Search
Close this search box.

জয়ের কাছে গিয়েও ভারতকে হারিয়ে অঘটন ঘটাতে পারল না বাংলাদেশ

ভারতকে হারিয়ে অঘটন ঘটাতে পারল না বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ – ওপেনার লিটন কুমার দাস যতক্ষন ব্যাটিংয়ে ছিলেন, ততক্ষন বাংলাদেশের জয়ের আশা ছিল। যেই বৃষ্টি এসে খেলা বন্ধ রাখার পর আবার শুরু হলো। ছন্দপতন হলো। লিটন আউট হয়ে গেলেন। বাংলাদেশও যেন জয়ের আশা থেকে ছিটকে পড়ল। শেষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে ভারতের কাছে জিততে জিততে হেরে গেল বাংলাদেশ। আশা ছিল ভারতকে হারিয়ে অঘটন ঘটানোর। কিন্তু তা করা গেল না। জয়ের কাছে গিয়েও ভারতকে হারিয়ে অঘটন ঘটাতে পারল না বাংলাদেশ। এ্যাডিলেডে বৃষ্টি আইনে ৫ রানে হারে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে জয়ে সেমিফাইনালে পথে পাঁ দিয়ে রাখল ভারত। আর ম্যাচটিতে হেরে সেমিফাইনালে ওঠার পথ কঠিন হয়ে গেল বাংলাদেশের। ভারতকে সহজেই জিততে দেয়নি বাংলাদেশ।

ম্যাচটিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিং নেয় বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৮৪ রান করে ভারত। বিরাট কোহলির করা ৪৪ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ৬৪ রানের ইনিংসের সাথে ওপেনার লোকেশ রাহুলের ৩২ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় করা ৫০ রানের ইনিংসে এ বিশাল রান করে ভারত। সূর্য্যকুমার যাদবের ব্যাট থেকে আসে ৩০ রান। বল হাতে পেসার হাসান মাহমুদ ৩টি ও সাকিব আল হাসান ২টি উইকেট শিকার করেন।

জবাব দিতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬ ওভারে ১৪৫ রান করে জয়ের কাছে গিয়ে হারে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ওপেনার লিটন কুমার দাস ৬০ রান করেন। নুরুল হাসান সোহান অপরাজিত ২৫ ও তাসকিন আহমেদ অপরাজিত ১২ রান করেন। বল হাতে আর্শদ্বীপ সিং ও হার্দিক পান্ডিয়া ২ উইকেট করে শিকার করেন। বাংলাদেশের ইনিংসে ৭ ওভারের সময় বৃষ্টি আসলে বাংলাদেশের ইনিংস ১৬ ওভারে হয়। জিততে ১৫১ রান লাগে বাংলাদেশের। কিন্তু জয়ের কাছে গিয়েও পারেনি বাংলাদেশ।

পাওয়ার প্লেতে অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। আসলে শান্ত ধরে খেলেছেন। আর লিটন মারমুখি ব্যাটিং করেছেন। এমনই ব্যাটিং করেছেন লিটন, ২১ বলেই ৬ চার ও ৩ ছক্কায় হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই স্কোরে ৫০ রান হয়ে যায়। পাওয়ার প্লেতে ৬০ রান করে বাংলাদেশ। এরমধ্যে লিটনই ৫৬ রান করে ফেলেন। শান্তর ব্যাট থেকে আসে তখন ৪ রান। সপ্তম ওভারে গিয়ে যখন লিটন ৫৯ ও শান্ত ৭ রানে এবং দলের রান ৬৬, দ্রুত রান স্কোরে যোগ হচ্ছে, তখন আসে বৃষ্টি। খেলা থেমে থাকে। খেলা শুরু হওয়ার পর ছন্দপতন হতে পারে। সেই শঙ্কা থাকে। তাই হয়। আধঘন্টা পর যখন খেলা শুরু হয়, লিটন (৬০) রান আউট হয়ে যান। দলের ৬৮ রানে গিয়ে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে আউট হন লিটন। লোকেশ রাহুল অসাধারণভাবে রান আউট করেন। ২৭ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৬০ রান করে আউট হন লিটন। খেলায় রানের গতিতেও টান পড়ে যায়।

এরআগে ম্যাচে ৪ ওভার কমে। ১৬ ওভারে জিততে বাংলাদেশের টার্গেট দাড়ায় ১৫১ রান। বৃষ্টির আগে বাংলাদেশ ৭ ওভারে ৬৬ রান করে। তাতে করে শেষ ৯ ওভারে বাংলাদেশের জিততে ৮৫ রান লাগে। লিটন আউটের পর শান্ত মারমুখি হন। লিটন যখন আউট হন, তখন ১৬ বলে ৭ রানে ছিলেন লিটন। সেখান থেকে ১ চার ও ১ ছক্কায় ২৫ বলে ২১ রান করে আউট হয়ে যান শান্ত। জিততে হলে ধুন্ধুমার ব্যাটিং ছাড়া কোন গতি নেই। তাই করেন শান্ত। জিততে ৪২ বলে ৬৭ রান লাগে বাংলাদেশের। এমন সময়ে দলের ৮৪ রানে গিয়ে শান্তকে আউট করে দেন মোহাম্মদ শামি। ১০ ওভারে গিয়ে ৮৮ রান করে বাংলাদেশ। ৬ ওভারে জিততে বাংলাদেশের দরকার থাকে ৬৩ রান।  ১০০ রান হওয়ার আগে ৯৯ রানে গিয়ে আফিফ হোসেন ধ্রুবও (৩) আউট হয়ে যান।

দ্রুত আরও ২টি উইকেট পড়ে যায়। দলের স্কোরে ১০০ রান হতেই সাকিব আল হাসান (১৩) ও আরও ২ রান যোগ হতেই ইয়াসির আলী রাব্বি (১) আউট হয়ে যান। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও (৬) কিছুই করতে পারেননি। ২০ বলে জিততে যখন ৪৩ রান লাগে। তখন আউট হন সৈকত। মারা ছাড়া আর কোন গতি নেই। এমন সময়ে উইকেট পড়াও স্বাভাবিক। কিন্তু  রান নেয়া যাচ্ছিল না। আর রান না নিলে জেতা কঠিনই। ১২ বলে যখন ৩১ রান দরকার, তখন তাসকিন চার ছক্কা হাকিয়ে আশার বেলুন ওড়ান। ১৫তম ওভারে ১১ রান আসে। তাতে করে শেষ ৬ বলে জিততে ২০ রান লাগে। ২ উইকেট আগেই নেয়া আর্শদ্বীপ সিং বোলিংয়ে থাকেন। প্রথম বলে তাসকিন ১ রান নেন। নুরুল হাসান সোহান কী পারবেন ৫ বলে দরকার থাকা ১৯ রান নিতে? দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাকিয়ে দেন সোহান। উত্তেজনা তৈরী হয়। ৪ বলে জিততে ১৩ রান লাগে। তৃতীয় বলে ১ রান হয়। ৩ বলে জিততে লাগে ১৩ রান। চতুর্থ  বলে ২ রান নেয়া যায়। ২ বলে দরকার থাকে ১১ রান। পঞ্চম বলে বাউন্ডারি হাকান সোহান। ১ বলে জিততে লাগে ৭ রান। ছক্কা মারলে টাই হবে। আর যদি একটা নো বল এবং ছক্কা হয়, তাহলে জয় হবে। ১ রান হয়। তাতে ৫ রানে হার হয়। ১৪৫ রান করতে পারে বাংলাদেশ। সোহান অপরাজিত ২৫ ও তাসকিন অপরাজিত ১২ রান করার সাথে সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৩৭ রানের জুটি গড়েন।

পাওয়ার প্লেতে ভারত খুব বেশি রান করতে পারেনি। ৩৭ রান করতে পেরেছে। রোহিত শর্মা এরমধ্যে একবার নতুন জীবন পেয়েও দ্রুত আউট হয়ে গেছেন। কিন্তু এরপর রাহুল ও কোহলি মিলে যে চার-ছক্কা হাকাতে থাকেন, দ্রুত রান স্কোরে জমা হতে থাকে। দুইজন মিলে ৬৭ রানের জুটি গড়েন। এরমধ্যেই রাহুল এমনই ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করেন, ৩১ বলেই ৫০ রান করে ফেলেন। দলের ৭৮ রানে গিয়ে রাহুল আউট হন। তবে কোহলিকে আর আউটই করা যায়নি।

প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৮৬ রান করে ভারত। শেষ ১০ ওভারে ৯৮ রান করে। কোহলি ৩৭ বলে ৫০ রান করার পর ৬৪ রানেও অপরাজিত থাকেন। টি-২০ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান এখন বিরাট কোহলির। নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে এসে এক হাজারের বেশি রান করেছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। ভেঙেছেন মাহেলা জয়াবর্ধনের ১ হাজার ১৬ রানের রেকর্ড।  দলকে ১৮৪ রানে নিয়ে যান। মাঝপথে ব্যাটিং ঝড় তুলেন সূর্য্যকুমার যাদব। ১৬ বলে ৪ চারে ৩০ রান করে আউট হন। দলকে ১১৬ রানে নিয়ে যাওয়ার পর সূর্য্যকুমার আউট হওয়ার পর আরও ৩টি উইকেট পড়ে। তবে রানের গতি কমেনি। কোহলি যে ধুন্ধুমার ব্যাটিং করতে থাকেন। বাংলাদেশের সামনে ১৮৫ রানের টার্গেট কম নয়। এত বড় টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে জয়ের কাছে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর পারা যায়নি।

বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান অঘটন ঘটানোর আশায় ছিলেন। ম্যাচটির আগে তিনি বলেছিলেন, ভারত টুর্নামেন্ট জিততে এসেছে, বাংলাদেশ আসেনি। আমরা তাদের (ভারতের) বিপক্ষে জিততে পারলে সেটা আপসেট হিসেবেই গণ্য হবে। আর আমরা সেই আপসেটটা ঘটাতে চাই।’ কিন্তু আপসেট ঘটানো গেল না। শুরুটা যেভাবে হয়েছিল, মনে হয়েছিল কিছু একটা করে ফেলতে পারে বাংলাদেশ। শেষেও জয়ের আশা টিকে থাকে। কিন্তু জয়ের কাছে গিয়েও ভারতকে হারিয়ে অঘটন ঘটাতে পারল না বাংলাদেশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ