স্পোর্টস রিপোর্টার – এবছর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। মাঠের খেলায় দুই দল লড়াই করে জয়-পরাজয়ের ইতিহাস রচনা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে দুই দলের লড়াই বাদে তৃতীয় শক্তি সগর্বে নিজের মহিমা প্রদর্শন করে যাচ্ছে। এই শক্তির নাম বৃষ্টি। আর তাতে করে এবার যেন হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ‘বিশ্বকাপে’র বদলে ‘বৃষ্টিকাপ’, তা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে।
এরই মধ্যে বৃষ্টির কারণে দুটি ম্যাচ পরিত্যক্ত, এক ম্যাচ ফল শূন্য এবং এক ম্যাচে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ফল ঘোষণা করতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত মূল পর্বের ১৪ ম্যাচের মধ্যে ৫ ম্যাচই বৃষ্টি-বিঘ্নিত। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে টস থেকে খেলা শুরু হতে দেরি হওয়া, খেলা মাঝপথে বন্ধ করা ইত্যাদি নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিনত হয়েছে।
গত ২৪ অক্টোবর হোবার্টে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকা-জিম্বাবুয়ে ম্যাচটি বৃষ্টিতে বিঘ্নিত হয়। ২০ ওভারের খেলা কমিয়ে ৯ ওভার করা হয়। জিম্বাবুয়ে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ৭৯ রান করে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মুহুর্মুহু বৃষ্টির বাধায় পড়ে প্রোটিয়ারা। খেলা আবার কমিয়ে ৭ ওভারে নামানো হয়। কিন্তু তাতেও সমাধান হয়নি। বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি ছিল ফল শূন্য। ২ পয়েন্ট নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাদের।
২৬ অক্টোবর মেলবোর্নে বৃষ্টির কারণে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় পায় আয়ারল্যান্ড। সেদিন বৃষ্টি আইনে ৫ রানের জয় পেয়ে ২ পয়েন্ট অর্জন করে অ্যান্ডি বালবির্নির দল। আর বিকেলে একই মাঠে নিউজিল্যান্ড-আফগানিস্তানের ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে।
শুক্রবার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত আফগানিস্তান-আয়ারল্যান্ড ম্যাচটিও বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। ফল- দু’দলকে পয়েন্ট ভাগ করে নিতে হয়েছে। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হারের পরে আফগানদের দুটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় বিপদে পড়তে হচ্ছে দলটিকে। একইদিন মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচটিও বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে। তাতে দলগুলো বিপদে পড়ে যাচ্ছে।
এবারের বিশ্বকাপে বৃষ্টি অনেক কিছুই বদলে দিতে পারে। কারও জন্য সেটি সৌভাগ্য আবার কারও জন্য সেটি দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারে। তাই বিশ্বকাপের বদলে ‘বৃষ্টিকাপ’ বললে হয়তো খুব বেশি অত্যুক্তি করা হবে না।
দলগুলোকে এখন এই বৃষ্টির কথা মাথায় রেখেই মাঠে নামতে হচ্ছে। খেলার বাইরেও হিসাব করতে হচ্ছে বৃষ্টির অংক। আবার মাঠে খেলা না গড়ালেও বৃষ্টি বসে থাকছে না। পয়েন্ট টেবিলে দলগুলোকে ওঠানামা করাচ্ছে সে নিজেই।
অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত কৌতুক হচ্ছে, এখানে একই দিনে গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত-বসন্তের দেখা পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়াতে কেউ বাইরে যাওয়ার আগে আনুষঙ্গিক কিছু জিনিস বাধ্যতামূলকভাবে সঙ্গে নেয়। এর মধ্যে একটা শীতের কাপড় ও একটা ছাতা থাকেই। কারণ, সারা বছরজুড়েই অস্ট্রেলিয়াতে বৃষ্টি হয়। বিশ্বকাপ চলাকালীন আবহাওয়া বলছে বৃষ্টি আরও হতে পারে।
ফলে মূলপর্বের বাকি ১৬ ম্যাচে থেকে যাচ্ছে অনিশ্চয়তা। অবশ্য মূলপর্বের খেলায় কোনো রিজার্ভ ডে থাকলে হয়তো প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু সে সুযোগ একদমই নেই। শুধু সেমিফাইনাল এবং ফাইনালের জন্য রাখা হয়েছে রিজার্ভ ডে। ফলে মূলপর্বে বৃষ্টিতে কোনো ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে, অংশ নেওয়া দু’দল পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নিবে।
তবে মূলপর্ব শেষে পয়েন্ট সমান হলে, সেমিফাইনালে উঠতে দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছে কোন দল, সেটি দেখা হবে। জয়ও সমান হলে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকা দল পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার টিকিট পাবে। নেট রান রেটও সমান হলে মূলপর্বে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা দলই পরবর্তী রাউন্ডে উত্তীর্ণ হবে। আবার সেখানেও সমান হলে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আইসিসির ঘোষিত দলগুলোর বাছাই অনুযায়ী অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।
বর্তমানে গ্রুপ ‘এ’ এর শীর্ষ দল নিউজিল্যান্ড। দুই ম্যাচ খেলে ৩ পয়েন্ট অর্জন করেছে কিউইরা। একটি জয় আরেকটিতে পয়েন্ট ভাগ করে নিতে হয়েছে। রান রেট ৪.৪৫০। আর তালিকার শেষে আছে আফগানিস্তান। তিন ম্যাচে এক পরাজয় আর দুটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ায় তাদের পয়েন্ট ২। গ্রুপ ‘বি’ এর শীর্ষ দল ভারত। ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্টসহ ১.৪২৫ রান রেট তাদের। আর এই গ্রুপের তলানিতে আছে নেদারল্যান্ডস। ২ ম্যাচ খেলে দুটিতেই হেরেছে ডাচরা।