আন্তর্জাতিক ডেস্ক – রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলছে। এ যুদ্ধে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে নাকি অস্ত্র জোগান দিচ্ছে পাকিস্তান! তারা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। কিয়েভকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে। রিপোর্ট অনুযায়ী পাকিস্তানের ভূমিকা চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বে নিরপেক্ষ নয়। ইউরোপ-ভিত্তিক প্রকাশনা জিও-পলিটিক রিপোর্ট করেছে, ইসলামাবাদ দৃশ্যত তৃতীয় দেশের হাতিয়ার নির্মাতা হিসেবে ইউক্রেনকে অস্ত্র বিক্রি করছে।
সূত্র অনুসারে, ইসলামাবাদ-ভিত্তিক অস্ত্র সরবরাহকারী মেসার্স ডিএমআই অ্যাসোসিয়েটস বুলগেরিয়া ভিত্তিক ফার্ম মেসার্স ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে যাতে ইউক্রেন সরকারকে তৈরি করা প্রতিরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা সহজ হয়। পৃথকভাবে, একটি স্লোভাকিয়া-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা কোম্পানি মেসার্স কেমিকা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে পাক অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরির গোলাবারুদ সরবরাহকারী মেসার্স কেস্ট্রালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানিয়েছে জিও-পলিটিক। মেসার্স কেস্ট্রাল সম্ভবত ইউক্রেন সংলগ্ন দেশগুলিতে, যেমন পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং স্লোভাকিয়ায় তার কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এই সংঘাতকে ব্যবহার করছে, কারণ কেস্ট্রালের সিইও লিয়াকত আলী বেগ এই বছরের মে এবং জুন মাসে এই দেশগুলি সফর করেছিলেন।
আরেকটি সূত্র জানাচ্ছে, কিয়েভভিত্তিক ইউক্রেনীয় কোম্পানি মেসার্স ফরম্যাগ ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ব্যবহারের জন্য গ্লাভস পাঠানোর জন্য পাকিস্তান ভিত্তিক মেসার্স ব্লুলাইনস কার্গো প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানা গেছে। একটি অনলাইন রাশিয়ান ওয়েব পোর্টাল রিয়াফানে প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের নূর খান এয়ারবেস ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জন্য সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনের জন্য একটি মূল ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেনের পাকিস্তানের তৈরি গোলাবারুদ ব্যবহার করার প্রমাণ ‘ইউক্রেন ওয়েপন ট্র্যাকার’ থেকে পাওয়া যায়, এটি একটি ওয়েবসাইট যা ইউক্রেনে অস্ত্র ও গোলাবারুদের ব্যবহার/ক্যাপচার ট্র্যাক করে। সূত্র : এএনআই।
ওয়েবসাইট উল্লেখ করেছে যে, ইউক্রেনের আর্মড ফোর্সেস (অঋট) আর্টিলারি পাকিস্তান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি, পাঞ্জাবে তৈরি ১২২ মিমি উচ্চ-বিস্ফোরক ফ্র্যাগমেন্টেশন আর্টিলারি শেল ব্যবহার করে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইউক্রেনীয় যুদ্ধ শুরুর সময় রাশিয়া সফর করেছিলেন, সেইসময়ে দেশের ভাবমূর্তি ঝুঁকির মুখে পড়েছিল । ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের ঘটনা ফের একবার বিতর্কের সূত্রপাত করলো। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের তৈরি কামান ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে।
পাকিস্তান ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় অস্ত্র সংস্থা UkrOboronProm কে T-80UD যুদ্ধ ট্যাঙ্ক আধুনিকীকরণের জন্য USD ৮৫.৬ মিলিয়ন মূল্যের একটি চুক্তি দিয়েছে। জিও পলিটিক জানিয়েছে , এই বছরের শুরুর দিকে ইউক্রেন ৬TD১ এবং ৬TD২ ইঞ্জিন সরবরাহের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন অর্ডার নিয়েও আলোচনা করেছিল। শুধুমাত্র ২০২১ সালে, পাকিস্তান ইউক্রেনে তার ঞ-৮০টউ ফ্লিট মেরামত করার জন্য টঝউ ৮৫.৬ মিলিয়ন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক মূলত অস্ত্র নিয়ে। গত কয়েক দশক ধরে, ইসলামাবাদ ইউক্রেনের অস্ত্র শিল্পের সবচেয়ে বিশ্বস্ত গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে। গত বছর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান “অত্যাধুনিক” অস্ত্র কেনার জন্য ইউক্রেন সফর করেছিলেন। পাকিস্তান ভবিষ্যতে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং যৌথ উদ্যোগের ভিত্তিতে ইউক্রেনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী, কারণ উভয় পক্ষ একে অপরের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে পারে। সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া গত বছর ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলে একটি সামরিক পরীক্ষার সাইট পরিদর্শনের সময় এই কথা বলেছিলেন। পাক সেনাপ্রধান বলেছেন যে, উভয় দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ঐতিহ্যগতভাবে পাক-ইউক্রেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।