Search
Close this search box.

পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির নতুন চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা

পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির নতুন চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা

মিথুন আশরাফ – এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে নতুন চ্যাম্পিয়ন দল মিলে গেল। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শ্রীলঙ্কা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনালে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়ে শ্রীলঙ্কা শিরোপা জিতে। ভানুকা রাজাপাকসের (৭১*) অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পর মাদুসান (৪/৩৪) ও হাসারাঙ্গার (৩/২৭) দুর্দান্ত বোলিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা। পাকিস্তানকে আসলে উড়িয়ে দেয়।

এরআগে একবারই টি-টোয়েন্টি ফরমেটে এশিয়া কাপ হয়। ২০১৬ সালের সেই এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। এবার দ্বিতীয়বার হওয়া স্বল্পওভারের ফরমেটে শ্রীলঙ্কা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে নতুন চ্যাম্পিয়ন দলই মিলেছে।

ম্যাচটিতে টস টস হেরে আগে ব্যাটিং করে শ্রীলঙ্কা । ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৭০ রান করে। ব্যাট হাতে রাজাপাকসে ৩৫ বলে ৫০ রান করার পর ৪৫ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় সর্বোচ্চ অপরাজিত ৭১ রান করেন। হাসারাঙ্গা ৩৬ ও ধনাঞ্জয়া ২৮ রান করেন। বল হাতে হারিস রউফ ৩ উইকেট নেন।  ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে রাজাপকসে ও হাসারাঙ্গা (৩৬) মিলে ষষ্ঠ উইকেটে ৫৮ রানের জুটি গড়ে দলকে ১১৬ রানে নিয়ে যান। এরপর রাজাপাকসে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেন। জয়ের ভীত গড়ে দেন।

জবাব দিতে নেমে ২০ ওভারে ১৪৭ রান করতেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ান ৫৫ ও ইফতিখার আহমে ৩২ রান করেন। হারিস রউফের ব্যাট থেকে আসে ১৩ রান। আর কোন ব্যাটসম্যানই দুই অংকের ঘরে পৌছাতে পারেননি। তাতে করে নাজেহাল হয় পাকিস্তান। ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশা করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুই মিলল না। একতরফা খেলে জিতল শ্রীলঙ্কা। বল হাতে মাদুসান (৪/৩৪) ও হাসারাঙ্গা (৩/২৭) পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের আটকে দেন। তৃতীয় উইকেটে রিজওয়ান ও ইফতিখারের মধ্যকার ৭১ রানের জুটি আশা জাগায়। কিন্তু যেই এই দুইজনের জুটি দলের ৯৩ রানে ভাঙ্গে, সেই থেকে টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে। শেষে ১৪৭ রানে দম ফুরায় পাকিস্তানের। শেষ ৫৪ রানেই ৮টি উইকেট হারায় পাকিস্তান।

এই ম্যাচের আগে দুই দল সুপার ফোরে লড়াই করে। ম্যাচটিতে ৫ উইকেটে জিতে শ্রীলঙ্কা। এবারও শ্রীলঙ্কাই জিতল। প্রথম ম্যাচে বাজেভাবে হারের পর আর একটি ম্যাচও হারল না শ্রীলঙ্কা। চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ করল। যেভাবে টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচে লড়াই হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উত্তেজনা দেখা গেছে, তাতে করে ফাইনালেও একই রকম অনুভূতি মিলবে, সেই আশা করা হচ্ছে। তবে ফাইনালের আগে পাকিস্তানকে (১২১/১০; ১৯.১ ওভার) উড়িয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা (১২৪/৫; ১৭ ওভার) তাতে করে ফাইনালেও কী শ্রীলঙ্কা জিতবে, নাকি পাকিস্তান শিরোপা জয় করে নেবে; সবার মুখে মুখে সেই প্রশ্নই ছিল। প্রশ্নের জবাবও মিলে গেছে। জিতেছে আবার শ্রীলঙ্কাই।

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরমেট মিলিয়ে এরআগে ১৪টি আসর হয়। এরমধ্যে ১৩টি ওয়ানডে ও ১টি টি-টোয়েন্টি ফরমেটের আসর হয়। এবার এশিয়া কাপের ১৫তম আসর হয়েছে। যা শেষ হয়ে যায়। আগের ১৪ আসরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭বার চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। এরমধ্যে টি-টোয়েন্টি ফরমেটে একবার আসর হয়, ভারতই চ্যাম্পিয়ন হয়। শ্রীলঙ্কা ৫ বার ও পাকিস্তান দুইবার শিরোপা জিতে। পাকিস্তান ফাইনাল জিতলে তৃতীয়বার আর শ্রীলঙ্কা ফাইনাল জিতলে ষষ্ঠবার চ্যাম্পিয়ন হত। বাজিমাত করল শ্রীলঙ্কাই ।

আট বছর পর এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা খেলল। ২০১৪ সালের মার্চে সবশেষ দুই দল শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলে। চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা। আর এরআগে ২০১২ সালের ফাইনালে জিতে শিরোপা ঘরে তুলে পাকিস্তান। আগেই হিসেব দাড় হয়ে গিয়েছিল, যদি পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন হয়, তাহলে ১০ বছর পর আবার এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হবে পাকিস্তান। আর যদি শ্রীলঙ্কা জিতে, তাহলে আট বছর পর আবার চ্যাম্পিয়ন হবে শ্রীলঙ্কা। সবশেষ দুই দল ২০১৪ সালে ফাইনালে খেলে। চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা। রানার্সআপ হয় পাকিস্তান। এবার পাকিস্তান জিতে সেই ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ ছিল। তা কাজে লাগাতে পারল না পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কার কাছে আবারও ধরাশায়ী হলো পাকিস্তান।

সবশেষ দুই আসরে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ভারতের শিরোপা জয়ের ধারা থেকে এবার বের হওয়া নিশ্চিত হয়ে যায় আগেই। তবে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি ফরমেটে হওয়া এশিয়া কাপে ২০১৬ সালে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে যে দলই চ্যাম্পিয়ন হতো, টি-টোয়েন্টি ফরমেটের এশিয়া কাপে নতুন চ্যাম্পিয়ন দলই মিলত। তা মিলেও গেল।

ছয় দলের টুর্নামেন্টে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার শুরুটা ভালো হয়নি। ভারতের কাছে ৫ উইকেটে হার দিয়ে পাকিস্তানের এশিয়া কাপ শুরু হয়। এরপর গ্রুপ পর্বে হংকংকে ১৫৫ রানে হারিয়ে সুপার ফোর খেলা নিশ্চিত করে নেয়। সুপার ফোরে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রতিশোধ নেয় পাকিস্তান। এরপর আফগানিস্তানকে অনেক কষ্টে ১ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নেয়। ফাইনালের আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারে পাকিস্তান। গ্রুপ পর্বে একটি ও সুপার ফোরে ২টি ম্যাচে জয় পায় পাকিস্তান। ফাইনালে হারল পাকিস্তানই।

শ্রীলঙ্কা গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হোচট খায়। আফগানিস্তানের কাছে ৮ উইকেটে হারে। ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। কী বেহাল দশা হয়। এরপর থেকেই শ্রীলঙ্কার খেলা বদলে যায়। বাংলাদেশকে ২ উইকেটে হারিয়ে যে মানসিকভাবে চাঙ্গা হন লঙ্কান ক্রিকেটাররা, এরপর আর হারেনি তারা। সুপার ফোরে খেলা নিশ্চিত করার সঙ্গে ফাইনালেও এখন খেলছে। সুপার ফোরে আফগানিস্তানকে ৪ উইকেটে হারানোর পর ভারতকেও ৬ উইকেটে হারায় শ্রীলঙ্কা। এমনকি ফাইনালের আগে পাকিস্তানকেও ৫ উইকেটে হারিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কা। ফাইনালেও পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের করে নেয় শ্রীলঙ্কা। টি-টোয়েন্টি ফরমেটের এশিয়া কাপে প্রথমবার এবং সব মিলিয়ে ষষ্ঠবার এশিয়া কাপে শিরোপা জিতে শ্রীলঙ্কা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ