স্টাফ রিপোর্টার- চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরা এলাকায় ইউনিটেক্স স্পিনিং মিল লিমিটেডের তুলার গুদামে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় লাগা আগুন ২৪ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তবে আগু সম্পূর্ণ নেভানো সম্ভব হয়নি। এখনও সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিম কাজ করছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিরা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট, সেনাবাহিনীর চারটি, নৌবাহিনীর চারটি, বিমানবাহিনীর দুইটি, বিজিবির চারটি ফায়ার ফাইটিং ইউনিটসহ ২৩ ইউনিটকে কাজ করতে হয়েছে। বর্তমানে আগুন নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এখন সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিম কাজ করছে।
ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, ‘এমনিতে তুলা দাহ্য পদার্থ, তুলায় আগুন লাগলে মুহূর্তে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার ওপর পানির সংকট, পানির সংকুলান করতে তারা দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের অন্তত আধা কিলোমিটার দূরে থাকা দুটি পুকুর থেকে পানি আনছেন। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এখন আগুনের তীব্রতা আগের থেকে অনেক কমেছে। তুলাগুলো গাইড বাধা তাই আগুন নিভতে সময় লাগছে।
কুমিরা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুন বর্তমানে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন গাইডগুলো সরিয়ে ভিতরে পানি দেওয়া হচ্ছে।
সুলতান মাহমুদ জানান, আমরা সফলভাবে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছি। সীতাকুণ্ডের কুমিরায় ইউনিটেক্স স্পিনিং মিলে আগুন লাগার ঘটনায় রোববার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ ঘণ্টা ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট, সেনাবাহিনীর ৪টি, নৌ বাহিনীর ৪টি, বিমান বাহিনীর ২টি, বিজিবির ৪টি ইউনিটসহ মোট ২৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে।
সকালে সরেজমিন দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া তুলা থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকে। ফায়ার সার্ভিসে সদস্যরা ধোঁয়া উঠতে থাকা তুলার ওপর পানি ছিটায়। যেদিকে সামান্য আগুন আছে সেখানেও পানি ছিটানো হয়। এ আগুনে পুরো গুদাম একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।ভেঙে পড়ে গুদামের অবকাঠামো।এমনকি আগুন নেভানো সহজ করার জন্য ভাঙা হয় গোডাউনের ভবনের দেয়াল।গুদাম জুড়ে পুড়ে যাওয়া তুলা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
কুমিরা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোরশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সিপি কারখানা বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয় এসএল গ্রুপের মালিক লোকমান হোসেন সেটিকে কিনে নেয়। কিন্তু তিনি ব্যবসা করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সসহ সরকারি কোনো অনুমোদন নেননি। পরে লোকমান হোসেন গোডাউনটিকে ইউনিটেক্স স্পিনিং মিলস লিমিটেডের কাছে ভাড়া দেয়।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ঘটনাস্থলের আশেপাশের পানির উৎস শেষ হয়ে যাওয়ায় আগুন নেভাতে বিপাকে পড়েন। পরে কয়েক কিলোমিটার দূরের পুকুর ও জলাশয় থেকে পানি আনতে হয়েছে। তুলার আগুন খুব সহজে নেভে না। এ কারণে সময় বেশি লেগেছে।
বিমান বাহিনীর ফায়ার ইউনিটের কমান্ডার নাদেরুজ্জামান বলেন, তারা এসে ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নির্বাপণে সহযোগিতা করেছে। এখন আর দৃশ্যমান কোনো আগুন নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাহাদাত হোসেন মিথুন বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় সকাল ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরা ফিরে যায়। ঘটনা তদন্তে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বদিউল আলমকে প্রধান করে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের আগামী পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, গুদামটিতে ঝালাইয়ের কাজ করার সময় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এরপর মুহূর্তেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তুলার গোডাউনে প্রায় ২ হাজার ৭০০ টন আমদানি করা তুলা ছিল।
এর আগে গত ৪ মার্চ বিকালে সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে বিস্ফোরণে ৭ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়। গত বছরের জুন মাসে বিএম কনটেইনার ডিপোতে রাসায়নিকের কনটেইনার বিস্ফোরণে ৫০ জন নিহত ও ২ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছিল।