স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ওপেনার শাই হোপের সেঞ্চুরিতে (১৩৪ বলে ১২৭ রান) ৩০৫ রান করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই রানকে পাত্তাই দিলেন না পাকিস্তান ব্যাটাররা। বাবর আজমের সেঞ্চুরিতে (১০৭ বলে ১০৩ রান) ৫ উইকেটে জয় পেতে একেবারেই বেগ পেতে হয়নি পাকিস্তানকে। টানা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি হাকিয়ে, একাধিকবার এই কীর্তি দেখিয়ে রেকর্ড গড়লেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করেও জিতে পাকিস্তান। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়েও যায় পাকিস্তান।
পাকিস্তানের মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৪ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরার উপলক্ষ জয়ে রাঙাল পাকিস্তান। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে হোপের সেঞ্চুরির সাথে শামার ব্রুকসের হাফসেঞ্চুরিতে (৭০ রান) ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৫ রান করে। পাকিস্তান ৪ বল বাকি থাকতে এই রান অতিক্রম করে জিতে যায়। বাবরের সেঞ্চুরির সাথে ইমাম উল হক (৬৫) ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের (৫৯) জোড়া হাফসেঞ্চুরির পর শেষে খুশদিল শাহের ২৩ বলে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংসে জয় পায় পাকিস্তান। ৫ উইকেট হারিয়ে ৪৯.২ ওভারে ৩০৬ রান করে জিতে যায় পাকিস্তান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এই প্রথম তিনশ রান তাড়া করে জিতল পাকিস্তান। ২০০৮ সালে আবু ধাবিতে ২৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় ছিল আগের রেকর্ড। এই সংস্করণে টানা তৃতীয় সেঞ্চুরিতে ১০৭ বলে ৯ চারে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন বাবর। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন তিনি। তবে, মাত্র ২৩ বলে ৪ ছক্কা ও একটি চারে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংস খেলে জয় নিশ্চিত করা খুশদিলের হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
পাকিস্তান জয়ের জন্য ১২ বলে ২১ রানের সমীকরণে থাকতে ক্যারিবিয়ান পেসার রোমারিও শেফার্ডের করা ৪৯তম ওভারে ১৫ রান নেন খুশদিল শাহ ও মোহাম্মদ নওয়াজ। খুশদিল একাই নেন ১৪ রান। ২৩ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থেকে পাকিস্তানের জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখা খুশদিলের হাতে ম্যাচসেরার পুরস্কার তুলে দেওয়ার পর বাবর বলেছেন, ‘অসাধারণ ব্যাটিংয়ের জন্য পুরস্কারটা তাকে দিতে চাই। রান তাড়ার পরিকল্পনায় আমাদের লক্ষ্যটা ছিল পরিষ্কার।’
সিরিজটি মূলত গত ডিসেম্বরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে সময় টি২০ সিরিজ খেলার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় স্থগিত হয়ে যায় ওয়ানডে সিরিজ। পরে পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাওয়ালপিন্ডি থেকে ম্যাচের ভেন্যু সরিয়ে নেওয়া হয় মুলতানে। এই মাঠে সবশেষ কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছিল ২০০৮ সালের এপ্রিলে, সেটিও ছিল ওয়ানডেতে; পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরেছিল বাংলাদেশ।
ওয়ানডেতে টানা চার ইনিংসে শতকের রেকর্ড আছে, ২০১৫ বিশ্বকাপে গড়েছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা। কিন্তু একাধিকবার টানা তিন ওয়ানডেতে শতক? বাবর ছাড়া আর কারও নেই। ২০১৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই টানা তিন ওয়ানডেতে শতক তুলে নেন বাবর। এবার টানা তিন ওয়ানডেতে শতকের পথে বাবর প্রথম দুটি পান গত এপ্রিলে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে।
পাকিস্তানের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ শতকের রেকর্ড গড়তে আরও চার ইনিংসে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে হবে বাবরকে। ২০ শতক নিয়ে সবার ওপরে থাকা সাঈদ আনোয়ারের পরই বাবর (১৭)। এই সেঞ্চুরিতে আরও একটি কীর্তি গড়েন বাবর। পাকিস্তানের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঁচ ইনিংসের মধ্যে চার ইনিংসেই শতকের দেখা পেলেন। গত বছর বার্মিংহামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৮ রানের ইনিংস খেলার পর লাহোরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন ৫৭ রানের ইনিংস। এরপর শতক পেলেন টানা তিন ইনিংসেই।
পাকিস্তানের হয়ে টানা তিন ওয়ানডেতে বাবরের আগে শতক পেয়েছেন শুধু সাঈদ আনোয়ার ও জহির আব্বাস। আরও সাত ক্রিকেটার শতক পেয়েছেন টানা তিন ওয়ানডেতে—হার্শেল গিবস, এবি ডি ভিলিয়ার্স, কুইন্টন ডি কক, রস টেলর, জনি বেয়ারস্টো, বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা। মোট ১১ ব্যাটসম্যান এই নজির গড়লেও শুধু বাবরই একাধিকবার তা করে দেখালেন। শুক্রবার একই স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩০৫/৮; ৫০ ওভার; হোপ ১২৭, মেয়ার্স ৩, ব্রুকস ৭০, পুরান ২১, কিং ৪, পাওয়েল ৩২, শেফার্ড ২৫, আকিল ৮, জোসেফ ১*, ওয়ালশ ২*; রউফ ৪/৭৭, আফ্রিদি ২/৫৫।
পাকিস্তান: ৩০৬/৫; ৪৯.২ ওভার; ফখর ১১, ইমাম ৬৫, বাবর ১০৩, রিজওয়ান ৫৯, খুশদিল ৪১*, শাদাব ৬, নওয়াজ ৮*; জোসেফ ২/৫৫।
ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে পাকিস্তান।
ম্যান অব দা ম্যাচ: খুশদিল শাহ (পাকিস্তান)।