মিথুন আশরাফ – প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড অতিক্রম হওয়ার পরের রাউন্ডে জিতে নিজেদের ক্রিকেটে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসকে ৯ রানে হারিয়ে দিল। তাতে ইতিহাস গড়ে ফেলল সাকিববাহিনী। অধিনায়ক সাকিব বলেছিলেন, যা আগে কখনো হয়নি, এই বিশ্বকাপে তা করার সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের। তাই হলো।
হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে টস হেরে আগে ব্যাটিং করে ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৪ রান করে বাংলাদেশ । ব্যাট হাতে আফিফ হোসেন ৩৮ ও নাজমুল হোসেন শান্ত ২৫ রান করেন। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত অপরাজিত ২০, সৌম্য সরকার ১৪, নুরুল হাসান সোহান ১৩ রান করেন। প্রথম উইকেটে সৌম্য সরকার ও শান্ত মিলে ৪৩ রানের জুটি গড়েন। ষষ্ঠ উইকেটে আফিফ হোসেন ও নুরুল হাসান সোহান ৪৪ রানের জুটি গড়েন। এই দুই জুটিতে এত রান করা সম্ভব হয়। শেষে সৈকতের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে এত বড় স্কোর করা সম্ভব হয়। তবে ব্যাটিং নিয়ে ভাবনা থেকেই গেল। ৪৩ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ৭৬ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। সেখান থেকে আফিফ, এর পর সৈকত রান বাড়ান। না হলে বিপদে পড়ে যেত বাংলাদেশ।
জবাব দিতে নেমে ২০ ওভারে ১০ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রান করে নেদারল্যান্ডস । ব্যাট হাতে অ্যাকারম্যান ৬২ রান করেন। মিকেরেন ২৪ রান করবন। বল হাতে তাসকিন আহমেদ ৪ উইকেট নেন। হাছান মাহমুদ ২ উইকেট নেন। ১৫ রানেই ৪ উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস। এরপর ৬৬ রানে ৬ উইকেট হারায়। তখন বৃষ্টিতে কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে। আবার খেলা শুরু হয়। কলিন অ্যাকারম্যান অসাধারণ ব্যাটিং করতে থাকেন। ৩৯ বলে হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেলেন। ম্যাচের একমাত্র হাফ সেঞ্চুরিয়ান তিনি। তবে দলকে শেষ পর্যন্ত যেতে পারেননি। দলের ১০১ রানে ৪৮ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬২ রান করে আউট হন অ্যাকারম্যান। পেসার তাসকিন আহমেদ অসাধারণ বোলিং করে দলকে জেতান। বাংলাদেশের বিপদ আনা অ্যাকারম্যানকেও আউট করে দেন তাসকিন। শেষ ছয় বলে জিততে নেদারল্যান্ডসের প্রয়োজন থাকে ২৪ রান। ১৪ রান নিতে পারে নেদারল্যান্ডস এবং শেষ বলে মিকেরেনের আউটের মধ্য দিয়ে অলআউটও হয়।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আসল মিশনে নেমেই জয় পায় বাংলাদেশ। সুপার টুয়েলভে সরাসরি খেলে প্রথমবারেই জিতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এরআগে কখনোই বাংলাদেশ প্রথম রাউন্ডের পর কোন রাউন্ডে জিততে পারেনি। এবার সেই কাঙ্খিত জয়টি পেয়ে গেল। অধরা জয় মিলল।
সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ে। তার মানে নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়েকে অন্তত হারানোর সুযোগ থাকছে। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে দিল। এখন জিম্বাবুয়েকেও হারানোর অপেক্ষা। তাহলে প্রথমবারের মতো শুধু একটি নয়, দুই জয় মিলে যাবে। আর যদি দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোন দলকে হারানো যায়, তাহলে তো উৎসব হতেই পারে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ খুব ভালো দল নয়। তা তো সবশেষ এশিয়া কাপ ও নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশিয় সিরিজেই বোঝা গেছে। একটি ম্যাচেও জয় আদায় করে নেয়া যায়নি।
তবে সাকিব এবার ভালোভাবেই আগেই বুঝে গিয়েছিলেন, একটি জয় মিললেই ইতিহাস হয়ে যাবে। বিশেষ সাফল্য মিলে যাবে। তাই তো বলেছিলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এই বিশ্বকাপে আমাদের এমন কিছু করার সামর্থ্য আছে যেটা আমরা এর আগে কোনো বিশ্বকাপে করিনি।’ সাকিবের কথাই ঠিক হলো।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কখনোই প্রথম রাউন্ড পেরিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে জয় পায়নি। এবার প্রথম রাউন্ড খেলতে হয়নি। বিশ্বকাপের গত আসরে সেরা ৮ দলের একটি হওয়াতে সুপার টুয়েলভে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে সুপার এইটে খেলে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডই অতিক্রম করতে পারেনি বাংলাদেশ। একটি ম্যাচও জিততে পারেনি।
২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে তৃতীয় বিশ্বকাপে একই দশা হয়। ২০১২ সালে চতুর্থ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কায় হওয়া বিশ্বকাপেও সেই দুর্দশা কাটেনি। ২০১৪ সালে পঞ্চম বিশ্বকাপে নিজ দেশে হওয়া বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড অতিক্রম করতে পারলেও সুপার টেনে একটি ম্যাচও জিতেনি বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের ষষ্ঠ বিশ্বকাপে ভারতে প্রথম রাউন্ড অতিক্রম করলেও সুপার টেনে গিয়ে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ২০২১ সালের সপ্তম বিশ্বকাপে সংযুক্ত আরব আমিরাতেও একই দশা হয়। কোন রকমে প্রথম রাউন্ড অতিক্রম করে বাংলাদেশ। সুপার টুয়েলভে টানা ৫টি ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। এবার আগে থেকেই জয়ের আশা বেশি ছিল। ইতিহাসও যে প্রথম ম্যাচেই গড়া হয়ে যাবে, সেই প্রত্যাশাও করা হয়েছিল। প্রত্যাশা মতো ইতিহাসও গড়া হয়ে যায়।