আর দাদাগিরি চলবে না: ভারতকে ফখরুল

বন্ধুত্ব করতে চাইলে মাস্তানি বন্ধ করেন, ভারতকে মির্জা ফখরুল‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইলে ভারতকে ‘বড় দাদাসুলভ ও মাস্তানির আচরণ’ বন্ধ করতে বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, ভারতকে পরিষ্কার করে বলতে চাই—আগেও বলেছি, এখনো বলছি।

বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান, আগে তিস্তার পানি দেন। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করেন। আমাদের সঙ্গে বড় দাদাসুলভ আর মাস্তানির আচরণ বন্ধ করেন। আমরা আমাদের পায়ের ওপরে দাঁড়াতে চাই। আমরা আমাদের হিস্যা বুঝে নিতে চাই। আমরা অবশ্যই ভারতকে একটা বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই, সে বন্ধুত্ব হবে সম্মানের সঙ্গে, আমার যে পাওনা আছে সে পাওনা বুঝে দেওয়ার সঙ্গে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেলসেতু এলাকায় ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল এসব কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, শুধু তিস্তা নয়; ৫৪টি নদী আছে, যেগুলো ভারত থেকে আমাদের দেশে আসে। সব নদীর উজানে তারা বাঁধ দিয়েছে। বাঁধ দিয়ে পানি তুলে নিয়ে যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আর আমাদের দেশের মানুষ এখানে ধান ফলাতে পারে না, ফসল ফলাতে পারে না। এখানে মানুষ জীবন-জীবিকা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়েছে। আমাদের জেলে যারা মাছ ধরেন, তারা মাছ ধরতে পারেন না।

আওয়ামী লীগ ও ভারতের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রত্যেকটা মানুষকে আজ কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। আমরা লড়াই করেছি ১৫ বছর, ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের ছেলেরা লড়াই করেছে। সবার লড়াইয়ের মাধ্যমে (হাসিনা) পালিয়েছে। কোথায়? ওই ভারতে। একদিকে পানি দেয় না, অন্যদিকে আমাদের যে শত্রু তাকে দিল্লিতে রাজার হালে বসিয়ে রেখেছে। সেখান থেকে আবার সে বিভিন্ন রকম হুকুম জারি করে।

উপস্থিত জনতার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আছে নাকি? পালিয়েছে। বন্ধুরা আজকের এই সংগ্রাম বাঁচা মরার সংগ্রাম, এই এলাকার মানুষের সংগ্রাম। এই সংগ্রামকে আমরা কখনো বন্ধ হতে দেব না।

অন্তর্বর্তী সরকারে উদ্দেশে বিএনপির বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, কথায় কথায় আপনারা বলেন নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ কিন্তু এই জায়গায় থাকলে চলবে না। এই জায়গায় আপনাকে মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে যে আমার পানির ন্যায্য হিস্যা আমি চাই। আর আপনি যে অন্তর্বর্তী সরকার তাড়াতাড়ি নির্বাচনটা দিন। জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেন।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী দিনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। একই মঞ্চে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ও নদীপাড়ের ভুক্তভোগী নুর বকস।

সমাবেশের বিভিন্ন পয়েন্টে পৃথক পৃথকভাবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।

তিস্তা নদীর দুই পাড়ের পাঁচটি জেলার ১১টি পয়েন্টে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলায় এজন্য হয়েছে মঞ্চ ও থাকার ব্যবস্থা। শিশু বৃদ্ধ নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে মুখর হয়ে উঠেছে তিস্তা নদীর ১২৫ কিলোমিটারের দুই তীর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই প্রতিটি পয়েন্ট কানায় কানায় ভরে ওঠে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ