মিথুন আশরাফ ॥ পন্ডপান্ডব যখন থেকে একসাথে টি২০ ম্যাচ খেলা শুরু করেন, তখন থেকে এই প্রথমবার এমনটি ঘটল। কোন টি২০ সিরিজে কোন পান্ডবই নেই। মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কেউই সিরিজের দলে নেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘোষিত টি২০ দলে এমনটিই ঘটেছে।
পঞ্চপান্ডবের মধ্যে এক পান্ডব (মাশরাফি বিন মর্তুজা) তো এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই খেলেন না। বাকি থাকে চার পান্ডব (সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ)। তামিম ইকবালও টি২০ ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছেন। বাকি থাকে তিন পান্ডব। তাদেরও টি২০ থেকে বিদায়ের সময় যেন ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসছে। তা বোঝাই যাচ্ছে। প্রথমবার সব পান্ডব ছাড়া যে টি২০ সিরিজের দল ঘোষনা হয়েছে।
দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর আগে ২০০৭ সালের টি২০ বিশ্বকাপের দলে একসাথে ছিলেন পাঁচ পান্ডব। সবাই প্রথমবারের মতো একসাথে ম্যাচও খেলেছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জোহানেসবার্গে একসাথে খেলেছেন। মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম ও রিয়াদ প্রথমবার একসাথে কোন টি২০ সিরিজ বা টুর্নামেন্টের দলে থাকেন। সেই থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের আগ পর্যন্ত কোন না কোন পান্ডব প্রতিটি সিরিজের দলে ছিলেনই। কিন্তু এবার প্রথমবার এমনটি ঘটল।
এরআগে অবশ্য পাঁচপান্ডব ছাড়া প্রথমবার ম্যাচ খেলা হয়েছিল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গতবছর ১ এপ্রিল সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে কোন পান্ডব ছাড়া খেলেছে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে অধিনায়ক ছিলেন রিয়াদই। কিন্তু শেষমুহুর্তে উরুতে চোট পাওয়ায় ম্যাচ থেকে ছিটকে যান। রিয়াদের পরিবর্তে ম্যাচটিতে অধিনায়ক ছিলেন লিটন কুমার দাস। টি২০ সিরিজে রিয়াদ ছাড়া আর কোন পান্ডব ছিলেন না। শেষ ম্যাচটির আগে রিয়াদ চোটে পড়ায় কোন পান্ডব ছাড়া খেলতে হয়। এবার সিরিজের দল ঘোষনাতেই প্রথমবার নেই কোন পান্ডব।
প্রথম কোন সিরিজের দলে মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, রিয়াদের কেউই নেই
সামনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি২০ সিরিজে কোন পান্ডবকেই দেখা যাবে না। মাশরাফি, মুশফিক ও সাকিব ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রথম টি২০তেই খেলেন। এরপর ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তামিম ও রিয়াদেরও টি২০ অভিষেক হয়। এরপর পাঁচ পান্ডব একসাথে ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ^কাপের ম্যাচে খেলতে নামেন। সেই থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টি২০ খেলেন মাশরাফি। এরপর আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দেন। তার মানে এরপর আর চাইলেও পাঁচ পান্ডব একসাথে টি২০ ক্রিকেট খেলতে পারেননি। জিম্বাবুয়ে সিরিজের টি২০ দল ঘোষনার আগে তামিমও টি২০ ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষনা দিয়ে ফেলেন। তাতে চাইলেও মাশরাফি ও তামিমকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি২০ সিরিজে রাখা যেত না। থাকে তিন পান্ডব-সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ।
নিয়মিত অধিনায়ক রিয়াদকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নুরুল হাসান সোহানকে জিম্বাবুয়ে সফরের টি২০ দলের অধিনায়ক করা হয়েছে। ৩০ জুলাই প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে সিরিজ শুরু হবে। সফরের আনুষ্ঠানিকতাও শুরু হবে। এরপর ৩১ জুলাই ও ২ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ। টি-টোয়েন্টির সব ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায়। সোহানকে নেতৃত্ব দেওয়ার সাথে রিয়াদকে এই সিরিজ থেকে বাদও দেওয়া হয়েছে। তবে বলা হচ্ছে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে।
শুধু রিয়াদকেই নয়, মুশফিককেও টি২০ দলে রাখা হয়নি। আর যেহেতু সাকিব আগেই জানিয়েছেন জিম্বাবুয়ে সফরে খেলবেন না, তাই সাকিবকেও দলে রাখা হয়নি। তাতে করে মাশরাফি, তামিম টি২০ খেলবেন না। সাকিব, রিয়াদ, মুশফিককে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে প্রথমবার কোন পান্ডব ছাড়াই টি২০ দলও ঘোষনা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে ৫, ৭ ও ১০ আগস্ট মাঠে গড়াবে ওয়ানডে সিরিজের ম্যাচ তিনটি। ওয়ানডে ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর সোয়া ১টায়। ওয়ানেড ম্যাচগুলো আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ। টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে সিরিজের ম্যাচগুলো হবে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে। টি২০ সিরিজে না থাকলেও ওয়ানডে সিরিজে অধিনায়ক তামিম, মুশফিক ও রিয়াদ থাকছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে না থাকলেও জিম্বাবুয়ে সফরে ওয়ানডেতে ফিরেছেন মুশফিক।
জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশের টি২০ দল : মুনিম শাহরিয়ার, এনামুল হক বিজয়, লিটন কুমার দাস, আফিফ হোসাইন ধ্রুব, নুরুল হাসান সোহান (অধিনায়ক), শেখ মাহাদী, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজ ও পাভেল হোসেন ইমন।
জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশের ওয়ানডে দল : তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, এনামুল হক বিজয়, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেন ধ্রুব, নুরুল হাসান সোহান, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ শান্ত, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও তাইজুল ইসলাম।