মালয়েশিয়ার পেনাং প্রদেশের জর্জ শহরে একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে তিন বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন। একই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। দেশটির স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রাতের এ দুর্ঘটনায় এখনও ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকা রয়েছে আরও চারজন। খবর বার্নামা ডট কমের।
প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাটি জানায়, পেনাংয়ের উপপুলিশ প্রধান দাতুক মোহাম্মদ ইউসুফ জান মোহাম্মদ বাংলাদেশিদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়েছেন। আরেকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ছাড়া আরও দুজন আহত হয়েছেন ও স্তূপের নিচে চারজন আটকে আছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য পেনাং হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। স্তূপের নিচে আটকা পড়াদের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।’
গতকাল রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে পুলিশ দুর্ঘটনাটির খবর পায় বলেও জানান তিনি। তবে, নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
মালয়েশিয়ার নিউ স্ট্রেট টাইমস জানিয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে, ওই নির্মাণাধীন ভবনে ১৮ শ্রমিক কাজ করছিল। এর মধ্যে নামাজের জন্য ৯ জন ভবন থেকে বের হয়। আর বাকি ৯ জন ১২ মিটার দৈর্ঘ্যে ও ১৪ টন ওজনের একটি বিমের নীচে কাজ করছিল।
এদিকে, দুর্ঘটনার সময় ওই নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করছিলেন আরেক বাংলাদেশি শ্রমিক ৪৩ বছর বছর বয়সী মহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমিও একজন ভুক্তভোগী হতে পারতাম। কিন্তু আমার ভাগ্য ভালো আগেই ভবন থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম।’ নির্মাণাধীন ভবনের সবার ওপরের তলায় কাজ করা মহিদুল বিরতি নিতে ভবনটি থকে বের হয়েছিল।
মালয়েশিয়ায় থাকা এই বাংলাদেশি বলেন, ‘হঠাৎ করেই আমি বিকট শব্দ শুনতে পাই। এরপরেই সেখানে চিৎকার শুনতে পাই। পরে আমি বুঝতে পারি, আমাদের ভবনটিই ধসে পড়েছে।’
মহিদুল বলেন, ‘ভবনটিতে কর্মরত বেশিরভাগ লোকই তিন মাস ধরে এখানে কাজ করছিল। এ ঘটনায় আমার বন্ধুও মারা গেছে, যার জন্য আমি বিমর্ষ।’
ধসের সময় ভবনটিতে কাজ করছিল আরেক বাংলাদেশি শ্রমিক ইফতেখার। ৩৮ বছর বয়সী এই যুবক বলেন, ‘ঘটনাটি ৯টা ৪০ মিনিটের সময় ঘটে। তখন আমি নিচ তলায় কাজ করছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল, ভবনটি পড়ে যাচ্ছে। দ্রুতই আমি সেখান থেকে বের হয়ে যাই। আমার সঙ্গে আরও কয়েকজনও ছিল। আমরা বাইরে থেকে ধসের চিত্র নিজের চোখে দেখি।’
এই বাংলাদেশি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগী একজনকে ধ্বংসস্তুপ থেকে বের করা হয়েছিল। তবে, তার অবস্থা ছিল শোচনীয়। বের করার কিছুক্ষণ বাদেই সে মারা যায়।’
এদিকে, দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে মালয়েশিয়ার অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকারী দপ্তর জেবিপিএম। আজ সকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, ধসে পড়া বিমটি ভারী হওয়ায় তা সরাতে তাদের বেগ পোহাতে হচ্ছে। এ জন্য ভারী যন্ত্রপাতির প্রয়োজন।