স্টাফ রিপোর্টার \ মন্দিরের চুরির অভিযোগ এনে প্রকাশ্যে সালিশ বসিয়ে বিচার করা হবে ৬৫ বছর বয়সী সেবায়েত পরীক্ষিত দাসের। ঢাকা মহানগর উত্তরের কেন্দ্রীয় মন্দিরের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে এমন কথা শুনে মাথা নিচু করে বারবার তাদের পা জড়িয়ে ধরে মাপ চান মন্দিরটির সেবায়েত পরীক্ষিত দাস। এরপরও মন গলেনি তাদের। এমন অপমান-অপদস্থ আত্মীয়স্বজনের কাছে তিনি কীভাবে মুখ দেখাবেন! কোথায় গিয়ে ঠেকবে তার সম্মান!
সবশেষ ওই সেবায়েত আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এই ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ।
দিবাগত রাতে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মন্দিরের সভাপতি বিপ্লব বিজয়ী হালদার (৪৬), সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সাহা (৫৩) ও দপ্তর সম্পাদক বাদল সরকারের (৩৫)।
মঙ্গলবার রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, গত ১৬ আগস্ট কাফরুলের মন্দিরের ভেতরেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন সেবায়ত। পরে তার লাশ গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার কল্যাণী এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার বর্ননা দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, সেবায়েত কাফরুল কেন্দ্রীয় মন্দিরে প্রায় ১৬ বছর কেয়ারটেকার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১৫ আগস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে একটি ব্যাগ নিয়ে মন্দির থেকে বের হচ্ছিলেন তিনি। ওই ব্যাগে মন্দিরের ফল ছিল এবং সেগুলো চুরির অভিযোগ তোলেন মন্দিরের সভাপতি বিপ্লব বিজয়ী হালদার, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সাহা ও দপ্তর সম্পাদক বাদল সরকার। পরদিন সকালে প্রকাশ্যে সালিশ বসিয়ে বিচার করার হুমকি দেওয়া হয়।
মন্দিরের একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষিত দাস বের হচ্ছেন। এ সময় বিপ্লব, সুমন ও বাদল তাকে বাধা দেন। তারা হাত নাড়িয়ে কথা বলছেন পরীক্ষিত দাসের সঙ্গে। একপর্যায়ে পরীক্ষিত দাস তাদের একজনের দুই পা জাড়িয়ে ধরেন। পরে উঠে ওই ব্যক্তিকে বুকে আঁকড়ে ধরেন তিনি। ভিডিওতে স্পষ্ট, তিনি বারবার ক্ষমা চাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে অপর দু’জনেরও পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চান। পরে তারা পরীক্ষিত দাসকে রেখে চলে যান। এর পরই তিনি মন্দিরে দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ির রেলিংয়ের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
পরদিন সকালে সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে কাফরুল থানা পুলিশ। এই ঘটনায় মৃত ব্যক্তির ছেলে ভক্ত দাস বাদী হয়ে কাফরুল থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় এজহারভূক্ত তিন আসামিকেই গ্রেফতার করেছে ডিবি। এই ঘটনায় আরো কোন কারণ রয়েছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান ডিবির এই উর্ধতন কর্মকর্তা।