মিথুন আশরাফ – দুর্ভাগ্য আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসির। বিশ্বের সেরা ফুটবলার তকমা নিয়েও একবারও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে পারেনি। রানার্সআপ হয়েছে। এবার আজ শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপে সেরা দল ধরা হচ্ছে আর্জেন্টিনাকে। তাহলে কী এবার মেসির হাতে উঠবে শিরোপা? ১৯৮৬ সালের পর, ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনাকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করতে পারবেন মেসি?
মেসিকে নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। এ বিশ্বকাপেই যে সেরাটা দেয়ার শেষ সুযোগ! এরপর বিশ্বকাপে খেললেও একইরকম ধারাবাহিকতা কী আর থাকবে? তবে ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার নেইমার ও পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও কিন্তু আলোচনায় ভালোভাবেই আছেন। মেসি বিশ্বকাপের শিরোপার কাছে যেতে পেরেছেন একবার। নেইমার ও রোনাল্ডো সেই সুযোগ পাননি কখনও।
ব্রাজিল সবশেষ যখন ২০০২ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়, তখন নেইমার দলেই ছিলেন না। এরপর আর কখনো ফাইনালে খেলা হয়নি ব্রাজিলের। ২০ বছরের আক্ষেপ এবার ঘুচবে। সেই আশা করা হচ্ছে। যদি তা হয়, তাহলে প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার খেতাব নিজের করে নিতে পারবেন নেইমার।
রোনাল্ডো শিরোপা উচিয়ে ধরবেন, সেই আশা আসলে তেমনভাবে করা হচ্ছে না। কখনোই পর্তুগাল ফেভারিট তালিকায় ছিল না। এইবারও নেই। তবে শেষপর্যন্ত বলা যায় না কিছুই। হলেও হয়ে যেতে পারে। কখনোই বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে পারেনি রোনাল্ডোর দল পর্তুগাল। একবার ১৯৬৬ সালে তৃতীয় হয়েছিল পর্তুগাল। এরপর ২০০৬ সালে যখন সেমিফাইনালে খেলে পর্তুগাল, তখন রোনাল্ডো দলে ছিলেন। কিন্তু দলকে ফাইনালে তুলতে পারেননি। সেইরকম সুযোগ যদি এবার মিলে যায়, তাহলে কে জানে ফাইনালে উঠে শিরোপা জয়ও হয়ে যেতে পারে।
লিওনেল মেসি অবশ্য নিজ দলকে ফেভারিট মানছেন না। তিনি বলেছেন, ‘এখন সব দলের বিপক্ষে খেলাই কঠিন। (বিশ্বকাপে) সব দলকে হারানোই কঠিন হবে। আমরা ফেবারিট তকমার ফাঁদে পা দিতে রাজি না। আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে এবং ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমরা (শিরোপার জন্য) লড়াই করব। এটাই লক্ষ্য। তবে সবার আগে প্রথম ম্যাচটা জিততে হবে। মেসি হওয়ার কিছু খারাপ দিক আছে, আমার কখনও কখনও মনে হয় যদি এত জনপ্রিয় না হতাম। আমি আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকতে পছন্দ করি না অথবা মনে হয় না মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে থাকুক। কিন্তু আমি এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ মিশন শুরু হবে ২২ নভেম্বর। গ্রুপ পর্বে সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্বে ২৬ নভেম্বর মেক্সিকো ও ৩০ নভেম্বর পোল্যান্ডকে হারিয়ে নকআউট পর্বের সব ম্যাচ জিতবে আর্জেন্টিনা, সেই আশাই করা হচ্ছে। সেরা ১৬, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল পেরিয়ে ১৮ ডিসেম্বরের ফাইনালেও জিতে শিরোপা উচিয়ে ধরবেন মেসি, সেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তাই কী হবে? ২০১৯ সাল থেকে অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনা এবার শিরোপা জিততেও পারে।
নেইমারতো ফাইনালে খেলবেন। শিরোপাও জিতবেন। এমনই আশা করেছেন। তাও আবার আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে হারিয়েই শিরোপা জেতার আশা করছেন। মেসিকে নাকি এমন বলেছেনও নেইমার। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ‘আমরা এমনিতে বিশ্বকাপ নিয়ে বেশি কথা বলি না। কিন্তু মাঝে মাঝে আমরা হাসি-ঠাট্টা করি। যেমন, ফাইনালে যদি আমাদের লড়াই হয়, তা হলে কী হবে? আমি তো মেসিকে বলেছি, আমিই চ্যাম্পিয়ন হব আর তোমার বিপক্ষে জিতব। এই নিয়ে দু’জনে হাসাহাসিও করেছি।’
নেইমার আরও বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হল বিশ্বকাপ জেতা। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি ফুটবল খেলাটা কী, তখন থেকেই আমার স্বপ্ন বিশ্বকাপ জেতা। সেই স্বপ্ন সফল করার আর একটা সুযোগ পাচ্ছি। আশা করছি, এ বার স্বপ্নটা সফল হবে।’
গ্রুপ পর্বে ২৪ নভেম্বর সার্বিয়ার বিপক্ষে প্রথম, ২৮ নভেম্বর সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও ২ ডিসেম্বর ক্যামেরুনের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল। গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে সেরা ১৬, এরপর কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল জিতে ফাইনালেও জিতে চ্যাম্পিয়ন হবে ব্রাজিল। সেই আশা করেছেন নেইমার।
রোনাল্ডো অবশ্য শিরোপা জিতবেন, সেই কথা বলেননি। তবে জিতলে অবসর নিয়ে ফেলবেন, সেটা জানিয়ে দিয়েছেন। গ্রুপ পর্বে প্রথমেই ২৪ নভেম্বর ঘানার বিপক্ষে, ২৮ নভেম্বর উরুগুয়ের বিপক্ষে ও ২ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে লড়াই করবে পর্তুগাল। পর্তুগালের পথ সহজ নয়। কঠিনই। গ্রুপ পর্বেই বাঁধা থাকছে। রোনাল্ডো বলেছেন, ‘পর্তুগাল বিশ্বকাপ জিতলে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেব।’ এবারের আসরে পর্তুগাল ফেভারিট নয় স্বীকার করে রোনাল্ডো বলেন, ‘তারপরও আমি খুব আশাবাদী। কারণ, আমাদের একজন দুর্দান্ত কোচ রয়েছে এবং আমাদের একটি ভাল প্রজন্মের ফুটবল খেলোয়াড় রয়েছে।’