Search
Close this search box.

৬ এলাকায় বিএনপির পাঠানো চিঠি নিয়ে বিভ্রান্তি

স্টাফ রিপোর্টার: যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর ছয় নেতাকে এলাকায় জনসংযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে বিএনপির দেওয়া চিঠি নিয়ে নিজ দল ও শরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এই চিঠি কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতার ইঙ্গিত, নাকি নির্বাচন সামনে রেখে এসব নেতাকে কাছে রাখার কৌশল, তা স্পষ্ট নয়।

গত ২২ অক্টোবর সমমনা শরিক জোটের ছয় নেতাকে নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগে সহযোগিতা করার জন্য ছয়টি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ‘অতীব জরুরি’ নির্দেশনা–সংবলিত চিঠি দেয় বিএনপি।

এই ছয় নেতা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন উল্লেখ করে চিঠিতে তাদের নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগসহ সাংগঠনিক কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

একই সঙ্গে এই নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকার থানা, উপজেলা বা পৌরসভায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে বলা হয়। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে এই চিঠি দেয়া হয়।

ওই ছয় নেতা হলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা।

উল্লেখ্য, আ স ম রব লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি–কমলনগর), মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-৪ (শিবগঞ্জ), জোনায়েদ সাকি (ঢাকা-১২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), নুরুল হক পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা), রাশেদ খান ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুণ্ডু), এহসানুল হুদা কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে নির্বাচন করতে চান।

বিএনপির এই চিঠি নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ওই সব জায়গায় নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে আগ্রহী নেতারা প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও ভেতরে-ভেতরে বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না।

এই চিঠি নিয়ে দলের ভেতরে–বাইরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে সব জেলায় আরেকটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে বিগত আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে যেসব সমমনা রাজনৈতিক দল সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছে, সেসব দলের শীর্ষ নেতারা নিজ আসনে যাতে নির্বিঘ্নে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন, সে জন্য সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এ নির্দেশনা নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

অবশ্য মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। বুধবার রাতে তিনি বলেছেন, ‘আমি কোনো চিঠি পাইনি। বিএনপি থেকেও আমাকে কিছু বলা হয়নি।’

বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিক একাধিক দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করতে গিয়ে সমমনা দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকে বিএনপির সেখানকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের বাধার মুখে পড়ছিলেন। কেউ কেউ এ বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। এ অবস্থায় এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সমমনা দলের শীর্ষ নেতাদের নির্বিঘ্নে জনসংযোগের সুযোগ করে দিতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতিতে মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য ধরে রাখার কৌশল থেকে এই চিঠি দেয়া হতে পারে।

গণ অধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, মিত্র দলগুলোর নেতারা যাতে নির্বিঘ্নে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারেন, সে জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ওই চিঠি দেয়। কিন্তু এরপরও তিনি তাঁর এলাকা পটুয়াখালী-৩ আসনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে কোথাও কোথাও স্থানীয় বিএনপির মাঠপর্যায় থেকে বাধা পাচ্ছেন।

পটুয়াখালী-৩ আসনে সক্রিয় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. হাসান মামুন। তিনি বলেন, এই চিঠির সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। নুরুল হক বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচিতে গেলে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক তাকে বাধা দেয়। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে উলানিয়ায় নুরুল হকের ওপর হামলা হয়েছিল। আবার যাতে কেউ এ রকম ঘটনা না ঘটাতে পারে, সে লক্ষ্যেই মূলত বিএনপির সহযোগিতা করার নির্দেশ। এটা অন্য কিছুই নয়।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি দুটি জোটের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করে। একটি ছিল জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট, আরেকটি ২০-দলীয় জোট। দুই জোটের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের শরিক দল ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন গণফোরামকে সাতটি, নাগরিক ঐক্যকে পাঁচটি, আ স ম রবের জেএসডিকে পাঁচটি, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে দুটি আসন দেওয়া হয়। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীকে ধানের শীষ প্রতীকে ২৫টি আসন ছাড় দেওয়া হয়।

বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতারা বলছেন, এই চিঠিতে আসন সমঝোতার বিষয় থাকলে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ ও মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির মহাসচিব শহীদউদ্দিন মাহমুদ, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরীসহ অনেক আসনে চিঠি দেওয়া হতো। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যে কয়টি এলাকায় জনসংযোগে সমস্যা হচ্ছিল, কেবল সেসব জেলায় প্রাথমিকভাবে ছয়টি চিঠি দেওয়া হয়। পরে আরো কয়েক জেলায় চিঠি দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু চিঠি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে পরে ৬৪ জেলাতেই চিঠি দেওয়া হয়।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার রাতে বলেন, ‘প্রথম চিঠি দেয়ার উদ্দেশ্য ছিল, কোনো কোনো জায়গায় সমমনা দলের শীর্ষ নেতাদের এলাকায় জনসংযোগে ঝামেলা বা বিশৃঙ্খলা হচ্ছিল, সেটি যাতে না হয়। কিন্তু, এই চিঠি বিভ্রান্তি দেখা দিলে আমরা সব জেলায় আলাদা চিঠি দিয়ে সমমনা দলের শীর্ষ নেতাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহযোগিতা করার নির্দেশনা দিয়েছি।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

সর্বশেষঃ