Search
Close this search box.

আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল আজ কোয়ার্টারে জিতলে সেমিতে মেসি ও নেইমারের স্বপ্নের লড়াই হবে

আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল আজ কোয়ার্টারে জিতলে সেমিতে মেসি ও নেইমারের স্বপ্নের লড়াই হবে

মিথুন আশরাফ – কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে আজ কোয়ার্টার ফাইনাল পর্ব শুরু হচ্ছে। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা ও নেইমারের ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ খেলতে নামবে আজ। বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টায় প্রথমে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিল খেলবে। রাত ১ টায় এরপর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা খেলবে। যদি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল নিজেদের কোয়ার্টার ফাইনালে জিতে, তাহলে সেমিফাইনালে উঠে যাবে। আর সেমিফাইনালে উঠলেই আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মধ্যকার শেষ চারে লড়াই হবে। তাতে করে মেসি ও নেইমারের মধ্যকারও লড়াই দেখার মিলবে। যেটাকে বিশ্বকাপের স্বপ্নের ম্যাচও বলা হয়। সেই ম্যাচটিই দেখার মিলবে।

আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মধ্যে সেমিফাইনাল হলে এটাও নিশ্চিত হয়ে যাবে কোনভাবেই বিশ্বকাপের ফাইনালে দুই দলের লড়াই দেখার সুযোগ থাকছেনা। ফুটবল বিশ্বকাপে কখনোই আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে লড়াই হয়নি। এবারও তা হচ্ছে না।

এবার বিশ্বকাপের ২২তম আসরে শুরুতেই হোচট খায় আর্জেন্টিনা। সৌদি আরবের কাছে হেরে যায়। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়ার শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। সৌদি আরবের কাছে ১-২ গোলে হেরে যায়। এরপর যে ঘুরে দাড়ায় আর্জেন্টিনা, মেসির ছন্দে শুধু জিতেই চলেছে। শেষ ষোলতে নাম লেখাতে হলে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডকে হারাতেই হতো আর্জেন্টিনাকে। দুই দলকেই ২-০ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা। দাপটের সঙ্গেই জিতে। ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের গ্রুপ সেরা হয়েই শেষ ষোলতে খেলতে নামে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও জয় পায়। অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। এখন লুসাইল স্টেডিয়ামে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে লড়াই করবে আর্জেন্টিনা। ম্যাচটিতে জিতলেই সেমিফাইনালে উঠে যাবে মেসির আর্জেন্টিনা।

ব্রাজিলতো ইনজুরিতে পড়ার নেইমার, দানিলোর সঙ্গে অনেকগুলো ফুটবলারকে ছাড়া গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে খেলতে নেমে ক্যামেরুনের কাছে হেরে যায়। মনে করা হচ্ছিল, শেষ ষোলতেও নেইমার, দানিলো খেলতে পারবেন না। তাতে করে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে না আবার হেরে যায় ব্রাজিল। কিন্তু না। নেইমার, দানিলো খেললেন এবং ব্রাজিল ৪-১ গোলে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নেয়। দক্ষিণ কোরিয়াকে বিধ্বস্ত করে, দাপট দেখিয়ে জিতে ব্রাজিল।

গ্রুপ পর্বেও প্রথম দুই ম্যাচে দাপট দেখায় ব্রাজিল। ব্রাজিল প্রথম দুটি ম্যাচেই জিতে। তাতে করে শেষ ষোলতে খেলা নিশ্চিত করে ফেলে। সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারানোর পর সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়েই শেষ ষোলতে খেলা নিশ্চিত করে। তবে ক্যামেরুনের কাছে ০-১ গোলে হেরে যায়। ৬ পয়েন্ট নিয়ে তবুও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে গ্রুপ সেরা হয়। শেষ ষোলতে দক্ষিণ কোরিয়াকে উড়িয়ে দেয়। এখন ব্রাজিলের সামনে কোয়ার্টার ফাইনালে পড়েছে ক্রোয়েশিয়া। ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যকার কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে লড়াই হবে। ক্রোয়েশিয়াকে হারাতে পারলেই সেমিফাইনাল খেলা নিশ্চিত করবে ব্রাজিল। তাতে করে আর্জেন্টিনা যদি রাতে জিতে, তাহলে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মধ্যে সেমিফাইনাল লড়াই হবে।

এরআগে দুই দল কখনোই সেমিফাইনালে লড়াই করেনি। বিশ^কাপে চার ম্যাচ খেলেছে। তবে ১৯৯০ সালের পর দুই দলের মধ্যকার কখনোই বিশ^কাপে লড়াই দেখার মিলেনি। চার ম্যাচের মধ্যে আবার ব্রাজিল দুটি ও আর্জেন্টিনা একটি ম্যাচ জিতে। একটি ম্যাচ হয় গোলশূন্য ড্র। সবশেষ ডিয়োগো ম্যারাডোনার সময়ে ১৯৯০ সালে শেষ ১৬’র খেলায় ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিদায় করেছিল আর্জেন্টিনা। এই একটি জয়ই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে পায় আর্জেন্টিনা। এছাড়া দ্বিতীয় রাউন্ডে ১৯৮২ সালে ৩-১ গোলে ও ১৯৭৪ সালে ২-১ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারায় ব্রাজিল। ১৯৭৮ সালের ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়।

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে যদি জিতে ব্রাজিল, তাহলে প্রথমবারের মতো বিশ^কাপের সেমিফাইনালে খেলা হবে নেইমারের। ২০১৪ সালের পর আবার সেমিফাইনালে খেলা হবে ব্রাজিলেরও। নেইমার ২০১৪ সালে ব্রাজিলের দলে ছিলেন। সেবার সেমিফাইনালে খেলে ব্রাজিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেমিফাইনালে খেলা হয়নি নেইমারের। দলে থাকলেও কোয়ার্টার ফাইনালে ইনজুরিতে পড়ে যান। ছিটকে পড়েন। আর তাই সেমিফাইনাল খেলা হয়নি নেইমারের। এবার যদি উঠতে পারেন, তাহলে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে খেলার স্বাদ পাবেন নেইমার।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে যদি জিতে আর্জেন্টিনা, তাহলে ২০১৪ সালের পর আবার সেমিফাইনালে খেলার স্বাদ পাবেন মেসি। আর্জেন্টিনা ২০১৪ সালের বিশ^কাপে ফাইনালে খেলে। রানার্সআপ হয়। সেই ১৯৯০ সালের পর দীর্ঘ ২৪ বছর পর আবার ফাইনালে খেলে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। মেসি প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনার হয়ে সেমিফাইনাল, ফাইনাল ম্যাচও খেলেন। কিন্তু নকআউট পর্বে মেসির ঝলক দেখার মিলেনি। এবারতো নকআউট পর্বে জ¦লে উঠেছেন মেসি। একাই যেন দলকে সামনে থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এবার যদি সেমিফাইনালে খেলে আর্জেন্টিনা, তাহলে মেসিও দ্বিতীয়বারের মতো বিশ^কাপের সেমিফাইনালে খেলবেন।

শেষ ষোলতে জাপানের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জিতে ক্রোয়েশিয়া কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। তাতে বোঝা যাচ্ছে, খুব শক্তিশালী দল নয় ক্রোয়েশিয়া। ব্রাজিল সেই তুলনায় অনেক শক্তিশালী দল। ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে দেবে ব্রাজিল, তাই মনে করা হচ্ছে। এরআগে কখনোই ব্রাজিলের বিপক্ষে জিততে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। ৪ ম্যাচের তিনটিতে হেরেছে। একটি ম্যাচ হয়েছে ড্র। আর বিশ^কাপে দুই ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে ক্রোয়েশিয়া।

আর্জেন্টিনার সামনে পথ কঠিন। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে সেমিফাইনাল ম্যাচ হয়েছিল। আর্জেন্টিনাকে টাইব্রেকারে জিততে হয়েছিল। এবারও নেদারল্যান্ডস শক্তিশালী দলই। যুক্তরাষ্ট্রকে ৩-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করেছে নেদারল্যান্ডস। আবার বিশ^কাপে দুই দলই নিজেদের মেলে ধরেছে। পাঁচবার দুই দলের মধ্যকার বিশ্বকাপে লড়াই হয়। আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডস দুইবার করে জিতে। একবার হয় ড্র। ২০০০ সালের পর ২০০৬ ও ২০১৪ সালের বিশ^কাপের খেলা ড্র হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের ম্যাচটি যেহেতু সেমিফাইনাল ছিল, তাই নির্ধারিত ওভারের পর অতিরিক্ত সময়ের খেলাও ড্র হওয়ায় টাইব্রেকার হয়। তাতে জিতে আর্জেন্টিনা। তবে আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা বিশেষ করে সেরা তারকা ফুটবলার মেসি যেভাবে নিজেকে মেলে ধরছেন, তাতে এবার নির্ধারিত মিনিটের খেলাতেই জিতে যাওয়ার আশা আছে আর্জেন্টিনার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ