ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং সিক বলেছেন, তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের মত বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া। তবে দুই যাত্রায় (স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল) বাংলাদেশের সামনে যেমন অগাধ সুযোগ অপেক্ষা করছে, তেমনই চ্যালেঞ্জও রয়েছে। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সেমিনারে এসব কথা জানিয়েছেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, চলতি বছর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পঞ্চাশ বছর উদযাপিত হয়েছে। গেল পাঁচ দশকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন ও দুদেশের নাগরিকদের সম্পর্ক বিনিময়ের এক অসাধারণ যাত্রার সাক্ষী দক্ষিণ কোরিয়া। এই ব্যাপক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শেকড় খুঁজতে গেলে আমাদের যেতে হবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) কারখানা স্থাপনের শুরুর দিকে।
তিনি বলেন, এটা সবারই জানা যে, বাংলাদেশের দেশ গার্মেন্ট ও কোরীয় কোম্পানি দায়েউ ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের গোড়াপত্তন করে। এরপর থেকে বাংলাদেশের আরএমজি খাতের দ্রুত প্রবৃদ্ধিতে কোরীয় কোম্পানিগুলো ব্যাপক অবদান রেখে আসছে, যা এখন দেশটির রপ্তানিতে ৮৪ শতাংশ অবদান রাখছে।
পার্ক ইয়াং সিক আরও বলেন, আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) প্রাপক দেশ থেকে দাতা দেশে রূপান্তরিত হওয়া বিশ্বের প্রথম দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দরিদ্র দেশগুলোর নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নে ধনী দেশগুলো যে ঋণ দেয়, সেটিই ওডিএ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহায়তায় মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই কোরিয়া নিজের অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারত। কিন্তু অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে উন্নয়ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে কোরিয়া নিজের ঋণ পরিশোধ করতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। দুই যাত্রায় বাংলাদেশের সামনে যেমন অগাধ সুযোগ অপেক্ষা করছে, তেমনই চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এ দুই অগ্রযাত্রায়ই সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। কারণ, এরই মধ্যে গত এক দশকে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়ে যেতে দেখেছি আমরা।
রাষ্ট্রদূত বলেন, অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ও উন্নয়তশীল দেশ হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ও ব্যক্তিগত খাতকে ব্যাপক পরিশ্রম করতে হবে। প্রস্তুতি ছাড়াই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় শামিল হলে দেশীয় শিল্প ধসের মুখে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হলো, ভিত্তিকে আরও দৃঢ় করতে মনোযোগ দিতে হবে বাংলাদেশকে।
পার্ক ইয়াং সিক বলেন, প্রস্তুতকারক খাতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক পণ্য বাংলাদেশেই উৎপাদন করছে স্যামসাং। চলতি বছর থেকে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে হুন্দাই গাড়ি অ্যাসেম্বল করা হচ্ছে। দেশীয় পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে ভালো মানের কর্মসংস্থান তৈরি করছে এসব কোম্পানি। কিন্তু কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্কের কারণে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল ফোন পাচার ও সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির কারণেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এসব কোম্পানিকে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখছে কোরীয় কোম্পানি। এখন রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে বাংলাদেশকে। ঢাকা বর্তমানে ৮৫ শতাংশের বেশি তুলা-ভিত্তিক পোশাক রপ্তানি করছে। অন্যদিকে মানুষের তৈরি বা কৃত্রিম (সিন্থেটিক) পোশাকের রপ্তানি ১৫ শতাংশের কম। যা বিশ্ববাজরের বিপরীত। কৃত্রিম পোশাকের জন্য বিপুল বিনিয়োগ ও উন্নত প্রযুক্তি দরকার। এক্ষেত্রে দুদেশের তৈরি পোশাক কারখানার পরস্পরকে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। গার্মেন্ট শিল্পের মত এ অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া। আমার প্রত্যাশা, বাংলাদেশের বর্তমানে চলমান অবকাঠামো প্রকল্পগুলো মসৃণভাবে অগ্রসর হবে এবং উন্নয়ন খাতে তা ব্যাপক অবদান রাখবে।