মিথুন আশরাফ – কী ঘটবে? শেষপর্যন্ত কী হবে? মেসির আর্জেন্টিনা কী মেক্সিকোকে হারিয়ে টিকে থাকবে? নাকি উল্টো হেরে বিদায় নেবে? সবার মধ্যেই চিন্তা ছিল। কিন্তু আপাতত চিন্তা দুর করে দিল মেসির আর্জেন্টিনা। মেক্সিকোর বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতে স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল মেসির আর্জেন্টিনা। গোল করেন মেসি ও ফার্নান্দেজ।
লুসাইল স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে কোন গোল হয়নি। অনেক চেষ্টা করেও গোল দিতে পারেনি মেসির দল। কয়েকবার গোল করার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। উল্টো ফাওলের ছড়াছড়ি হয়। ১৬টি ফাউল হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। ৬৪ মিনিটে গোল করেন মেসি (১-০)। ডি বক্সের বাইরে বল পেয়েই বারে দুরপাল্লার শট করেন। গোলকিপারও ঠেকাতে পারেননি। দলের ত্রাতা হয়ে যেন আবির্ভূত হন। একটি গোল খুব দরকার ছিল। না হলে যে ভয় ছিল। অশান্তি ছিল। মেসি শান্তি এনে দেন।
খেলার ৮৭ মিনিটে গিয়ে এঞ্জো ফার্নান্দেজ গোল করে আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত করে দেন। ২-০ গোলে এগিয়ে জয়ের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে যায় আর্জেন্টিনা। মেসি শান্তি এনে দেন। সেই শান্তি নিয়ে আরো আক্রমাত্মক হয়ে ওঠে আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা। শেষ কাজের কাজটি করে দেন ফার্নান্দেজ।
সৌদি আরবের কাছে ম্যাচটিতে হেরেই বিপদে পড়ে যায় লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। এ বিপদ দুর করতে একটাই পথ খোলা ছিল। হাতে থাকা দুই ম্যাচ জিততে হবে। যে কোন একটি ম্যাচ হারলেই বিদায় ঘন্টা বেজে যাবে আর্জেন্টিনার। মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচটি এরমধ্যে একটি ছিল। পথের প্রথম কাটা সরানো গেল। এখন ৩০ নভেম্বর পোল্যান্ডকে হারানো গেলেই হয়ে গেল। সেরা ১৬ নিশ্চিত হয়ে যাবে।
মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচটিতে খেলতে নামার আগে আবার মেসি চোটও পেয়েছিলেন। বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই ইনজুরির তালিকা লম্বা হতে থাকে আর্জেন্টিনার। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে হেরে হতাশা আরও বাড়ে দলটির। দুঃসংবাদ আরও বাড়ে। লিওনেল মেসি অনুশীলনের সময় পায়ের পেশিতে ব্যথা অনুভব করেন। এরপরও খেলতে নামেন মেসি। দলকেও জেতান।
ম্যাচের আগে অবশ্য ডিয়াগো ম্যারাডোনার মৃত্যুবার্ষিকীতে শুক্রবার শপথ নেন আর্জেন্টিনা ফুটবলাররা! ড্রেসিংরুমে অধিনায়ক মেসি উদ্দীপ্ত করেন ফুটবলারদের। সবকিছুকে পেছনে ফেলে জায়ান্ট কিলার মেক্সিকোকে হারিয়ে নতুনভাবেই শুরু করতে চেয়েছিল আর্জেন্টিনা। দলের প্রত্যেকেই কাপ জিতে ম্যারাডোনাকে উৎসর্গ করতে তৈরি হয়ে যায়। আর তাই ড্রেসিংরুমে অনুশীলনের পর ডি মারিয়া, পরেদেস, ডে পল, মার্টিনেজদের উদ্দেশ্যে পাঁচ মিনিটের বক্তব্য রেখেছেন মেসি। সেখানে তিনি জানিয়েছেন আর্জেন্টিনা মরে যাইনি এটা মাঠে নেমে তাদের প্রমাণ করতে হবে। মেক্সিকো এবং পোল্যান্ড ম্যাচ জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবনা নেই আর্জেন্টিনার। তা হয়েই গেল। মেক্সিকো হারিয়ে দিল মেসির আর্জেন্টিনা। স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল।
ফিফা র্যাংকিংয়ে মেক্সিকো থেকে ১০ ধাপ এগিয়ে থাকে আকাশী-সাদা জার্সিধারীরা। র্যাংকিংয়ে আর্জেন্টিনা ৩-এ আর মেক্সিকো ১৩-তে রয়েছে। তাই দল হিসেবে মেক্সিকো মোটেই দুর্বল ছিল না। কিন্তু আর্জেন্টিনা জিতে এগিয়েই থাকল।
আর্জেন্টিনা ১৭ ম্যাচে ১১ জয় আর ৬ ড্রয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে উত্তীর্ণ হয়। অন্যদিকে মেক্সিকো ১৪ ম্যাচের মধ্যে ৮ ম্যাচে জয়, ৪ ম্যাচে ড্র করে বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নেয়। দুই দলের মোট ৩৫ বারের দেখায় লে আলবিসেলেস্তেরা ১৬ ম্যাচে জয় পায় আর এল ট্রিরা জিতে পাঁচবার। ড্র হয় ১৪ ম্যাচে। এবার আরেকটি জয় বাড়িয়ে নিল আর্জেন্টিনা। সবশেষ দুই দলের দেখা হয়েছে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। এই প্রীতি ম্যাচে মেক্সিকানদের ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে আর্জেন্টাইনরা। হ্যাটট্রিক করেন লতারো মার্টিনেজ। অন্যদিকে বিশ্বমঞ্চের পরিসংখ্যানও মেসিদের পক্ষেই কথা বলে। বিশ্বকাপে মেসিদের একবারও হারাতে পারেনি কোচ টাটা মার্তিনোর দল। তিনবারের দেখায় প্রতিবারই জিতেছে দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। সবশেষ, দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপেও শেষ ষোলোর ম্যাচে মেক্সিকোকে ৩-১ গোল ব্যবধানে হারিয়েছে আর্জেন্টাইনরা। এবার মরুর বুকে প্রথম বিশ্বকাপেও শেষ পর্যন্ত মেসিদের স্বস্তির জয় মিলে। মেক্সিকোকে হারিয়ে আর্জেন্টিনার স্বপ্ন বাঁচিয়েও রাখলেন মেসি ও ফার্নান্দেজ।