স্টাফ রির্পোটার- নেত্রকোনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও জাতীয় পার্টির নেত্রী আসমা আশরাফের ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিবৃতিতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকেই আসমা আশরাফের ওপর বর্বর হামলা চালাচ্ছে সরকার সমর্থকরা। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নির্বাচনের পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। অবাধ সন্ত্রাসে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।
হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান। এ হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুও।
এদিকে জি এম কাদের এমপি এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশটা কিছুটা হলেও দোজখের সমতুল্য হয়ে গেছে। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছে এ দেশ দোজখের মতো অবস্থা হয়ে গেছে। মানুষ খেতে পারে না। চলতে পারে না। প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। নিত্যপণ্যের জিনিসপত্রের টিসিবির পণ্য নিতে দুই আড়াই মাইল লাইন হচ্ছে। দুই তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও মানুষ টিসিবির পণ্য পাচ্ছে না। কী সিস্টেম সরকার চালু করেছে আমি জানি না। দেশের সাধারণ মানুষ এ সিস্টেমে উপকৃত হচ্ছে না। তাই মানুষ এদেশে থাকা আর দোজখে থাকার মধ্যে কোনও পার্থক্য দেখছেন না।
জি এম কাদের আরও বলেন, দেশে এমন একটি সংস্কৃতি সৃষ্টি হচ্ছে যেখানে সৎ, নিষ্ঠাবান ও যারা মেধাবী সেসব মানুষ বিভিন্নভাবে ঘৃণিত হচ্ছে, লাঞ্ছিত হচ্ছে। তারা সমাজে টিকে থাকতে পারছেন না। যারা বিভিন্নভাবে দুর্নীতি করে, অনিয়ম করে মেধাশূন্য, যারা কোনও দেশপ্রেমিক নয়, সেরকম মানুষের উত্থান ঘটছে। তারা সব জায়গায় সম্মানিত হচ্ছে। তারা মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ কারণে দেশে সুশাসনের অভাব হচ্ছে। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করা হচ্ছে না। বরং দুষ্টের পালন শিষ্টের দমন করা হচ্ছে। আইন সবার জন্য সমান জিনিসটি এখন কার্যকর নয়। কিছু কিছু মানুষ এখন আইনের ঊর্ধ্বে। দলীয়করণের কারণে এক শ্রেণির মানুষ আইনের ঊর্ধ্বে অবস্থান করছে। বিভিন্নভাবে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর নিপীড়ন, অত্যচার চালানো হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, সরকারের বিরোধিতা করা প্রত্যেকটি নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্ব। দেশের মালিক সাধারণ জনগণ। সরকারকে নির্বাচিত করার অধিকার যেমন জনগণের আছে, তেমনি সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার অধিকারও আছে। সরকারকে পরিবর্তন করারও অধিকার থাকতে হবে। যারা সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে এই সমালোচনাকে সুচতুরভাবে সরকার-রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। মানুষকে বিভিন্নভাবে নাজেহাল করা হচ্ছে। মানুষকে কথা বলার অধিকার দিতে হবে। দেশের মালিক হিসেবে দেশের মানুষের যে কোনও পরামর্শ দেওয়ার অধিকার আছে।
তিনি বলেন, দেশে জবাবদিহিতার অভাব আছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ছে। ধনী আরও ধনী হচ্ছে। গরিব আরও গরিব হচ্ছে। ধনীদের সম্পদ বাড়ছে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।
জিএম কাদের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, দেশের ৫ শতাংশ মানুষ শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ সম্পদের মালিক। আর ৫ শতাংশ মানুষ ২৮ শতাংশ সম্পদের মালিক। এই বৈষম্যের জন্য বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়নি। জবাবদিহিতাবিহীন একটি সরকার চলছে। জবাবদিহিতা না থাকার কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। দুর্নীতির কোনও শেষ নেই। যার যা দায়িত্ব তা তারা পালন করছে না।
তিনি বলেন, যারা দেশ ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তারা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। দুই শ্রেণির মানুষ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এক শ্রেণির মানুষ হচ্ছে যারা সৎ, দেশপ্রেমিক ও মেধাবী। আরেক শ্রেণির মানুষ হচ্ছে বেকার। এদেশে বাঁচতে পারছে না তারা। বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে নাজেহাল করা হয়। কেউ দেখার নেই।