স্পোর্টস রিপোর্টার – চরম উত্তেজনা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, রুদ্ধশ্বাস, স্নায়ুচাপের ম্যাচে পাকিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দিল ভারত। টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের সুপার ওভারে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বিরাট কোহলির ঝড়ো ব্যাটিংয়ে এই জয় মিলে। ৫৩ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৮২ রান করা কোহলির ঝড়ো ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে প্রতিশোধও নিল ভারত। এরআগে গত বিশ^কাপে যে পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল ভারত। সেই প্রতিশোধ নেয়া হলো।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত খেলা হয়। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি দলের লড়াইয়ে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করে ভারত। আগে ব্যাটিং করে বিপদে পড়ে পাকিস্তান। সবশেষ শান মাসুদ (৫২*) ও ইফতিখার আহমেদের (৫১) হাফসেঞ্চুরিতে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫৯ রান করতে পারে। আর্শদীপ সিং ও হার্দিক পান্ডিয়া ৩টি করে উইকেট শিকার করে নেন। জবাব দিতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬০ রান করে জিতে ভারত। কোহলি অপরাজিত ৮২ রান করেন। হার্দিক পান্ডিয়া ৪০ রান করেন। দুইজন মিলে তৃতীয় উইকেটে ১১৩ রানের গুরুত্বপুর্ন জুটিও গড়েন।
শুরুতেই পাকিস্তানের সেরা দুই ব্যাটসম্যান বাবর আজম (০) ও মোহাম্মদ রিজওয়ান (৪) আউট হয়ে যান। আর্শদীপ দুইজনকেই আউট করে দিয়ে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেন। পাকিস্তানকে বিপদে ফেলেন। ১৫ রানেই সেরা দুই ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর শান মাসুদ ও ইফতিখার মিলে দলকে ৯১ রানে নিয়ে যান। তৃতীয় উইকেটে ৭৬ রানের জুটি গড়েন। এমন সময়ে ইফতিখার আউট হতেই ১০০ রানের আগেই ৫ উইকেটের পতন ঘটে। শেষে শাহিন আফ্রিদি (১৬) খানিক ব্যাটিং ঝড় তুলেন। আর শান মাসুদ উইকেট আকড়ে থেকে দলকে ১৬০ রানের কাছে নিয়ে যান। শুরুতে আর্শদীপ টপাটপ উইকেট নেন। মাঝপথে হার্দিক বোলিং তান্ডব দেখান। তাতে করে পাকিস্তান অনেক বড় স্কোর গড়তে পারেনি।
ভারতও শুরুতেই মহা বিপদে পড়ে যায়। ২৬ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। লোকেশ রাহুল (৪), রোহিত শর্মা (৪), সূর্যকুমার যাদব (১৫) আউট হয়ে যান। হারিস রউফ ও নাসিম শাহের বোলিং তান্ডবের কবলে পড়ে ভারত। ৩১ রানে গিয়ে প্যাটেলও রান আউট হয়ে গিয়ে সাজঘরে ফিরেন। এরপর বিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়া মিলে যে জুটি গড়া শুরু করেন, ভারতকে জয়ের আশা দেখান। দলকে সহজেই ১০০ রানে নিয়ে যান। কোহলি ৪৩ বলে ৫০ রানও করে ফেলেন। শেষ দিকে খেলা উত্তেজনায় ভরে যায়। ১৯তম ওভারের শেষ দুই বলে দুই ছক্কা হাকান কোহলি। শেষ ৬ বলে জিততে ১৬ রান লাগে।
প্রথম বলেই পান্ডিয়াকে (৪০) আউট করে দেন স্পিনার মোহাম্মাদ নাওয়াজ। ১১৩ রানের জুটি ভাঙেন। ৫ বলে জিততে ১৬ রান লাগে ভারতের। দ্বিতীয় বলে ১ রান হয়। ৪ বলে ১৫ রান লাগে। তৃতীয় বলে কোহলি ২ রান নেন। ৩ বলে ১৩ রান লাগে। চতুর্থ বলে ছক্কা হাকিয়ে দিয়ে জয়ের কাছে নিয়ে যান কোহলি। নো বলও হয়। তাতে করে একটি বল বাড়ে এবং ফ্রি হিটও মিলে। ৩ বলে জিততে ৬ রান লাগে। ওয়াইডও দেন নাওয়াজ। ৩ বলে জিততে ৫ রান লাগে। বোল্ড হয়ে যান কোহলি। কিন্তু ফ্রি হিট থাকায় আউট হননি। দৌড়ে ৩ রান নিয়ে নেন। ২ বলে জিততে ২ রান লাগে। জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌছে যায় ভারত। দিনের কার্তিক এমন সময়ে স্ট্যাম্পিং হয়ে যান। ১ বলে জিততে ২ রান লাগে। যে কেউ জিততে পারেন। রবীচন্দ্রন অশ্বিনের উপরই সব নির্ভর করে। ওয়াইড দিয়ে ফেলেন নাওয়াজ। ১ বলে জিততে ১ রান লাগে। অশি^ন ১ রান নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দেন।
এবার ম্যাচটি নিয়ে অনেক উত্তেজনা কাজ করে। যেহেতু গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়েছিল বাবর আজমের দল পাকিস্তান। প্রথমবারের মতো কোন বিশ^কাপে পাকিস্তানের কাছে হারে ভারত। এবার আবার বিশ^কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের ধারায় ফেরার চেষ্টায় নামে ভারত। চেষ্টা কাজেও লাগে। জিতে ভারত। আবার বিশ^কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের ধারায় ফিরে ভারত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হোক কিংবা ওয়ানডে বিশ্বকাপ, পাকিস্তান গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ভারতের বিপক্ষে কখনোই জিততে পারেনি। ১৯৯২ সাল থেকে দুই দল ওয়ানডে বিশ্বকাপে লড়াই করে ৭টি ম্যাচ খেলে। একটিতেও পাকিস্তান জিততে পারেনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২০০৭ সাল থেকে লড়াই করে ২০১৬ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি পাকিস্তান। টানা পাঁচ বিশ্বকাপে হারে। কিন্তু গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়া বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারিয়ে দেয় পাকিস্তান। ইতিহাস গড়ে। কখনো যা হয়নি। তা গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হয়েছে। এবারও পাকিস্তানের আশা ভারতকে হারিয়ে দেবে। সবশেষ এশিয়া কাপেও দুই দলের শেষ লড়াইয়ে পাকিস্তানই জিতেছিল। কিন্তু এবার কোহলি তা হতে দেননি। ম্যাচ জিতিয়ে ম্যাচের নায়কও হন কোহলি।