Search
Close this search box.

বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে গুলশান ভবনের আগুনের সূত্রপাত্র

স্টাফ রিপোর্টার- রাজধানীর গুলশান-২ এ বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। এরই মধ্যে গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। এদিকে, ভবনটি পুলিশের নিরাপত্তায় মালিকদের জিম্মায় বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল আহাদ।

সোমবার দুপুর পৌনে ১২টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল আহাদ বলেন, ভবনের নকশা, অগ্নিকাণ্ডের কারণসহ অন্যান্য কোনও ত্রুটি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখবে ফায়ার সার্ভিস ও রাজউক। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আগুনের সূত্রপাত ঘটেছিল বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে।

তিনি বলেন, গুলশানে আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দু’জন মারা গেছেন। রবিবার আনোয়ার নামের একজন এবং আজ  সোমবার ভোর ৪টার দিকে শুনেছি রাজু নামে আরেকজন মারা গেছেন। এ পর্যন্ত আমরা দু’জনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি। আরও দু’জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে এবং তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আরও কয়েকজন আহত হয়েছে এবং তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে আমরা জেনেছি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও কোনও মামলা হয়নি।

তিনি বলেন, রবিবার আমরা এসেছিলাম এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করেছি। রাস্তাঘাট-পানিসহ অন্যান্য বিষয়গুলো আমরা ব্যবস্থা করতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা বারবার বলেছি এবং চেষ্টা করেছি যে, আপনারা নিচে লাফ দিবেন না। তারা যদি লাফ না দিতেন তাহলে নিহত হতেন না। যারা লাফ না দিয়ে কষ্ট সহ্য করে ছিল, তাদেরকে উদ্ধার করা আমাদের সম্ভব হয়েছে।

ভবনটির বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ভিতরে প্রবেশ করছি না। তবে ফ্ল্যাটের মালিক যারা রয়েছে তারা ভবনের নিরাপত্তা কর্মীদের ডেকে নিয়ে প্রবেশ করছেন। ভিতরে কি অবস্থা তা ফ্লাট মালিকরাই বলতে পারবেন। ভবনটি এখন মালিকদের জিম্মায় রয়েছে। আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি দেখছি।

এর আগে, রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশান ২-এর ওই ভবনের সাততলায় আগুন লাগে। প্রায় চার ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট।

এ ঘটনায় ভবন থেকে শিশু ও নারীসহ ২৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত দল। পরে রাতেই ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়।

এদিকে রাজধানীর গুলশান-২ এলাকায় বহুতল ভবনে আগুনের ঘটনায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। আগুন লাগার সময় তিনি ১২তলা থেকে লাফ দিয়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার রাত তিনটায় তিনি মারা যান। এ নিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুজন মারা গেলো।

নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ রাজু (৩৫)। তাঁর বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জে। তিনি ভবনের ১২তলায় এক কর্মকর্তার বাসায় বাবুর্চির কাজ করতেন।

১২ তলা থেকে লাফ দেওয়ার পর গতকাল রাত ১০টার দিকে তাঁকে ঘটনাস্থলের কাছেই একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তিনি মারা যান। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মোস্তাকিম বাদশা বলেছেন, পরিবার ভোর পৌনে চারটার দিকে মোহাম্মদ রাজুর লাশ নিয়ে গেছে।

নিহতের ভাই সজীব বলেন, তাঁরা লাশ গ্রামে নিয়ে গেছেন। দাফনের প্রস্তুতি চলছে। মোহাম্মদ রাজু ঢাকায় থাকতেন। তাঁর পরিবার গ্রামে থাকতেন। ভবনের ১২ তলায় তিনি দুই বছর ধরে কাজ করতেন। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে।

অগ্নিনির্বাপকবাহিনী বলেন, সকাল থেকে বহুতল এই ভবনে কাজ শুরু করেছি এই ভবনে ২৬ ফ্ল্যাটে ২৩ পরিবার বসবাস করতেন। সেখানে খোঁজ করে আর কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। গুলশান-২ এর ১০৪ নং সড়কের বাসা- ২/এ সকালে সামনে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেছে। সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ সদস্য।

রবিবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে ওই ভবনে আগুন লাগে। অগ্নিনির্বাপকবাহিনীর ১৯টি ইউনিটের প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে রবিবার রাতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।তাঁর নাম আনোয়ার হোসেন (৩০)। দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করেন তাঁর ছোট ভাই জুলহাস হোসেন।তিনি ওই ভবনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় বাবুর্চির কাজ করতেন।হাসপাতালে আহত কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে কাজ শুরু করেছে। ভবন থেকে বের হওয়া একাধিক ফায়ার সার্ভিস কর্মী বলেন, আগুন নিভলেও ভবনটির সপ্তম তলায় ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। সেখানে নতুন করে পানি দেওয়া হয়েছে। আগুনের সম্ভাব্য কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা অঞ্চল-৩ এর উপসহকারী পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, সপ্তম তলার সিঁড়ির পাশেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছিল। বের হওয়াতে ঝুঁকি থাকার কারণে অনেকেই আটকা পড়েন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে একটু পর আনুষ্ঠানিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে জানানো হবে। ভবনের নিরাপত্তাকর্মী রায়হান উদ্দিন, ভবনের বিদ্যুৎ গ্যাস সংযোগ এখনো দেওয়া হয়নি।

আগুনের ঘটনায় ভবনটি থেকে মোট ২৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী ১৭ জন।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ