স্পোর্টস রিপোর্টার – বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) বিতর্ক যেন পিছুই ছাড়ছেনা। অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান থাকলে তো কথাই নাই। বিতর্ক যেন থাকবেই। এবার যেমন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচেও বিতর্কে জড়ালেন সাকিব। মাঠে ঢুকে খেলা বন্ধ করে নতুন বিতর্কে জড়ালেন। ম্যাচটিতে শেষপর্যন্ত সাকিবের দল ফরচুন বরিশাল (১৬২/৪; ইব্রাহিম জাদরান ৫২, মেহেদি হাসান মিরাজ ৪৩ রান) ৪ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে জিতেছে। রংপুরকে (১৫৮/৭; শোয়েব মালিক ৫৪*, রনি তালুকদার ৪০ রান) হারিয়ে প্রথম জয় তুলে নিয়েছে। তবে সাকিবের বিতর্কই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জায়গা করে নিয়েছে।
রংপুর ১৫৯ রানের টার্গেট দেয়। টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে যখন বরিশালের দুই ওপেনার চতুরঙ্গ ডি সিলভা ও এনামুল হক বিজয় নেমে ব্যাটিং করতে যান আর বোলার বোলিং করতে আসেন, তখনই আসলে এই বিতর্কের জন্ম হয়। ইনিংসের শুরুতেই ডাগআউটের বাইরে থেকে দুই ব্যাটারকে উঠে আসতে বলেন তিনি। তারা না এলে নিজেই ঢুকে পড়েন মাঠে, আম্পায়ারদের সঙ্গে জড়ান বিতর্কে। প্রায় ৫ মিনিটের মতো খেলাও ছিল বন্ধ। শেষ-মেষ সাকিবকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরত পাঠানো হয়। ঘটনার সূত্রপাত হয় স্ট্রাইক নিয়ে।
নিয়ম অনুযায়ী বোলার ঠিক হওয়ার পর ব্যাটাররা স্ট্রাইট নিয়ে থাকেন। কিন্তু রংপুর রাইডার্স ও ফরচুন বরিশালের ম্যাচে উল্টো ঘটনা ঘটেছে। ইনিংসের প্রথম ওভারে রংপুর রাইডার্সের বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসান বল হাতে তৈরি ছিলেন। কিন্তু স্ট্রাইকে চাতুরাঙা ডি সিলভাকে দেখে অধিনায়ক সোহান বল তুলে দেন অফস্পিনার শেখ মেহেদী হাসানের হাতে। এটা দেখে স্ট্রাইক পরিবর্তন করে ননস্ট্রাইক প্রান্তে চলে যান চাতুরাঙা।
ওই মুহূর্তে আবার রাকিবুলের হাতে বল তুলে দেন সোহান। মাঠের বাইরে থেকে সাকিব আল হাসান বিষয়টি দেখে আপত্তি তোলেন। ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে প্রথমে বাউন্ডারি রোপের সামনে দাঁড়ান সাকিব। সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ব্যাটারদের ইশারায় ড্রেসিংরুমে ফেরার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তখন সাকিবের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান চতুর্থ আম্পায়ার মোজাহিদুজ্জামান। আম্পায়ারকেও বোঝানোর চেষ্টা করেন সাকিব। কিন্তু তাতেও শান্ত দেখাচ্ছিল না বরিশালের অধিনায়ককে। দুই ব্যাটারকে উইকেট থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছিলেন তিনি।
এরপর কাউকে তোয়াক্কা না করে সাকিব নিজেই ঢুকে পড়েন মাঠে। সরাসরি দুই অনফিল্ড আম্পায়ার গাজী সোহেল ও রাভেন্দ্র উইমালসারির সঙ্গে কথা বলেন। তাতে সে সময়ে খুব উত্তেজিতই দেখা যায়। খেলা চলাকালীন মাঠে ঢুকে সাকিব প্রায় ৫ মিনিট খেলা থামিয়ে রাখেন। সেখানে রংপুরের খেলোয়াড়রা জটলা পাকিয়ে ছিলেন। অধিনায়ক সোহানের সঙ্গেও সাকিবকে কথা বলতে দেখা যায়। পরবর্তীতে দুই আম্পায়ারদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এ ব্যাপারে বরিশালের ম্যানেজার সাজ্জাদ আহমেদ শিপন সাকিবের মাঠে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী কোনও বোলার বল করবেন তা ঠিক হওয়ার পর ব্যাটসম্যানরা কে স্ট্রাইক নেবেন তা ঠিক হয়। এক্ষেত্রে শেখ মেহেদীকে বল করতে আসতে দেখে চতুরঙ্গ ডি সিলভার বদলে এনামুল হক বিজয়কে স্ট্রাইকে চাচ্ছিলেন সাকিব। কিন্তু আম্পায়ার সেটার অনুমতি দিতে রাজি হচ্ছিলেন না, এই নিয়ে কথা বলতে মাঠে প্রবেশ করেন তিনি।’ সাকিব অবশ্য ব্যাটিং করতে নামেননি। এ ম্যাচটিতে বরিশালের অধিনায়ক থাকেন সাকিবই। তার নেতৃত্বে দল জিতলেও বিতর্ক তৈরী করেন সাকিব।
আচরণবিধি ভাঙার ঘটনায় শাস্তি পেলেন সাকিব আল হাসান। সাথে নুরুল হাসান সোহান ও এনামুল হক বিজয়ও। ম্যাচ ফির ১৫ শতাংশ জরিমানা গুনতে হবে তিন ক্রিকেটারকেই। পাশাপাশি একটি করে ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের নামের পাশে।
বিপিএলের ফরচুন বরিশাল ও রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচে বিতর্কিত ঘটনায় এই সাজা পেলেন তারা। বিসিবির আচরণবিধির ২.৪ ধারা অনুযায়ী ম্যাচ চলাকালে আম্পায়ারের নির্দেশনা ভঙ্গ করার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব ও রংপুর অধিনায়ক সোহান।
আচরণবিধির ২.৮ ধারা ভঙ্গের দায়ে শাস্তি পেয়েছেন এনামুল, যেখানে আছে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করা।
মাঠের দুই আম্পায়ার গাজী সোহেল ও রবীন্দ্র ভিমালাসারি, তৃতীয় আম্পায়ার মোর্শেদ আলি খান ও চতুর্থ আম্পায়ার মোজাহিদ স্বপ্ন এই অভিযোগ আনেন তিন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে। শাস্তির ঘোষণা দেন ম্যাচ রেফারি আখতার আহমেদ। তিনজনই দোষ স্বীকার করে সাজা মেনে নেওয়ায় আনুষ্ঠানিক শুনানির প্রয়োজন পড়েনি।