মিথুন আশরাফ – মিথুন আশরাফ – কী উত্তেজনা, কী প্রতিদ্বন্দ্বিতা, রুদ্বশ্বাস এক ম্যাচই দেখার মিলল। একবার মনে হয় বাংলাদেশ জিতবে। আরেকবার মনে হয় জিম্বাবুয়ে জিতবে। শেষে তো বাংলাদেশের আগেভাগে জয় উৎসব যখন হচ্ছে, উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের ভুলে তখন ‘নো’ বল নাটকও হয়। অবশেষে শেষ বলে গিয়ে ৩ রানে জিতল বাংলাদেশই।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে প্রথমবার লড়াই করে। প্রথমবারেই জিম্বাবুয়েকে হারাল বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে হারানোর পর বাংলাদেশকেও উড়িয়ে দিবে, এমন হুমকিই দিচ্ছিলেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা। কিন্তু ব্যাট হাতে নাজমুল হোসেন শান্ত (৫৫ বলে ৭১ রান) ও বল হাতে দুই পেসার তাসকিন আহমেদ (৩/১৯) ও মুস্তাফিজুর রহমানের (২/১৫) সাথে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (২/৩৪) বোলিং ঝলক দেখালেন, শেষে সাকিব আল হাসানেরও অসাধারণ বোলিংয়ে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। জিতল বাংলাদেশ। তাতে করে দুই ম্যাচ জিতে পয়েন্ট তালিকায় ৪ পয়েন্ট যোগ করল বাংলাদেশ।
ব্রিসবেনে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। ৫৫ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় করা ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর ৭১ রানের ধুমধারাক্কা ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫০ রান করে বাংলাদেশ। আফিফ হোসেন ধ্রুব ১৯ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ২৯ রান এবং সাকিব আল হাসান ২০ বলে ১ চারে ২৩ রান করেন। এনগারাভা ও মুজারাবানি ২টি করে উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৪৭ রান করে জিম্বাবুয়ে। ব্যাট হাতে শন উইলিয়ামস ৬৪, রায়ান বার্ল অপরাজিত ২৭, রাগিস চাকাভা ১৫ রান করেন। বল হাতে তাসকিন ৩ টি, মুস্তাফিজ ও সৈকত ২টি করে উইকেট শিকার করেন।
বাংলাদেশের ইনিংসে তৃতীয় উইকেটে শান্ত ও সাকিব মিলেই আসলে কাজের কাজটি করেছেন। দুইজন মিলে ৫৪ রানের জুটি গড়েছেন। এ বিশ্বকাপে ৫০ রানের উপরে জুটি হলো। চার নম্বর উইকেটে শান্ত ও আফিফ মিলেও ৩৬ রানের জুটি গড়ে অনেক এগিয়ে দেন। আর পঞ্চম উইকেটে সেই ধারাটা বজায় রাখেন আফিফ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ২৫ রানের জুটি গড়ে।
সেই তুলনায় জিম্বাবুয়ে ৬৯ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে। তবে ষষ্ঠ উইকেটে খানিক আতঙ্ক ধরিয়ে দেয়। শন উইলিয়ামস ও রায়ান বার্ল মিলে সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন। দলকে অনায়াসেই ১০০ রানের উপরে নিয়ে যান। জয়ের আশাও জাগিয়ে তোলেন। শেষ ১৮ বলে ৪০ রান লাগে। ১২ বলে জিততে ২৬ রান লাগে। উইলিয়ামস হাফসেঞ্চুরি করে আতঙ্ক হয়ে উঠেছিলেন। এমন সময়ে সাকিব বোলিং করতে এসে ১৯.৪ ওভারে উইলিয়ামসকে (৪২ বলে ৬৪ রান) অসাধারণভাবে রান আউট করে দেন। ৬৩ রানে জুটি ভাঙ্গে। আতঙ্কও যেন দুর হয়ে যায়। ম্যাচও যেন বাংলাদেশের হাতে এসে পড়ে। ৬ বলে জিততে ১৬ রান লাগে।
সৈকত বল করতে আসেন। প্রথম বলে ১ রান দেয় সৈকত। ৫ বলে জিততে ১৫ রান লাগে। দ্বিতীয় বলে ব্রেড ইভান্সকে আউট করে দেন সৈকত। ৪ বলে জিততে ১৫ রান লাগে। তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে দিয়ে ৪ হয়ে যায়। ৩ বলে জিততে ১১ রান লাগে। ছক্কা হাকান এনগারাভা। খেলা আবার জিম্বাবুয়ের হাতে চলে যায়। ২ বলে জিততে ৫ রান লাগে। স্ট্যাম্পিং আউট হয়ে যান এনগারাভা। খেলায় চরম উত্তেজনা দাড় হয়। ১ বলে জিততে লাগে ৫ রান। শেষ বলে মুজারাবানিও স্ট্যাম্পিং হয়ে যান। তাতে করে ২০ ওভার শেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশও ৪ রানে জিতে যায়। এমনই মনে করা হয়। উৎসবও শুরু হয়ে যায়। সবাই মাঠ থেকে বেরও হয়ে যান। কিন্তু বলটি নো হয়ে যায়! কারণ, স্ট্যাম্পিং হয়েছেন মুজারাবানি, তা আম্পায়ার নিশ্চিত না করার আগেই উৎসবে মেতে ওঠেন বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। মাঠও ছাড়েন। কিন্তু আম্পায়ার যখন টিভি রিপ্লেতে দেখল, তখন দেখা গেল বাংলাদেশ উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান স্ট্যাম্পের আগে থেকে বলটি ধরে স্ট্যাম্পিং করেছেন। তাতে ‘নো’ বল ডাকা হয়। কী অবাক করা বিষয়। ১ বলে জিততে ৪ রান লাগে জিম্বাবুয়ের। হারের সম্ভাবনায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। শেষে বেচে যায় বাংলাদেশ। রান নিতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। এবার সোহানও স্ট্যাম্পিংয়ের সুযোগ পেয়েও আর ভুল করেননি। স্ট্যাম্পেই বল লাগাননি। অনেকক্ষন অপেক্ষা করেছেন। বাংলাদেশের জয় হয়েছে। রায়ান বার্ল ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এরআগে ওয়ানডেতে ৮১টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। দুই দলের মধ্যকার টি-টোয়েন্টি লড়াই হয়েছে এরআগে ১৯ বার। সেই ১৯৯৭ সাল থেকে ওয়ানডে এবং ২০০৬ সাল থেকে দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলে। কিন্তু কখনোই এই দুই দলের মধ্যকার বিশ্বকাপে কোন লড়াই দেখার মিলেনি। এবার প্রথমবারের মতো লড়াই হয়। প্রথম লড়াইয়েই জিম্বাবুয়েকে হারাতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই আশা পূরণ হয়। তাতে করে বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে অন্তত নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের যে আশা তৈরী হয়েছিল, তা পূরণ হয়। এখন কোনভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার কোন দলকে হারাতে পারলে অসাধারণ বিশ্বকাপ কাটাতে পারবে বাংলাদেশ। এমনটি বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার আশাও জাগে। যদি শেষ দুই ম্যাচে ভারত ও পাকিস্তানকে হারানো যায়, তাহলে শেষ চারে খেলাও হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম মনে করেছিলেন, সুপার টুয়েলভে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় জয় তুলে নিতে পারলে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। সুপার টুয়েলভের শেষ দুই ম্যাচে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে তা কাজে লাগবে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় মিলে গেছে। এখন সামনের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার পালা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে জিম্বাবুয়েকে অপরাজিত থাকতে দিল না বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়ে চমক জাগিয়েছিল। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটিতে হারতে পারত। কিন্তু বৃষ্টিতে শেষপর্যন্ত খেলাই হয়নি। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটারদের। তাতে করে বাংলাদেশকে হারানোর হুমকিও দিতে থাকে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা।
জিম্বাবুয়ে দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সিকান্দার রাজাতো হুমকিই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের এখানে কিছু অর্জন করার সুযোগ আছে। আমি সেমিফাইনাল নিয়ে এখনই চিন্তাভাবনা করছি না। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলে এগিয়ে যাচ্ছি। এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটিতে নজর দিচ্ছি এবং ম্যাচটি জিততে চাই।’ বোঝাই যাচ্ছে, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। কিন্তু তা আর কাজে লাগল না। জিম্বাবুয়েকে এরআগে টি-টোয়েন্টিতে যে ১৯ ম্যাচের মধ্যে ১২বারই হারিয়েছিল বাংলাদেশ, এবার আরেকটি জয় বাড়িয়ে নিল। সাথে বিশ্বকাপে দুই দলের প্রথম লড়াইয়ে জয় তুলে নিল বাংলাদেশই।