Search
Close this search box.

এক হলেন শামীম ওসমান ও আইভী

নারায়ণগঞ্জকে যানজট ও হকার মুক্ত করতে এবার এক সঙ্গে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন দুই সংসদ সদস্য ও সিটি মেয়র। আওয়াী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ প্রথম তারা এক হলেন।

নগরীর যানজট, ফুটপাত দখল ও সড়কের অব্যবস্থাপনাসহ নাগরিক বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। এতে অংশ নেন সিটির মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী, সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান। উপস্থিত হন পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।

এ সময় নগরীর প্রধান দুই সমস্যা নিয়ে ভিডিও চিত্র প্রর্দশন করা হয়। উঠে আসে অবৈধ বাস,লেগুনা ও স্ট্যান্ডের কারণে যানজটের নানা দিক। ফুটপাতে হকার থাকায় জনজীবনে ভোগান্তির নানা চিত্র। নাগরীর নেতাকর্মীসহ সাংবাদিকরা এ সমস্যা সমাধানের জন্য দাবি জানান জনপ্রতিনিধিদের কাছে।

শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানকে ভাই সম্বোধন করে মেয়র আইভী বলেন, আজকে আমার বড় দুই ভাই আছেন, আপনারা প্রতিশ্রুতি দেন শহরের ফুটপাতে একজনও হকার থাকবে না। আপনারা আমাকে বলেন কি করতে হবে, সেটাই করবো। নারায়ণগঞ্জের সমস্যা সমাধানে আমরা আজ এখানে বসেছি।

আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহর বাসের নগরীতে পরিণত হয়েছে। মৌমিতা পরিবহনের বাসগুলো প্রচণ্ড দাপটের সঙ্গে রাস্তা দখল করে বসে থাকে। ট্রাফিক পুলিশের কাজই হলো যানজট নিরসন করা৷ এটা তো তারা মেয়র বা এমপিদের প্রতি চাপিয়ে দিতে পারে না। আমি বারবার ট্রাফিক পুলিশকে অবৈধ স্ট্যান্ডের তালিকা দেই, কিন্তু সেগুলো উচ্ছেদ হয় না। ৬০০ হকারকে পুনর্বাসন করেছি আমরা। সেই ৬০০ হকার দোকান বিক্রি করে এখন রাস্তায়। পুরো শহর হকারদের দখলে। আমি কোনো অজুহাত শুনতে চাই না। প্রশাসন মেয়রের কথা শোনে না সারা বাংলাদেশেই। তারা এমপিদের কথা শোনেন।

মেয়র আইভীর প্রত্যাশা পূরণে সবাই এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, এ নারায়ণগঞ্জ আমাদের, বাংলাদেশ আমাদের। আমরা সব জায়গা নিয়েই কথা বলব। ভালো কাজ আমরা সবাই মিলে করব। পুরো শহর হকার মুক্ত করুন। কবে করবেন জানান। মেয়র আবেদন করলে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট দেব। স্পষ্টভাবে বলতে চাই, হকার উচ্ছেদ ও যানজট নিরসনে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর প্রতি আমার শতভাগ সমর্থন থাকবে।

যানজটের কারণ উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, সিএনজি ও অটোরিকশা চলছে। কিন্তু এ অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জের কারণে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নষ্ট হয়। এরা কিন্তু বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছে না। তারা বিল না দিয়ে চলছে, গাড়ি চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, বিআরটিএ’র অনুমতি ছাড়া কোনো গাড়ি চলতে দেওয়া উচিত না। বিআরটিএ প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাড়ির অনুমতি দেবে না। আর সেক্ষেত্রে আমাদের নারায়ণগঞ্জের পরিবহন ব্যবসায়ীদের আগে মূল্যায়ন করা উচিত। সিএনজি ও অটোরিকশার অনুমতি সিটি কর্পোরেশন দিলে কাল এ অযুহাতে সারাদেশে সবাই অনুমতি দেবে। এটা কেন সিটি করপোরেশন দেবে? এটা আপনাদের কাজ। স্ট্যান্ড কোথায় হবে, দরকার থাকলে নির্দিষ্ট জায়গায় বসবে। এরা কিন্তু ফ্রি বসে না। তারা কাউকে না কাউকে টাকা দেয়।

সমস্যার সমাধান করতে হলে সবাইকে কাজ করতে হবে জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, আমার তরফ থেকে কোনো বাধা আসবে না, আপনারা নিশ্চিত থাকেন। তবে নিয়মটা সবার জন্য হতে হবে।

নারায়ণগঞ্জের সমস্যা সমাধানে মেয়র আইভী ও শামীম ওসমানকে সঙ্গে নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করবেন জানিয়ে সেলিম ওসমান বলেন, ফুটপাতের দায়িত্ব আমি পুলিশের কাছে রাখবো না। আপনারা বাসের হিসেব দেন। কোন কোম্পানির কয়টা বাসের অনুমোদন আছে। কেউ বলতে পারেন না বাস কয়টা। এখানে কোনো জনসভা লাগবে না। শামীম ওসমানের কথাই যথেষ্ট। ওপেন সিক্রেট মাদক চলবে না। মাদক দূর করবেই শামীম ওসমান।

এ শহরকে বাঁচাতে তারা মেয়র আইভীর সঙ্গে আছেন বলেও জানান তিনি।

সেলিম ওসমান আরও বলেন, ১০ বছরের চেষ্টার পরে আমরা একত্রিত হতে পেরেছি। আজকে এখান থেকে বসেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব কী কী করতে হবে। প্রশাসনকে বলতে চাই, স্ট্যান্ডগুলো খালি করেন, এরপর নোটিশ দেন যে ফুটপাতে কোনো দোকান থাকবে না। শহরে কয়টি বাস আছে, টেম্পুগুলো কার, স্ট্যান্ড কে চালায়, সেই হিসেব আমাকে দেন। মেয়র চাচ্ছেন রাস্তাগুলো আগে খালি করা হোক। ইনশাআল্লাহ নারায়ণগঞ্জের মানুষ অত্যন্ত শান্তিতে থাকবে, কথা দিচ্ছি৷

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক বলেন, আগামীকাল থেকেই শহরে হকার উচ্ছেদ ও অবৈধ যান, স্ট্যান্ড উচ্ছেদে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। সরকার অনেক শক্তিশালী, এটি সবাইকে মনে রাখতে হবে।

নারায়ণগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, হকার ও ইজিবাইক যানজটের জন্য দায়ী, সেগুলো নিয়ে কাজ করব আমরা।

নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দীপুর সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন- প্রেস ক্লাবের সদস্য, কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা, বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ