Search
Close this search box.

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

মিথুন আশরাফ – দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, দুদকের সাবেক কমিশনার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন রবিবার ছিল। চুপ্পুই শুধু মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী তিনি। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এবং কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাহাবুদ্দিন চুপ্পুই রাষ্ট্রপতি নিশ্চিত হয়ে গেছেন।

দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নিজের সই করা মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ‘নির্বাচনী কর্তা’ কাজী হাবিবুল আউয়াল।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনের নাম প্রস্তাব করেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ তা সমর্থন করেন। রবিবার বিকেল ৪টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মনোনয়নপত্র দাখিল করার শেষ সময় থাকে। আর এই মনোনয়নপত্র দাখিলের মধ্য দিয়েই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি মিলে যায়। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরী হতে যাচ্ছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। টানা দুই বারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনই বঙ্গভবনে যাবেন।

মনোনয়নপত্র জমার আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাংবাদিকদের সামনে আসেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রাচিনতম ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবউদ্দিন চপ্পুকে মনোনয়ন প্রদান করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদীয় দলের নেতা বঙ্গবন্ধু কন্য শেখ হাসিনা এই মনোনয়ন চুড়ান্ত করেছেন।’ আর সাংবাদিকদের একের পর এক অনুরোধের মধ্যে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু শুধু বলেন, ‘সবই আল্লাহর ইচ্ছা।’

গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচনে নির্বাচনী কর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। তফসিল অনুযায়ী আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যেহেতু সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর কোন প্রতিদ্বন্দ্বি নেই, তাই আর ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। তিনিই হয়ে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে ৫ বছরের জন্য পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সেই অনুযায়ী, তার ৫ বছরের মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে।
সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশের কোনো নাগরিক জীবনে দুবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারেন। এটা পরপর বা যে কোনো সময়ে। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হলো নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকে পাঁচ বছর। এর আগে সরকার পরিবর্তন হলেও বিধান অনুযায়ী তিনিই রাষ্ট্রপতি থাকবেন।

সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর দেশে এখন পর্যন্ত একবারই রাষ্ট্রপতি পদে ভোটাভুটির প্রয়োজন পড়েছিল। ১৯৯১ সালে সংসদীয় ব্যবস্থায় ফেরার পর থেকে মাত্র একবার রাষ্ট্রপতি পদে ভোটের প্রয়োজন পড়েছিল। এবারও ভোটাভুটি ছাড়াই রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরী কে হচ্ছেন, তা নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ ছিল না। আওয়ামী লীগ কাকে এই পদে মনোনয়ন দিচ্ছে তা নিয়ে সবার আগ্রহ থাকলেও ক্ষমতাসীনরা কারো নাম প্রকাশ করেনি। গত বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের বৈঠক করেছিল আওয়ামী লীগ। সেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনীত করার ক্ষমতা দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়। চুপ্পুকেই রাষ্ট্রপতি পদে বেছে নেন শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থীর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০০৬ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসরে যান।
ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। পরে সামলেছেন পাবনা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব।

 

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

 

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তার দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে গ্রেফতার করে সে সময় ক্ষমতাদখলকারীরা। সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকেও তখন কারাবরণ করতে হয়।

পেশায় আইনজীবী সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়, যাতে হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে ‘কমিশন’ গঠন করে, যার প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

তিনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান পদে তাকে মনোনীত করা হয়। দলের সর্বশেষ কাউন্সিলে তিনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

রবিবার মনোনয়নপত্র জমার তারিখ থাকায় সকালেই গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের কয়েক জ্যেষ্ঠ নেতা। পরে তারা যান নির্বাচন কমিশনে। কিছুক্ষণ পর ইসিতে পৌঁছান আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। সে সময় তাকে হাস্যোজ্জ্বল দেখাচ্ছিল।

এর আগে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। দলটির দফতর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানান। বিপ্লব বড়ুয়া তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসাবে মো. সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন প্রদান করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির প্রধান শেখ হাসিনা এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন।
স্বাধীনতার পর থেকে ২১ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৭ জন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের আইনে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার দ্বিতীয় মেয়াদ পূরণ করবে ২৩ এপ্রিল।

ব্যক্তিগত জীবনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এক পুত্রসন্তানের বাবা। তার স্ত্রী প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, তিনি উচ্চ শিক্ষিত-চৌকস-বুদ্ধি দীপ্ত। দল, নেত্রী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি তিনি যে নিবেদিত সেই প্রমাণ তার পুরো জীবনে রেখে গেছেন। রাষ্ট্রপতি পদে সংসদীয় দলের পক্ষ থেকে উনার প্রস্তাবক হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং আমাদের সংসদীয় দলের নেতা শেখ হাসিনা আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমি সমর্থন করেছি।

তিনি বলেন, তিনি মাঠের রাজনীতিবিদ। তিনি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ২০ আগস্ট গ্রেফতার হয়েছিলেন। ৩ বছরের বেশি কারাগারে ছিলেন।

নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আজকে (রবিবার) ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুটি মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে-একই ব্যক্তির নামে। যার নামে দাখিল হয়েছে তিনি মো. সাহাবুদ্দিন।

তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এই দুটি আবেদন সকাল ১১টা ও ১১টা ৫ মিনিটে জমা দেওয়া হয়েছে। এই দুটি আবেদন আগামীকাল (আজ) দুপুর ১টা থেকে বাছাই করা হবে। বাছাই শেষে প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা বৈধ মনোনয়নের বিষয়ে সবাইকে অবহিত করবেন। আইনানুগভাবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ আমরা চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করব কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত হবেন। যেহেতু একজন প্রার্থীর দুটি মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে, সুতরাং কালকের বাছাইয়ে যদি দুটি আবেদন টিকে যায় তাহলে কালকেই এটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ