মুসলিম ব্যবসায়ীর যেমন গুণ থাকা উচিত

ইসলাম ব্যবসাকে নিছক একটি দুনিয়াবি কাজ হিসেবেই দেখে না, বরং তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত গণ্য করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সত্যবাদী, আমানতদার ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক (উঁচু স্তরের সত্যবাদী) ও শহীদদের সঙ্গে হাশরের মাঠে উঠবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১২০৯) এর চেয়ে বড় সুসংবাদ একজন মুসলিম ব্যবসায়ীর জন্য হতে পারে না। কেয়ামতের মাঠে আম্বিয়ায়ে কেরাম, সিদ্দিক ও শুহাদায়ে কেরামের সাথে থাকবে—এর চেয়ে আর বড় পাওয়ার কী আছে?

 

নবীজি (সা.) নবুয়তপূর্ব কালে সর্বোত্তম ব্যবসায়ী ছিলেন: নবীজি (সা.) স্বয়ং নবুয়তের গুরুদায়িত্ব লাভের পূর্বে ব্যবসা করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, মক্কা বিজয়ের দিন নবী করিম (সা.) মক্কা শরিফে কোথাও উপবিষ্ট ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ভদ্রলোক এসে বলল : আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি আপনার সাথে এক সময় ব্যবসা করেছিলাম। ওই লোক তখনো ইসলাম গ্রহণ করেনি। নবী করিম (সা.) তাকে বলেন, হ্যাঁ, আমার স্মরণ আছে, তুমি আমার ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলে। তখন লোকটি বলল : ‘আপনি এমন এক অংশীদার ছিলেন, এমন ভালো অংশীদার আমি জীবনে কখনো পাইনি, কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতেন না এবং আমার সাথে অশোভন আচরণ করেননি।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৩৬৯৪৮)
এছাড়াও খাদিজা (রা.)-এর সাথে নবীজি (সা.)-এর অংশীদারে ব্যবসা করা এবং দক্ষতা ও আমানতদারিতার সাথে ব্যবসা পরিচালনার ঘটনা তো সবারই জানা। খাদিজা (রা.) তাঁর এই আমানতদারিতায় মুগ্ধ হয়েই নিজ থেকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। (দেখুন—সিরাতে ইবনে হিশাম ১/১৮৮-১৮৯)

 

ব্যবসায়ীদের প্রতি ইসলামের অনুপম নির্দেশনা: নবীজি (সা.) সব ক্ষেত্রেই আমাদের যে সোনালী নীতি ও জ্যোতির্ময় দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, এর কোনো তুলনাই হয় না। দেখুন! আজ আমাদের ওপর যে ব্রিটিশ আইন চাপানো আছে, তার সাথে ইসলামের এসব জ্যোতির্ময় নীতিকে মিলান, আকাশ-পাতাল ব্যবধান পাবেন। ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বৃটিশদের একটি নীতি রয়েছে, তা হলো ‘Caveat Emptor’ যার অর্থ হলো ‘ক্রেতা সাবধান থাকো’, অর্থাত্ ক্রেতার দায়িত্ব হলো, সে পণ্য ক্রয়ের সময় সতর্কতার সাথে দেখে-শুনে কিনবে, কিন্তু বিক্রেতার দায়িত্ব নয় যে, সে পণ্যের দোষ-ত্রুটি বাতলে দেবে। এটি হলো, একটি পশ্চিমা ব্যবসায়িক নীতি। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী (সা.) আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন এভাবে—‘যে ব্যক্তি জেনে-শুনে কোনো পণ্যের দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে ক্রেতার কাছে প্রকাশ না করে বিক্রয় করবে, সে আজীবন আল্লাহর অসন্তুষ্টিতে নিপতিত থাকবে এবং ফেরেশতাগণ তাকে অভিশাপ দিতে থাকবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৪৭)অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন : ‘যে ব্যক্তি বাজারে পণ্যের সাপ্লাই বাড়ায়, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়, আর পণ্য স্টককারী ও সংকট সৃষ্টিকারী অভিশপ্ত হয়, তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫৩)এসব মূলনীতি রাসুল (সা.) আমাদের দিয়েছেন। এটি হলো আমাদের ইসলামের শিক্ষা। তাই এ কথা অন্তরে বসিয়ে নিতে হবে, কেবল দুনিয়াবি রোজগারের আশায়ই ব্যবসা করছি না, বরং আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত করছি। আর এই ইবাদত এ জন্যই করছি, যাতে আমি নিজের রোজগারের সাথে সাথে আমার দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রাখতে পারি এবং আমার দেশ ও জাতিকে বিজাতীয় গোলামী থেকে উদ্ধার করতে পারি। এ উদ্দেশ্য সামনে রেখেই আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করবো।

 

নৈরাশ্যের পথ ছেড়ে উদ্যমী হোন: নৈরাশ হবো না! নৈরাশ্যকে প্রশ্রয় দেবো না। নৈরাশ্য তো কাফেরদের জন্য। একজন মুসলিম কখনো নৈরাশ হতে পারে না। আমি আমার প্রচেষ্টা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চালিয়ে যেতে থাকবো। ফলাফল তো আল্লাহ তায়ালার হাতে। ফলাফলের ব্যাপারে চিন্তা না করে প্রচেষ্টা আমি চালিয়ে যাবো। রাসুলে কারিম (সা.) বলেন : ‘যখন কেয়ামত সংঘটিত হতে দেখবে আর এমতাবস্থায় যার হাতে একটি চারাগাছ আছে, সে যেন তা রোপন করে দেয়।’ (মুসনাদে আহমাদ : হা. ১২৯০২)উক্ত হাদিসে মানুষকে এই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, মানুষ যেন নিরাশ না হয়ে তাদের সামর্থের মধ্যে করণীয় কাজ যথাসম্ভব চালিয়ে যেতে থাকে। ফলাফল তো আল্লাহ তাআলার হাতে, তার অপেক্ষা না করে নিজের কাজ যথাসাধ্য চালিয়ে যাবে। যদি সঠিক নিয়তে ও সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করা হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ, অবশ্যই আল্লাহ ভালো ফলাফল দেবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ