স্টাফ রিপোর্টার : রথযাত্রা বা রথদ্বিতীয়া একটি আষাঢ় মাসে আয়োজিত অন্যতম প্রধান হিন্দু উৎসব। ভারতের ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে এই উৎসব বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়। এছাড়া ইসকনের ব্যাপক প্রচারের জন্য এখন এটি বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর কৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের স্মরণে এই উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। ভারতের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ রথযাত্রা ওড়িশার পুরী শহরের জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা।
রথযাত্রা প্রচলন
কথিত আছে, আষাঢ় মাসের শুক্ল দ্বিতীয়ায় বলরাম ও বোন সুভদ্রার সঙ্গে মাসির বাড়ি যান জগন্নাথ। সেখান থেকে আবার সাতদিন পর মন্দিরে ফিরে আসেন জগন্নাথ। এটাকেই জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি যাওয়া বলে৷ পরপর তিনটি সুসজ্জিত রথে চেপে মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে যান জগন্নাথ। এই যাওয়াকে সোজা রথ আর ফিরে আসাকে উল্টো রথ বলে।
এছাড়াও রথযাত্রা পালন সম্পর্কে নানান কাহিনি
এক কাহিনি অনুযায়ী, জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথকে স্নান করানো হয়। তার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার পর প্রায় ১৫ দিন জগন্নাথকে একান্তবাসে রেখে তাঁর সেবা-শুশ্রূষা করে তাঁকে সুস্থ করে তোলা হয়। আষাঢ় মাসের শুক্ল দ্বিতীয়া তিথিতে জগন্নাথ সুস্থ হয়ে একান্তবাস সমাপ্ত করেন এবং সকলকে দর্শন দেন। জগন্নাথের দেখা পেয়ে সকলে আনন্দিত হয়ে রথযাত্রার আয়োজন করেন।
অন্য এক পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী সুভদ্রা দ্বারকা দর্শনের ইচ্ছা প্রকট করলে কৃষ্ণ ও বলরাম পৃথক পৃথক রথে বসে নগর ভ্রমণে বের হন। মনে করা হয়, এর পর থেকেই প্রতি বছর রথ যাত্রা আয়োজিত হয়।
আর এক প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ইহলোক ত্যাগের পর কৃষ্ণের সঙ্গে বলরাম ও সুভদ্রার পার্থিব শরীর সমুদ্র তীরে দাহ সংস্কার করা হয়। সে সময় সমুদ্রতীরে ঝড়ের বেগে দ্বারকাধীশের অর্ধদগ্ধ শব সমুদ্রে প্রবাহিত হয়ে পুরী পৌঁছয়। পুরীর রাজা সেই তিন শব তুলে পৃথক পৃথক রথে বিরাজমান করান। নগরের লোকেরা নিজে সেই রথ টেনে সারা নগর ঘোরান। দারু কাঠ শবের সঙ্গে প্রবাহিত হয়ে এসেছিল সেই কাঠ দিয়ে বাক্স তৈরি করে তাতে শব রেখে ভূমিতে সমর্পিত করে দেওয়া হয়। চারণ পুস্তক অনুযায়ী এর পর থেকেই প্রতি বছর রথযাত্রা পালিত হতে শুরু হয়।
রথযাত্রার আচার-অনুষ্ঠান ও প্রস্তুতি
ভক্তরা যারা জগন্নাথ পুরীর রথযাত্রায় যোগ দিতে অক্ষম, তারা তাদের শহরে বা গ্রামে অনুরূপ রথযাত্রার আয়োজন করে পুণ্যের অংশীদার হন। এই দিনে ভগবান শ্রী বলরাম, শ্রী জগন্নাথ এবং সুভদ্রা দেবীর পুজো হয়। ভগবানকে তাম্বুল, ফল ও নৈবেদ্য সহ ভিজিয়ে রাখা মুগ, মটর, ছোলা ইত্যাদি নিবেদন করুন এই দিন। এই দিনে, ঈশ্বরের মূর্তির কাছে কীর্তন করা উচিত, ব্রাহ্মণদের খাদ্য পরিবেশন করে এবং তাদের ভক্তি অনুসারে দান করে আশীর্বাদ চাইতে ভুলবেন না।
সুভদ্রা দেবী, শ্রী জগন্নাথ এবং শ্রী বলরামকে সজ্জিত করে রথে বসিয়ে বাদ্যযন্ত্র সহকারে শহরে বা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় এই দিন। রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করে ঈশ্বরের গুণগান করা উচিত এবং তাঁর নাম জপ করা উচিত, সংক্ষেপে এটাই এই রথযাত্রা উৎসবের নিয়ম। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, শেষনাগ নিজে এই দিনে উপবাস পালনকারী ভক্তদের রক্ষা করেন এবং তাদের সমস্ত সুখ প্রদান করেন, যার কারণে তারা মৃত্যুর পরে মুক্তির অধিকারী হন।
রথযাত্রা ২০২৪
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা আজ রবিবার (৭ জুলাই) থেকে শুরু হচ্ছে। আষাঢ় শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয় রথযাত্রা। আগামী ১৫ জুলাই উল্টো রথযাত্রার মধ্যদিয়ে শেষ হবে এ উৎসব।