বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, অফশোরে উইন্ড পাওয়ার (সমুদ্রের বাতাসের শক্তি থেকে নেওয়া শক্তি) করার জন্য ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ডেনমার্কের একটি কোম্পানি। অফশোরে গ্যাসের জন্য মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভে শেষ পর্যায়ে। গভীর সমুদ্রে কাজ করার জন্য একটা অবস্থানে এসেছি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক কোম্পানি সমুদ্রে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এক্সন মবিল লিখিতভাবে আবেদন করেছে। আমরা সেটা যাচাই বাছাই করছি। আমাদের সার্ভে কমপ্লিট হলে দরপত্র আহ্বান করবো। আশা করছি সমুদ্র থেকে আগামী ৭-৮ বছরের মধ্যে আমরা গ্যাস পাবো।
শনিবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি বা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার-বঙ্গবন্ধুর দর্শন শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নসরুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর তিন বছরের মাথায় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে মূল খুঁটি সম্পাদন করে গেছেন। বিদেশি কোম্পানি দ্বারা আবিষ্কৃত ৫টি গ্যাসফিল্ড ১২ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছিলেন। সে ৫টি গ্যাসফিল্ড এখনো দেশকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। এই দূরদৃষ্টির কারণেই তিনি জাতির পিতা।
১৯৯৬ সালে বিদ্যুৎ খাতকে প্রাইভেট সেক্টরে নিয়ে আসার আইন আওয়ামী সরকার করেছিল জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তার জন্য অনেক বাধাবিপত্তি আসে, বলা হয়েছিল যে ব্যবসায়ীরা এ খাতে একচেটিয়া ব্যবসা করবে। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেগুলোকে পাত্তা না দিয়ে সে আইন পাস করেন। এসবই জ্বালানি নিরাপত্তা।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে জ্বালানি খাতের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়। যেটা এখনো বর্তমান রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির তো পরিবর্তন হয়। তাই ৪ বছর পর পর তার রিভিউ করতে হয়।
বিদ্যুতের চাহিদার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চর অঞ্চলেও বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। যেটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, সবার কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে হবে। যদিও এসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সহজ নয়। আমাদের লক্ষ্য, সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা।
নসরুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশে গ্যাসের যে রিজার্ভ, তাতে হয়তো আর ৮ বছর চলবে। এরপর কী হবে? দেশে এখন অনেক গ্যাসকূপ আবিষ্কার হয়েছে, ছোট করে হলেও প্রতিবছর ১০০ টি কূপ খনন করলেও ২ বিলিয়ন ডলার লাগবে। সেই আর্থিক ব্যবস্থাপনাও চিন্তা করতে হবে। যেমন বাপেক্স নিজের এরিয়ায় কাজ করে। দুই বছর ড্রিলিং করে ৬৫০ এমএমসিএফ গ্যাস পাওয়া যাবে।
সামনে নতুন গ্যাস পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ভোলার গ্যাস ঢাকায় নিয়ে আসার চিন্তা চলছে। তবে খুলনা পর্যন্ত সে গ্যাস আনতে ৯ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আমাদের আরেকটা সংযোজন হচ্ছে সিঙ্গেল মুরিং পাইপ লাইন। পানির নিচ দিয়ে ২৬০ কিলোমিটার লাইন তৈরি করা হয়েছে। আগে মাদার ভেসেল থেকে তেল খালাস করতে ১২ দিন লাগতো। এখন লাগবে ৪৮ ঘণ্টা। যা সরাসরি পতেঙ্গায় চলে যাবে। এছাড়া মহেশখালীতেও ডিপো করা হয়েছে যদি পতেঙ্গায় কোনো বিপর্যয় হয়। এটাও জ্বালানি নিরাপত্তার অংশ।
তিনি বলেন, আরেকটি বিষয়, পতেঙ্গা থেকে ঢাকায় সরাসরি তেল সরবরাহের লক্ষ্যে পাইপলাইন তৈরি করা হবে। ঢাকায় প্রতিদিন ২৫০ তেলবাহী ট্রাক ঢোকে, এখান থেকে প্রচুর পরিমাণ তেল নষ্ট হয়। আগামী বছর থেকে তা আর হবে না।
আগামী ২ বছর জ্বালানিখাতের একটা ক্রিটিক্যাল টাইম। এখন দরকার দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করতে হবে। আমরা গ্যাসের সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসবো। ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ আপনারা পরিকল্পিত এলাকায় শিল্পায়ন করুন। এতে করে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে।
এফবিসিআইয়ের সভাপতি জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম, এজাজ হোসেইন, বাপেক্সের পরিচালক শোয়েব প্রমুখ।