মিথুন আশরাফ – বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানকে নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে একটি প্রস্তুতিমূলক সিরিজ চলছে। সিরিজের নাম রাখা হয়েছে ‘বাংলা ওয়াশ’। এই সিরিজে সাকিবরা শুধু ধোলাই হচ্ছেন। সিরিজে টানা তিন ম্যাচ হেরে বিদায় নিয়েছেন। ফাইনালে খেলার আশা শেষ হয়ে গেছে। আর কোন সুযোগই থাকল না। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪৮ রানে হারে বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের হাগলি ওভালে ম্যাচটিতে টস জিতে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডকে আগে ব্যাটিং করতে পাঠায়। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বিশাল রান করে স্বাগতিকরা। ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ২০৮ রান করে। ওপেনার ডেভন কনওয়ে ৬৪, গ্লেন ফিলিপস ৬০, গাপটিল ৩৪ ও ওপেনার ফিন অ্যালেন ৩২ রান করেন। নিউজিল্যান্ড ইনিংসে গাপটিল ও কনওয়ে মিলে দ্বিতীয় উইকেটে ৮২ রানের জুটি গড়েন। বল হাতে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও এবাদত হোসেন ২টি করে উইকেট নিতে সক্ষম হন।
জবাব দিতে নেমে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬০ রান করতে পারে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে সাকিব ৭০ রান করেন। লিটন কুমার দাস ও খেলার সুযোগ পাওয়া সৌম সরকারের ব্যাট থেকে আসে ২৩ রান করে। বল হাতে মিলনে ৩ এবং সাউদি ও ব্রেসওয়েল ২ উইকেট করে নেন। ব্যাটিংটা কোনভাবেই ভালো হচ্ছে না বাংলাদেশের। বড় জুটির দেখা মিলছেনা। প্রতিপক্ষ যেখানে ৫০ রানের বেশি জুটি হরহামেশাই করছে, সেখানে বাংলাদেশের এমন জুটির দেখা মিলছেনা। এই ম্যাচেই যেমন তিন নম্বর উইকেটে সাকিব ও সৌমর ৪৩ রানের জুটি সবচেয়ে বড় জুটি হয়ে আছে। বোলিংয়ে শুরুতে বাজে অবস্থা হচ্ছে। এরপর ব্যাটিংয়েও বেহাল দশাই দেখা যাচ্ছে।
সিরিজে তিন দল পরস্পরের বিপক্ষে দুটি করে মোট ৪টি ম্যাচ খেলবে। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড ম্যাচ শুরুর আগেই নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান ৩টি করে ম্যাচ খেলে ২টি করে ম্যাচে জয়ে ৪ পয়েন্ট পায়। বাংলাদেশ ২ ম্যাচের ২টিতে হেরে শূন্য পয়েন্টে থাকে। আগেই জানা থাকে, নিউজিল্যান্ডের কাছে হারলেই বিদায় নেবে বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ হারে। নিউজিল্যান্ডের ৬ পয়েন্ট হয়। পাকিস্তানের আছে ৪ পয়েন্ট। বাংলাদেশের কোন পয়েন্ট জমা থাকছেনা। এখন তিন দলেরই একটি করে ম্যাচ বাকি থাকছে। বাংলাদেশ নিজেদের শেষ ম্যাচটিতে জিতলেও ২ পয়েন্টের বেশি পাবে না। এখনই নিউজিল্যান্ডের ৬ ও পাকিস্তানের ৪ পয়েন্ট করে আছে। নিউজিল্যান্ডের কাছে হারাতে বাংলাদেশের ফাইনালে খেলার আর কোন সম্ভাবনাই থাকল না। কোন দুয়ার আর খালি থাকল না। বিদায় নিল।
হাল ছাড়তে নারাজ ছিল বাংলাদেশ। আশা যে ছিল। শেষ দুই ম্যাচ বাংলাদেশ জিততে পারলে, তাহলে ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা থাকত। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যদি বাংলাদেশ জিতত, তাহলে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাতে পারলে ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা থাকত। পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার খেলা থাকত। যে দল জিতত, তাদের ৬ পয়েন্ট হত। হারা দলের ৪ পয়েন্টই থাকত। বাংলাদেশ যদি শেষ দুই ম্যাচ জিততে পারে, তাহলে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট হত। তখন নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের মধ্যকার যে দলের ৪ পয়েন্ট থাকত, সেই দলের সঙ্গে রানরেটে এগিয়ে থেকে ফাইনাল খেলতেও পারত বাংলাদেশ। কিন্তু এখন আর কোন সুযোগ নেই। কোনভাবেই আর ৪ পয়েন্ট হওয়া সম্ভব নয়। তাই বিদায় ঘটেছে বাংলাদেশের।
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের টেকনিক্যাল পরামর্শক শ্রীধরন শ্রীরাম বলেছিলেন, আমাদের খুবই শান্ত থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওঠা-নামা থাকবেই। এই ওঠা-নামার সময়টায় আমাদেরকে স্থির থাকতে হবে। সব সমর্থক ও মিডিয়াকে আমি অনুরোধ করছি, আমাদের পাশে থাকুন। এটা দেশের ব্যাপার, সবার আবেগের ব্যাপার। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে ছেলেরা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আমি চাই ধৈর্য ধরে রাখতে। মৌলিক একটা স্কোয়াড আমরা পেয়ে গেছি, যারা ভবিষ্যতে ভালো করবে। বিশ্বকাপের অপেক্ষায়ও আছি আমরা। যে ব্র্যান্ডের ক্রিকেট আমরা খেলব, নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশকে আমরা গর্ব উপহার দেব। আশা হতাশায় পূরণ হলো। সিরিজে টানা তিন ম্যাচে হেরে বিদায় নিল বাংলাদেশ।
এ সিরিজটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতিমূলক সিরিজ। তিন দল প্রস্তুতি ভালোভাবে সেরে নিতে চায়। নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের প্রস্তুতি ভালোভাবেই হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে যেন আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। একের পর এক ম্যাচ হারে ক্রিকেটারদের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়ছে।
এই সিরিজ শেষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। ১৭ অক্টোবর আফগানিস্তান ও ১৯ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এরপর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের আসল লড়াই শুরু হবে। ২৪ অক্টোবর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসল মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ।