মিথুন আশরাফ – ব্যাটিং ও বোলিং দুই দিকেই চট্টগ্রামে সাকিব দ্যুতি দেখা গেছে। আর তাতে করে বাংলাদেশও জিতেছে। ইংল্যান্ডকে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৫০ রানে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়িয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ৭৫ রান করার সঙ্গে বল হাতে ৪ উইকেটও নিয়েছেন সাকিব। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ৩০০ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব গড়েন সাকিব আল হাসান। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে শেষ হয়।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ৪৮.৫ ওভারে তিন হাফসেঞ্চুরিতে ২৪৬ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান ৭৫, মুশফিকুর রহিম ৭০, নাজমুল হোসেন শান্ত ৫৩ রান করেন। জোফরা আর্চার ৩টি, আদিল রশিদ ও স্যাম কারেন ২টি করে উইকেট শিকার করেন। জবাবে ৪৩.১ ওভারে ১৯৬ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। জেমস ভিঞ্চ সবচেয়ে বেশি ৩৮ রান করেন। ফিল সল্ট করেন ৩৫ রান। ক্রিস ওকস ৩৪ রান করেন। ১০ ওভার বোলিং করে ৩৫ রান দিয়ে ৪ উইকেট একাই শিকার করেন সাকিব।
বাংলাদেশের মতো ইংল্যান্ডও ব্যাটিংয়ের শুরুতে বিপত্তিতে পড়ে। ৫৫ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে। সাকিব বোলিং ঝলক দেখান। দুই ওপেনার ফিল সল্ট ও জেসন রয়কে আউট করে দেন। ডেভিড মালানকে সাজঘরে পাঠান এবাদত হোসেন। এরপর চতুর্থ উইকেটে জেমস ভিঞ্চ ও স্যাম কারেন মিলে ৪৯ রানের জুটি গড়ে খানিক এগিয়ে দেন। দলের ১০৪ রান হতেই কারেনকে (২৩) আউট করে দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। কিছুক্ষন যেতেই দলের ১২৭ রানে ভিঞ্চকে (৩৮) আউট করে বাংলাদেশকে জয়ের আশায় নিয়ে যান সাকিব। আর ৩ রান স্কোরে যোগ হতেই মঈন আলীকে যখন আউট করে দেন এবাদত, তখন বাংলাদেশের আশা জেগে যায়।
ভয় ছিল জস বাটলারকে নিয়ে। তাকেও তাইজুল ইসলাম দুর্দান্তভাবে এলবিডাবলিউ করে দেন। দলের ১৫৮ রানে যখন বাটলারও (২৬) আউট হয়ে যান, তখন বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে ম্যাচ। ৭ উইকেট হারিয়ে হারের সম্ভাবনায় পড়ে যায় ইংল্যান্ড। দলের ১৭৪ রানের সময় আদিল রশিদকে আউট করেন তাইজুল। সাকিব বোলিং করতে এসেই রেহান আহমেদকে আউট করে দেন। সাকিব উইকেটটি নিতেই বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেট শিকার করার কৃতিত্ব গড়েন। দলের ১৯৬ রানের সময় ক্রিস ওকসকে (৩৪) আউট করে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। তাতে করে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড।
ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ১৭ রানেই লিটন কুমার দাস (০) ও তামিম ইকবালের (১১) উইকেটটি হারান। তবে এরপর শান্ত ও মুশফিক মিলে দলকে এগিয়ে নেন। ঘুরে দাড়ায় বাংলাদেশ। দুইজন মিলে তৃতীয় উইকেটে ৯৮ রানের জুটিও গড়েন। দলের ১১৫ রান হতেই রান আউট হয়ে যান শান্ত। ৭১ বলে ৫ চারে ৫৩ রান করেন।
শান্ত আউটের পর মুশফিক ও সাকিব মিলে এগিয়ে যেতে থাকেন। তবে খুব বেশিদুর যেতে পারেননি। দলকে ১৫৩ রানে নিতেই হাফসেঞ্চুরি করার পর আরও ২০টি রান নিজের স্কোরবোর্ডে যোগ করে আউট হয়ে যান মুশফিক। এরপর যা করার সাকিবই করেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৮), আফিফ হোসেন ধ্রুব (১৫), মেহেদি হাসান মিরাজ (৫), তাইজুল ইসলাম (২), মুস্তাফিজুর রহমান (০) ব্যাট হাতে নামেন আর আউট হন। মাঝে ষষ্ঠ উইকেটে সাকিব ও আফিফ মিলে ৪৯ রানের জুটি গড়েন। তাতেই কিছুটা ভরসা মিলে। এরপরতো টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে। সাকিব দলকে ২৪৬ রানে নিয়ে গিয়ে আউট হন। ৭১ বলে ৭ চারে ৭৫ রান করে সাকিব আউট হওয়ার পর মুস্তাফিজ আসেন আর সাজঘরে যান। তাতে বাংলাদেশ পুরো ৫০ ওভারও খেলতে পারেনি। ৭ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায়। এই রানই জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। সাকিব যে বল হাতেও অসাধারণ বোলিং করেন।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৩ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। জয়ের আশা জাগিয়েও ডেভিড মালানের অপরাজিত ১১৪ রানের কাছে হার মানে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাত্তাই পায়নি তামিমবাহিনী। ওপেনার জেসন রয়ের ১৩২ রানের সঙ্গে অধিনায়ক জস বাটলারের ৭৬ রানে ১৩২ রানের বড় ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে লাকি ভেন্যুতে সাকিব দ্যুতিতে ভাগ্য বদলায়। জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
প্রায় ৭ বছর পর ২০১৬ সালের পর আবার বাংলাদেশের মাটিতে খেলতে আসে ইংল্যান্ড। সবশেষ ওয়ানডে সিরিজে ইংল্যান্ডই জিতেছিল। বাংলাদেশ এরআগে দেশের মাটিতে টানা ছয় সিরিজ জিতে। যেই ইংল্যান্ড সামনে পড়ে সিরিজ হেরে যায়। এবার দেশের মাটিতে টানা ৭ সিরিজ জিতে ইংল্যান্ডের সামনে পড়েছে বাংলাদেশ। এবারও সিরিজ হার হয়। তবে হোয়াইটওয়াশ এবারও এড়ায় বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াইয়ে নামে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ এড়ানো যায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কখনোই কোন সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এরআগে ৪ ওয়ানডে সিরিজে সবকটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে তিনবারই দেশের মাটিতে সিরিজে হেরেছে বাংলাদেশ। এবারও হারল। চার সিরিজের মধ্যে প্রথম দুই সিরিজে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল। এরপর টানা দুই সিরিজ হারলেও হোয়াইটওয়াশ হয়নি বাংলাদেশ। এবার শেষ ম্যাচেও সেই আশাই করা হয়। যেন সিরিজ হারের পর হোয়াইটওয়াশ অন্তত এড়াতে পারে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ এড়িয়েছে বাংলাদেশ। তা সম্ভব হয়েছে সাকিব দ্যুতিতে।