স্টাফ রিপোর্টার:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, পৃথিবীতে চিরস্থায়ী একটি শান্তি স্থাপন করতে মানুষে মানুষে হিংসা বিদ্বেষ কমাতে হবে- জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য বিশ্বের ১৯৩টি দেশ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তার বাবার মতোই জাতিসংঘের শান্তির জন্য একটি ভিশন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমরা মনে করি যেখানেই যত অশান্তি তার মূল কারণ হচ্ছে হিংসা বিদ্বেষ। আর শান্তিরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের প্রস্তাব দিয়েছেন যে মানুষে মানুষে হিংসা বিদ্বেষ কমাতে হবে। হিংসা বিদ্বেষ যদি কমানো যায় তাহলে পৃথিবীতে আমরা চিরস্থায়ী একটি শান্তি স্থাপন করতে পারব। আর তার এই বক্তব্য বিশ্বের ১৯৩টি দেশ গ্রহণ করেছে।
বুধবার (০২ আগস্ট) রাজধানীর বাসাবোর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্ম ও বৌদ্ধ সার্কিট উন্নয়ন’ বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনার যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ ও ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার। এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি বুদ্ধপ্রিয় মাহাথেরিও। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় বিশ্বাস করতেন শান্তি দেশের উন্নয়নের জন্য খুবই প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর এ আদর্শ অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তির জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছেন। এমনকি জাতিসংঘের শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ রোল মেডেল। শান্তি রক্ষায় বর্তমানে বাংলাদেশে এক নম্বর অবস্থানে আছে।
তিনি বলেন, হিংসা বিদ্বেষ দূর করার এ মানসিকতা তৈরি করা শুধুমাত্র সরকার পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য পরিবার পাশাপাশি সমাজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও ভূমিকা থাকতে হবে। এ হিংসা বিদ্বেষ দূর করতে পারলে ধর্মের এবং বর্ণের যে মারামারি বা হিংসা তা দূর হয়ে যাবে। আমাদের সামাজিক জীবনে এখনো অনেক সংকীর্ণতা রয়ে গেছে। এসব কিছুকে আমাদের দূর করতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যেটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা। যেখানে একটি অসম্প্রদায়িক অর্থনৈতিক গড়ে উঠবে। যেখানে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষাসেবা এবং স্বাস্থ্য সেবা সবার জন্য নিশ্চিত হবে। আর আমরা সেই পথেই কাজ করে যাচ্ছি। যার মাধ্যমে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এবং শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশি গড়ে তুলতে পারি।
ধর্মনিরপেক্ষতা বাংলাদেশের সাংবিধানের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, যার ফলে দেশের সকল ধর্ম বর্ণ মানুষ একসঙ্গে মিলেমিশে থাকায় রাষ্ট্রের সঙ্গে মানবিক একটা সম্পর্ক গঠিত হয়। আর প্রধানমন্ত্রী ধর্মনিরপেক্ষতাকে সবসময় জোর দিয়েছেন। তিনি সর্বদাই বলেন ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আর এর মাধ্যমেই সব ধর্মের মানুষ দেশে শান্তিতে বসবাস করছে। আর তাদের ধর্ম বা কালচার তারা প্র্যাকটিস করছে। বাংলাদেশ সরকার সব ধর্মকে সমানভাবে ও মর্যাদায় দেখে এবং কোনো ধর্মের প্রতি বৈষম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রাখে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের প্রায় ৫২০ মিলিয়ন বিভিন্ন ভাষাভাষি লোক বুদ্ধ ধর্ম চর্চা করে। যা পুরো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার সাত ভাগ। বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি বুদ্ধ ধর্ম বিশ্বাসীরা বসবাস করে। বাংলাদেশের বুদ্ধ ধর্ম বিশ্বাসীরা খুবই শান্তিপ্রিয় মানুষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও তাদের সংস্কৃতি বাংলাদেশকে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। আমি মনেকরি বুদ্ধি সার্কিট ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ এবং ভারতের বুদ্ধদের মাঝে আরও ভালো সম্পর্ক স্থাপন করবে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।