দিয়েছেন), দ্বিতীয় নেতা তারেক রহমানও দুর্নীতি এবং একুশ আগস্ট গ্রেনেট হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং বিদেশে পলাতক, মির্জা ফখরুল সাহেব মেরামত করতে হলে এদের মেরামত করেন। হাওয়া ভবন খোয়া ভবনে কি কি হত তার মেরামত করেন। তারেকের অসামাজিক কার্যকলাপের মেরামত করুন। মির্জা ফখরুল সাহেব আপনার বাবা চখা মিয়া রাজাকার ছিলেন বলে জেনেছি আগে এর মেরামত করেন। বিভিন্ন জায়গায় আপনাদের মোটামুটি বড় সমাবেশ হওয়ায় হালে পানি এসেছে মনে হয়। আর তাইতো গয়েশ্বর রায়, মীর্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আমানুল্লাহ আমানদেরও হালে পানি এসেছে, তারা বলছেন শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে (মামা বাড়ির আবদার), পালাবার পথ পাবেন না। ১০ ডিসেম্বরের পর রাষ্ট্র চালাবে বেগম খালেদাজিয়া। এতদিন তিনি অসুস্থ ছিলেন বিদেশের চিকিৎসা করাতে হবে ইত্যাদি কত কিছু বলা হচ্ছিল এখন চাঙ্গা হয়েছেন, দেশ চালাবেন, পেশিশক্তি অর্জন করেছেন। ১১ ডিসেম্বর নাকি দুর্নীতির দায়ে সাজা প্রাপ্ত ও পলাতক তারেক রহমান দেশে ফিরছেন এবং গোটা দেশের মানুষ নাকি অভ্যর্থনা জানাতে বাঁধভাঙ্গা উপস্থিতি হবে। মির্জা ফখরুল যেমন নিজের বাপের কথা ভুলে গেছেন তেমনি খোয়াব ভবনের নানান কর্মকাণ্ডের কথাও ভুলে গেছেন। হাওয়া ভবনে নাকি সরকারের সমস্ত খরচের ১০% আর খোয়াব ভবন ছিল বিনোদন কেন্দ্র বা জলসাঘর এখানে বাইরে থেকে সুন্দরীরা আসতো তারেক এবং বন্ধু-বান্ধবদের মনোরঞ্জনের জন্য। বাজারে চায়ের দোকানে রেস্তোরায় পলিটিক্যাল আড্ডায় মুখরোচক সব আলোচনা হতো। এ জাতীয় লোক যদি কোন সরকারে বসে সে দেশে আল্লাহ পাকের গজব নাযিল হয় জানিনা এটা সত্যি কিনা তবে এটা বুঝি রাষ্ট্রনেতাদের জীবন ও চরিত্রে সততা থাকতে হয়। যেমন আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বিশ্বের ১০ জন সফল রাষ্ট্রনায়কের একজন এর তিনজন সৎ রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে দ্বিতীয় প্রথম জার্মানির এঞ্জেলা মার্কেল। খালেদা জিয়ার পুত্রের চরিত্র তো ফুলের মত পবিত্র। এরশাদ শিকদারদের চরিত্রের সাথে তুলনা করা যায়।

‘খেলা হবে’ স্লোগানটি প্রথম দেন নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান এমপি। তারপর আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। এই খেলার কথার জবাব সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছেন বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি। দেখলাম তিনি ওবায়দুল কাদেরকে হাত নেড়ে আহ্বান জানাচ্ছেন ‘খেলবেন আসেন আমার সঙ্গে খেলেন’। প্রশ্নটি উথাপন করে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি বলেন এটি কি রাজনীতি না অন্য কিছু? তারপর এই পার্লামেন্টেই ওবায়দুল কাদের বললেন হ্যাঁ খেলা হবে বিএনপি আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, খেলা হবে বিএনপির গ্রেনেড হামলার বিরুদ্ধে, খেলা হবে বিএনপির আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্যদের উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে।

যাক এবার ভিন্ন প্রসঙ্গ উথাপন করি। বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করে বিএনপি মনে করেছে এইবার তো ক্ষমতায় যাবে। অপটিমিস্টিক হওয়া ভালো কিন্তু বেশি অপটেমিস্টিক হয়ে লাফাতে গেলে গর্তে পড়ে যাবার সম্ভাবনা বেশি। কারণ বাংলাদেশের জনগণকে এত ভুলো মনে করা ঠিক নয়। বিএনপি-জামাত-এরশাদ-খালেদা প্রায় ২৭ বছর (জিয়া ৬ বছর+সাত্তার ৯ মাস+ এরশাদ ৯ বছর+ এবং খালেদা ১১ বছর প্রায় ২৭ বছর ক্ষমতায় ছিলেন)। এর মধ্যে দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকায় এরশাদের কিছু কাজ চোখে পড়ে। অথচ জিয়া সাত্তার খালেদার একটা কাজও কেউ দেখাতে পারবে না। যেমন বিএনপি মিলিটারি জিয়াকে মুক্তিযুদ্ধের চ্যাম্পিয়ন বানাতে চায় অথচ নয় মাসে জিয়ার একটি যুদ্ধের বর্ণনাও কেউ দিতে পারবে না, দেখাতে পারবেন না। খালেদা জিয়া তো বঙ্গবন্ধুকে অপমান করার জন্য ১৫ আগস্ট ভূয়া জন্মদিন বানিয়ে উদযাপন ছাড়া আর কি কোন কাজ দেখাতে পারবেন? এ প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়ে গেল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৮ নির্বাচনে দলীয় মনোয়ন দেন এর মধ্যে ২০০১-এ দেশি-বিদেশি চক্রান্তে এবং ভুয়া ভোট ব্যবহার করে বিএনপি জামাত জিতে যায়, ২০০৮ সিটি কর্পোরেশনের বিতর্কিত ভূঞার চক্রান্তে সামান্য ভোটে আমাকে হারিয়ে দেয়া হয়। সেটি ছিল দলীয় চক্রান্ত। ২০১৪ তে ১৪ দলীয় মহা জোটের প্রার্থীকে ফরিদগঞ্জের নমিনেশন দেয়া হয় নাম মানু। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সেই ভূঁইয়া, লেখাপড়া এসসি তারপর বিমান বাহিনীর সিপাই, ১৯৭৩ সালে রিপেট্রিয়েটেড হয়ে পাকিস্তান থেকে ফিরে সিটি কর্পোরেশনে যোগদান এবং তারপর কখনো প্রকৌশলী কখনো এমবিএ বর্তমানে সব বাদ দিয়ে ডক্টরেট লেখেন।

যাহোক, ২০১৯ থেকে গত চার বছরে মহামারী কোভিড ১৯ বা করোনা কিংবা রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা তাইওয়ান নিয়ে চীন আমেরিকার স্নায়ুযুদ্ধ ইত্যাদির মাধ্যমে গোটা বিশ্ব যখন টালমাটাল তখনও বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু, গভীর সমুদ্র বন্দর, পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা চট্রগ্রাম অসংখ্য ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে সক্ষম হন। ২০১৯ সালে আমার নিজ এলাকা ২৬৩, চাঁদপুর- ০৪, ফরিদগঞ্জের ১১০০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা নিয়ে যাত্রা শুরু করি আল্লাহর রহমতে আজ ফরিদগঞ্জে এক প্রান্তে গাড়িতে ওঠে গোটা এলাকা ভ্রমণ করা যাবে কোথাও নামতে হবেনা, শতবর্ষি ফরিদগঞ্জ থানায় এই প্রথম ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করি। ফরিদগঞ্জের বেইলি ব্রিজ, পাকা ব্রিজ করি তারপরও বলবো করোনা বা যুদ্ধ না হলে এই চার বছরে কোন কাজ অবশিষ্ট থাকতো না। তারপরও ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে উটতলী ব্রীজ, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ফরিদগঞ্জ ডাক বাংলোর কাজ চলছে। বিশ্ব পরিস্থিতির ধাক্কায় ডাকাতিয়া নদী ড্রেজিং, ফরিদগঞ্জ সদরে বঙ্গবন্ধু কালচারাল কমপ্লেক্স এর কাজ শুরু করতে পারিনি। এ জন্যে আমি অনুতপ্ত। মজার ব্যাপার হলো, কাজ হচ্ছে আমার সময়, আর ভূঁইয়া বলেন ‘আঁই একখান ডিউ লেটার দিছিলাম’। ঠিক একইভাবে খালেদা জিয়া বা তার দলীয় নেতারা যখন বক্তৃতা করতেন, বলতেন যত উন্নয়ন হয়েছে সব বিএনপি আমলে হয়েছে। যদি প্রশ্ন করা যায় কি কি উন্নয়ন হয়েছে কোন জবাব দিতে পারেন না। দেবেন কোথা থেকে কাজ করলেতো দেবেন বা অর্জন থাকলে তো বলবেন। যে কারণে আগেই জনসভা দেখে উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই, জনগণ যার নেত্রীত্বে রাষ্ট্র সুরক্ষিত থাকবে তাকেই গ্রহণ করবে। ব্যক্তিগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মেধাও এ ক্ষেত্রে কাজ করে। এটাই জনমনমানসিকতা। অথচ খালেদা জিয়ার নির্দেশে নাকি ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ চলবে। ১১ ডিসেম্বর সাজাপ্রাপ্ত পলাতক তারেক দেশে ফিরবে? কথা শুনে পুরনো ঢাকার ঘোড়াও নাকি হাসছে।

ঢাকা-১৫ নভেম্বর ২০২২

লেখক- উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক পথে প্রান্তরে

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ