মিথুন আশরাফ – অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন বাংলাদেশ ওপেনার জাকির হাসান। ২২৪ বলে ১৩ চার ও ১ ছক্কায় ১০০ রান করেছেন। চট্টগ্রাম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি হাকান জাকির। প্রথম ইনিংসে ২০ রান করেছিলেন জাকির। অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরি দিয়ে রাঙিয়ে তুলেছেন জাকির। এমন সেঞ্চুরির পর বাংলাদেশও চতুর্থদিন শেষ করেছে। এখন বাংলাদেশের জিততে লাগবে আরও ২৪১ রান। হাতে আছে ৪ উইকেট। আর একটি দিন।
বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি হাকান জাকির। এরআগে প্রথমে ২০০০ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪৫ রান করেছিলেন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। পরের বছরই অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোয় ১১৪ রানের ইনিংস উপহার দেন মোহাম্মদ আশরাফুল। সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি হাকান। ১১ বছর পর ২০১২ সালে পেস বোলার হয়েও খুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০ নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১১৩ রানের ইনিংসে খেলে ইতিহাস গড়েন আবুল হাসান রাজু। এবার জাকির সেই তালিকায় ঢুকে গেলেন।
প্রথম ইনিংসে ৪০৪ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেটে ২৫৮ রান করে ইনিংস ঘোষনা করে ভারত। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ১৫০ রান করায় সাকিবদের সামনে জিততে ৫১৩ রানের টার্গেট পড়ে। এই টার্গেটে খেলতে নেমে তৃতীয় দিন ১৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন জাকির। চতুর্থদিন ১০১ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন। লাঞ্চের আগেই হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। এরপর যখন দ্বিতীয় সেশন শেষ হয়, তখন জাকিরের স্কোরে জমা থাকে ৮২ রান। তৃতীয় সেশনে গিয়ে ২১৯ বলে ১০০ রান করে ফেলেন জাকির। অভিষেক টেস্টেই ব্যাট উচিয়ে ধরার কৃতিত্ব গড়েন। তবে কিছুক্ষন না যেতেই আর টিকে থাকতে পারেননি। আর ৫ বল খেলতেই রবীচন্দ্রন অশি^নের বলে প্রথম স্লিপে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে বামহাতি এ ওপেনার। তবে অসাধারণ ব্যাটিং করে যান।
জাকির ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে তৃতীয়দিন শেষ করেছিলেন। শান্ত ২৫ রানে ব্যাট করছিলেন। এরপর দুইজন মিলে চতুর্থদিন প্রথম সেশন অনায়াসেই শেষ করেন। ১১৯ রানে কোন উইকেট না হারিয়ে লাঞ্চে যান শান্ত ও জাকির। যখন দ্বিতীয় সেশন শুরু হয় দলের রান ১২৪ হয়, তখন ১০৮ বলে ৫০ রান করার পর ১৫৬ বলে ৬৭ রান করা শান্ত আউট হয়ে যান। এরপর বাংলাদেশের রানের গতি কমে যায়। দেখতে দেখতে ২৩৮ রানের মধ্যে ৬ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ইয়াসির আলী (৫), লিটন কুমার দাস (১৯), সেঞ্চুরিয়ান জাকির, মুশফিকুর রহিম (২৩) ও নুরুল হাসান সোহান (৩) আউট হয়ে যান। এখন উইকেটে আছেন টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান (৪০*) ও মেহেদি হাসান মিরাজ (৯*)। দুইজন মিলে ৩৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭২ রান করেছে। সাকিব ও মিরাজ এবং এরপর তাইজুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ ও এবাদত হোসেনরা যদি হাল ধরতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশ জিতেও যেতে পারে। বিশ^রেকর্ড গড়ে নতুন ইতিহাস রচনা করতে পারে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ১০১তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয় জাকিরের। ২০১৫ সালে অভিষেক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। এ পর্যন্ত ৬৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে ১০৬ ইনিংসে ৪১২৭ রান করেছেন। যেখানে তার ১৪টি হাফ সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ১৩টি সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস অপরাজিত ২১৩ রান। নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন ১৯ বছর বয়সী ক্রিকেটার জাকির হাসান। প্রথমবারের মতো টেস্টে অভিষেক হতেই সেঞ্চুরি হাকিয়ে বসলেন।
ম্যাচ শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো জাকিরকে নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন। ব্যাটিংয়ে জাকিরের রান খোঁজার প্রক্রিয়া তার মনে ধরেছে। দারুণ প্রাণচঞ্চল। আর তাই অভিষেক করান। জাকিরকে অভিষেক ক্যাচ পড়িয়ে দেন টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সবার মান রাখলেন জাকির। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টাইগারদের হয়ে একটি মাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন তরুণ এই ওপেনার। সে ম্যাচে মাত্র ১০ রান করেছিলেন জাকির। এরপর আর জাতীয় দলে দেখা মিলেনি বাঁহাতি এই ব্যাটারের। তবে ফরমেট বদলে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে তার অভিষেক হলো। সেই অভিষেক রাঙিয়ে তুললেন জাকির।