ধর্ম ডেস্ক; হজরত মোহাম্মদ (স.)-এর একেকজন সাহাবি আকাশের নক্ষত্র সমতুল্য। বিশেষ করে কেউ কেউ এমন ছিলেন যারা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে শুধু মুসলিম হয়ে ক্ষান্ত হননি বরং তারা সর্বদা তাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। সাহাবিরা যেকোনো বিপদ-আপদে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশে দাঁড়াতেন, প্রয়োজনে জীবন দিয়ে তাকে রক্ষা করতেন। তাদের মধ্যে অন্যতম এক সাহাবি ছিলেন হজরত সাদ ইবনে মুআজ (রা.)।
اهْتَزَّ الْعَرْشُ لِمَوْتِ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ. وَفِي رِوَايَةٍ: اهْتَزَّ عَرْشُ الرَّحْمَنِ لِمَوْتِ سَعْدِ بن معَاذ. مُتَّفق عَلَيْهِ
সাদ ইবনে মুআজ-এর মৃত্যুতে আরশ কেঁপে উঠেছে। অপর এক বর্ণনায় আছে, সাদ ইবনে মুআজের মৃত্যুতে রহমানের আরশ কেঁপে উঠেছিল। (বুখারি ৩৮০৩, মুসলিম ২৪৬৬)
কেন আরশ কেঁপে উঠেছিল?
আরশ কি তার মৃত্যুর শোকে কেঁপে উঠেছিল নাকি তার রুহ আরশে পৌঁছবে সেই খুশিতে কেঁপে উঠেছিল? এ ব্যাপারে ইমাম হাসান বসরি (রহ.) মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন,
আরশ আসলে কষ্টে বা ভয়ে কেঁপে ওঠেনি, বরং সে খুশিতে কেঁপে উঠেছিল। একইভাবে উহুদ পাহাড়ও কেঁপে উঠেছিল যেদিন মহানবী (সা.), আবু বকর (রা.), ওমর (রা.) এবং উসমান (রা.) পাহাড়ে উঠেছিলেন।
যেভাবে মর্যাদাবান হয়েছেন সাদ ইবনে মুআজ (রা.)
রসুলুল্লাহ (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের পর বদর যুদ্ধ ছিল মুসলমানদের জন্য বড় একটা ঘটনা। বদর যুদ্ধের প্রস্তুতির সময় রসুল (সা.)-এর সাহাবি সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.) ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। যদি আপনি আমাদের সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন, আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব। যারা মুসা (আ.)-কে বলেছিল, আপনি আর আপনার রব গিয়ে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করুন, আমরা এখানে বসে থাকি—আমরা তাদের মতো হব না।’
সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.)-এর জন্ম মদিনায়। তাঁর গোত্রের নাম ছিল আউস। গোত্রের সদস্যদের কাছে তিনি এতটাই প্রিয় ছিলেন যে, তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পর তার প্রভাবে তার গোত্রের প্রত্যেক সদস্যই ইসলাম গ্রহণ করে। মক্কা থেকে হিজরত করে আসা মুসলমানদের সেবায় তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। মুহাজিরদের আতিথেয়তা ও নিরাপত্তা রক্ষায় ছিলেন খুবই আন্তরিক।
নৈতিক চরিত্রের বিচারে সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.)-এর আসন ছিল অতি উচ্চ। তিনি বলতেন, আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু তিনটি বিষয়ে আমি সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছি: ১. রাসুল (সা.)-এর মুখ থেকে যে কথা আমি শুনি, তার সবই যে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে, এ কথা আমি বিশ্বাস করি। ২. নামাজের সময় অন্য কোনো চিন্তা আমার মনে জেগে ওঠে না। ৩. মৃত ব্যক্তির জানাজার কাছে থাকলে মুনকির-নাকির ছাড়া আর কোনো ভাবনা আমার মনে আসে না।
সাদ (রা.)-এর সঙ্গে রসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করতেন। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাকে বিচারক নিয়োগ করতেন। একবার তার একটি বিচারের রায় শুনে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, সাত আসমানের ওপর থেকে আল্লাহ যে ফয়সালা দিয়েছেন, তুমিও ঠিক একই ফয়সালা দিয়েছ।