Search
Close this search box.

ভূমিকম্পে নিহতদের গণকবর দেওয়া হচ্ছে : ১৬ হাজারের বেশি মৃত্যু

ভূমিকম্পে নিহতদের গণকবর দেওয়া হচ্ছে : ১৬ হাজারের বেশি মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক – তুরস্ক ও সিরিয়ায় থামছে না মৃত্যুর মিছিল। ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এখন পর্যন্ত দেশ দুটিতে ১৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভয়াবহ ভূমিকম্পে একদিকে চলছে উদ্ধার তৎপরতা, অপর দিকে চলছে শতশত মরদেহ সৎকারের ব্যবস্থা। গণকবর দেওয়া হচ্ছে। দাফন করার আগে মরদেহের ডিএনএ নমুনা রেখে তবেই কবর দেওয়া হচ্ছে। কারণ এখন পর্যন্ত বেশির ভাগের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এসব মরদেহের অধিকাংশকেই শেষবারের মতো দেখারও কেউ নেই। উদ্ধারকারীরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লাশের সারি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা বলছে, শুধু তুরস্কেই এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৩৯১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া সিরিয়ায় প্রাণ গেছে ২ হাজার ৯৯২ জনের। ত্রাণ সংস্থা এবং উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ আটকা পড়ে আছে। ফলে এই সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বাড়তে পারে।

প্রশাসন বলছে, তীব্র ঠান্ডা ও বৃষ্টিপাতের কারণে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার তৎপরতা। এ ছাড়া কেউ জীবিত থাকতে পারে এমন ধারণায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না বুলডোজারের মতো ভারি যন্ত্র।

ভয়াবহ এ বিপর্যয়ের পর প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সরকারি আশ্রয় শিবির ও হোটেলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার পরও বাড়িঘরহারা অনেকে খোলা আকাশের নিচে ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এমন এক পরিস্থিতিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ভূমিকম্প বিধ্বস্ত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শনে যান। তিনি বলেন, রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অনেক জায়গায় সময়মতো যেতে সমস্যা হচ্ছে। উদ্ধারকারীরাও বলছেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে লোকজনকে জীবিত উদ্ধারের সময় দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে।

তুরস্কের হাতায় প্রদেশসহ ভূমিকম্প আঘাত হানা প্রদেশগুলোর হাসপাতালগুলোর সামনে কম্বলে জড়ানো অনেক মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ ধরনের মৃতদেহের সংখ্যা সেখানে ক্রমশ বাড়ছে। সেখানে নুতন মৃতদেহ এসে পৌঁছালে হুমড়ি খেয়ে পড়ে তা কোনো স্বজনের কিনা তা দেখে নিচ্ছেন অনেকে। সিরিয়ার হাসপাতালগুলোরও প্রায় একই অবস্থা। তবে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ গোলযোগের কারণে সেখানে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না।

ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের পর তুরস্ক সাত দিনের জাতীয় শোক পালন করছে। এ ছাড়া তিন মাসের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে সব ধরনের খেলাধুলার অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর ভূমিকম্প বিধ্বস্ত আদানা, আদিয়ামান, দিয়ারবাকির, গাজিয়ানতেপ, হাতায়, কাহরামানমারাস, কিলিস, মালাতিয়া, ওসমানিয়ে ও সানলিউরফা-এ ১০ প্রদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্বের ৪৫টিরও বেশি দেশ তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। অনেক দেশের উদ্ধারকারী দল ও বিভিন্ন ধরনের সাহায্য ইতোমধ্যে তুরস্কে এসে পৌঁছেছে। বিদেশি উদ্ধারকারী দল কাজও শুরু করে দিয়েছে।

সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে এই ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। বেশিরভাগ মানুষ তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বহুতল ভবন ধসে পড়ে ঘুমন্ত মানুষের ওপর। মোমের মতো ধসে পড়েছে একাধিক ভবন। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তৃত এলাকা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। মিসর, লেবানন ও সাইপ্রাস থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ছয় হাজার ভবন ধসে পড়েছে বলে জানান তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৪ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি জরুরি কর্মীকে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে মোতায়েন করা হয়েছে। তবে শঙ্কা হচ্ছে, তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেলে উদ্ধার অভিযান বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ