স্টাফ রিপোর্টার – আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘লন্ডন ও দুবাই থেকে ফখরুল সাহেবের কাছে টাকা আসে। সেই টাকার বস্তা নিয়ে তিনি সমাবেশ করতে যান। রবিবার বিকালে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম নগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এই জনসভার আয়োজন করেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমির খসরু সাহেব, নোমান সাহেব, মীর নাসির সাহেব শুনুন, ফখরুল না হয় দেখছেন না, ফখরুলকে বলেছি কান পেতে শুনুন মহাসাগরের গর্জন। আপনি শুনতে পাচ্ছেন? আপনি শুনতে না পেলে আমির খসরু সাহেব, নোমান সাহেব ও মীর নাসির সাহেব আজ দেখুন চট্টগ্রামের কী অবস্থা। দেখেছেন? দেখে যান ফখরুল সাহেব, আমির খসরু সাহেব। এখানে দাঁড়িয়ে বড় বড় কথা বলেছিলেন। কত লোক হয়েছে।
বিএনপির আটটি সমাবেশের সমান লোক হয়েছে পলোগ্রাউন্ডে। শেখ হাসিনার জনসভায় এখানে যত লোক হয়েছে তা বিএনপির জনসভার আট গুণ বেশি। গোটা চট্টগ্রাম আজকে মিছিলের নগরী। মহাসমাবেশ নয়, মহাসমুদ্র। কর্ণফূলীর সব ঢেউ আজ পলোগ্রাউন্ডে, বঙ্গেপসাগরের সব ঢেউ আজ চট্টগ্রাম শহরে। দেখে যান জনপ্রিয়তা কাকে বলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের গত ৪৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে সৎ রাজনীতিক, জনপ্রিয় নেতা, দক্ষ প্রশাসক, সফল কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। যিনি মৃত্যুর মিছিলের ওপর দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গান, যিনি ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সৃষ্টির পতাকা ওড়ান, তিনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা। শেখ হাসিনা সাফ্যল্যের সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করেছেন। তিনি বাংলাদেশের আজকের ক্রাইসিসের ট্রাবল শুটার।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখন যুদ্ধ আর নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা কিছুটা বিপদে আছি। এই বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন শেখ হাসিনা। তিনি আজ সারারাত ঘুমান না, জেগে থাকেন। ফখরুল সাহেব বলেন, সরকারের ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারের ঘুম নষ্ট হয়নি, ঘুম নষ্ট শেখ হাসিনার। দেশের মানুষের জন্য, মানুষকে বাঁচানোর জন্য, গরিব মানুষকে বাঁচানোর জন্য, দুঃখী মানুষকে বাঁচানোর জন্য শেখ হাসিনাকে রাত জাগতে হয়।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে, উন্নয়নকে বাঁচাতে হলে, অর্জনকে বাঁচাতে হলে ক্ষমতার মঞ্চে শেখ হাসিনার কোনও বিকল্প নেই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খেলা হবে। ডিসেম্বরে খেলা হবে। ছাত্রলীগের সম্মেলন ৬ ডিসেম্বর নিয়ে এসেছেন নেত্রী। পরিবহনকে বলে দিয়েছেন নো ধর্মঘট। তারা এরপরও এক সপ্তাহ আগে থেকে কাঁথা-বালিশ-কম্বল নিয়ে চলে আসছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কয়েল জ্বালিয়ে তাঁবু টানিয়ে শুয়ে আছেন।’ চট্টগ্রাম নগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত জনসভায় সভাপতিত্ব করছেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। জনসভা সঞ্চালনা করছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। প্রধান হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে বিএনপির সংবিধান সংশোধনের দাবিকে দিবা স্বপ্ন বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূত একটা মাথায় আছে, নামিয়ে ফেলুন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে, বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাঁচাতে হলে, অর্জনকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে। রাজপথ, জনপদ, শহর, গ্রাম, পাড়ামহল্লা সবখানেই সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুত থাকতে হবে। হামলা হলে পাল্টা হামলা হবে কি-না সময়ই বলে দেবে। তারেক রহমান শুক্রবারও ঢাকার এক ক্যাডারের সঙ্গে কনভারসেশন করেছেন। লন্ডন থেকে বলেছেন, তোমরা রাস্তা ছাড়বো না, শেখ হাসিনা পালানোর পথ খুঁজছে। তার এমপি-মন্ত্রীরাও পালানোর পথ খুঁজছে।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, খেলা হবে। অপেক্ষা করুন, নির্বাচনে খেলা হবে। ডিসেম্বরে খেলা হবে। বিএনপির আগুন আর লাঠির বিরুদ্ধে খেলা হবে। আগুন আর লাঠি নিয়ে এলে খেলা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে, ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে খেলা হবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কিন্তু উনারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন না। ফখরুলের মুখে মধু আর অন্তরে বিষ। এরই নাম ফখরুল। ফখরুল সাহেব, অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আপনাদের মিটিংয়ে কেউ বাধা দেবে না। আমরা রাজশাহীতেও বলে দিয়েছি সেখানে যেন পরিবহন ধর্মঘট না করে। ঢাকায়ও পরিবহন ধর্মঘট হবে না নেত্রী বলে দিয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল (মির্জা ফখরুল) এখন নাটক শুরু করছেন। নাটক কী? কোথাও সমাবেশ দিলে সাতদিন আগে থেকে প্রচার করেন, মিথ্যাচার করেন বাধা দেওয়া হচ্ছে। সরকার বাধা দিচ্ছে। আর কাঁথা-বালিশ-হাঁড়ি-পাতিল, চালের বস্তা, সঙ্গে টাকার বস্তা আর মশার কয়েল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসে। কুমিল্লায় তো কেউ বাধা দেয়নি।
এ সময় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার পরও যদি বাড়াবাড়ি করেন, লাফালাফি করেন, আগুন নিয়ে নামেন, লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে মাঠে নামেন তাহলে খবর আছে। খেলা হবে দারুণ। পাল্টাপাল্টি আমরা করবো না। আমরা শান্তি চাই। আমরা ক্ষমতায় আছি। ক্ষমতায় থেকে আমরা অশান্তি কেন করবো? মানুষকে কেন আতঙ্কে রাখবো? আমরা তো মানুষকে শান্তিতে রাখতে চাই। আমরা ক্ষমতায় আছি। অশান্তি হলে তো সেখানে মাথা ঘামাতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুদ্ধের (রাশিয়া-ইউক্রেন) কারণে নিষেধাজ্ঞার জন্য আমরা একটু বিপদে আছি। মানুষ কষ্টে আছে। অভাবি মানুষ, সাধারণ মানুষ, স্বল্প আয়ের মানুষ কষ্টে আছে। এটা শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করেন। চেষ্টা করছেন তিনি। এখনো বাংলাদেশে সোমালিয়া-সুদানের মতো দুর্ভিক্ষ হয়নি। এখনো আমরা অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছি। শেখ হাসিনা ভালো থাকলে বাংলাদেশ ভালো থাকবে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘তারেক (তারেক রহমান) লন্ডনে বসে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাই তারেকের হাওয়া ভবনের অর্থপাচারের বিরুদ্ধে খেলা হবে। সারাদেশ থেকে কত টাকা পাচার করা হয়েছে শেখ হাসিনা তা খতিয়ে দেখছেন। সব টাকা উদ্ধার করা হবে। টাকা পাচারকারী তারেক রহমানসহ যারাই আছে প্রত্যেকের টাকা উদ্ধার করা হবে।
প্রসঙ্গত, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না জানিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি