ডেস্ক রিপোর্ট- “বিজ্ঞান ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক শিক্ষা কারিকুলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধ করার দাবিতে” বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মসূচিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক এবং জীবনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। এই দাবি বাস্তবায়নে সকলশ্রেণীর সচেতন মানুষ যখন ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করছেন তখন প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি এই অপপ্রচার বন্ধে এবং নারীপুরুষের সমতাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ গঠনে বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার গুরুত্বকে তুলে ধরতে সরকার এবং গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, প্রণীত শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের ব্যক্তি এবং সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধগোষ্ঠী উভয়ই সমালোচনা করছে। শিক্ষাক্রমে থাকা ভুল ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে কিন্তু এদেশের অনেকে শিক্ষানীতিকেই শিকার করেনা। তিনি এসময় পাঠ্যসূচীকে ত্রুটিমুক্ত করতে শিক্ষামন্ত্রণালয় ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষানীতি নিয়েযারা সামাজিক অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং পাঠ্যক্রম প্রণয়ণের সাথে জড়িতদের নিয়ে যারা বিরুপ মন্তব্য করছে তাদের জন্য এই আইনের আওতায় কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আরো বলেন জাতীয় বিপর্যয় এলে তা প্রতিহত করতে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবেলা করতে কোনো দ্বিধা করবেনা। সকল মানুষের শিক্ষার অধিকারকে বাস্তবায়ন করতে আমরা এক হয়ে কাজ করবো বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সংগঠনের সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক শিক্ষা কারিকুলাম কে দিনে দিনে আরো পরিমার্জন করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও দায়িত্ব নিতে হবে। এলক্ষ্যে তিনি বলেন প্রাইমারী স্তর থেকেই হাজার বছরের বাঙালি সং¯কৃতি ও কৃষ্টি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতে হবে; প্রতিসপ্তাহে শিক্ষার্থীদের ড্রয়িং ক্লাস, শরীর চর্চা এবং লাইব্রেরি ওয়ার্ক করাতে হবে।
আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক খুরশিদা ইমাম; ঢাকা মহানগরের সহ-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু ধর; আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি; তারা বলেন পাঠ্যুসূচীতে থাকা কনটেন্টগুলো নানাভাবে বিকৃত করে বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রণীত শিক্ষা কারিকুলামকে রক্ষার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের আহ্বান জানান তারা।
মানববন্ধন কর্মসূচীতে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির প্রতিনিধিদের মধ্যে গণসাক্ষরতা অভিযানের শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, আইন ও শালিস কেন্দ্রের রাখী জামান, ওয়াইডব্লিউসিএ-এর শিক্ষার্থী পূজা কর এবং আইইডি এর তারিক হাসান সংহতি প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষানীতি সহ সমাজ ও রাষ্ট্রকে অসাম্প্রদায়িক করে গড়ে তুলতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। কারিকুলাম নিয়ে অপপ্রচার বন্ধে সকলকে সোচ্চার হতে হবে, এনসিটিবি কে সমৃদ্ধ করতে সম্মিলিতভাবে আরো কাজ করতে হবে।
বক্তব্য শেষে সংগঠনের পক্ষে প্রস্তাব পাঠ করেন ঢাকা মহানগর কমিটির আন্দোলন সম্পাদক জুয়েলা জেবুননেসা খান। মানববন্ধন কর্মসূচীতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির প্রতিনিধিবৃন্দ, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান, ও বিশিষ্ট সংস্কৃতি জন রতন সিদ্দিকী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ সহ প্রায় শতাধিক জন উপস্থিত ছিলেন। পরিচালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এডভোকেসি এন্ড লবি পরিচালক জনা গোস্বামী