নোয়াখালী প্রতিনিধি: একদিনের টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এতে করে ঘরে পানিবন্দী মানুষ আরো বন্দী হয়ে পড়েছে। আরও তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি। বানভাসিরা যে সব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে সেখানের মাঠ বা রাস্তায় পানি আরও বেড়েছে। ফলে, একটা দুর্বীষহ জীবন পার করছে নোয়াখালীবাসী। বাড়ি-ঘরে পানি বেড়ে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনো আসছে মানুষ। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বজ্রসহ ভারী বৃষ্টির কারণে পানি আরও আধা ফুট বেড়ে গেছে। যার কারণে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এতে আতঙ্ক বাড়ছে পানিবন্দী ও বানভাসিদের মধ্যে।
নোয়াখালীর ৮ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ২১ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। ১১৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে অছেন প্রায় সোয়া দুই লাখ মানুষ। বিভিন্ন জায়গায় সড়কের আশপাশের আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষ সহযোগিতা পেলেও প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে পৌঁছাচ্ছে না ত্রাণ সহায়তা। ফলে অধিকাংশ জায়গায় দেখা দিয়েছে খাদ্যের জন্য হাহাকার।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানা যায়, নোয়াখালীর ৮৭ ইউনিয়নে সরকারিভাবে নগদ ৪৫ লাখ টাকা, ৮৮২ টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৫ লাখ টাকার পশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।জানা যায়, জেলা শহর ও তার আশপাশের আশ্রয়কেন্দ্রেগুলোতে একাধিকবার সরকারি-বেসরকারি সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে যাতায়াতের সমস্যার কারণে সহায়তা ঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছেনা। এতে সাহায্যের জন্য বিভিন্ন স্থানে হাহাকার করতে দেখা গেছে বানভাসিদের।
মোজাম্মেল হোসেন নামে একজন বলেন, মধ্য রাত থেকে বর্জ্যসহ অবিরাম বৃষ্টি হয়। এতে পানি আরো বেড়ে গেছে। ফলে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
সুবর্নচরের চরজুবলী গ্রামের সিরাজ মিয়া বলেন, অতিরিক্ত পানির কারণে রোপা আমন ধানের বীজ নষ্ট হয়ে যাবে। সামনের আমন মৌসুম নিয়ে চিন্তায় আছি। রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে আছে। এখনো মানুষ সেন্টারে যাচ্ছে।
সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের আকবর হোসেন বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবার সংকট রয়েছে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় বেশী পানি থাকায় নৌকা ছাড়া যাওয়া যায় না। সেখানে সহায়তা পৌঁছাচ্ছেনো। ডার ফলে মানুষজন না খেয়েও আছে। বিশেষ করে কষ্টে আছে শিশু,বয়স্ক ও অসুস্থরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজনের) জেলা সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের বলেন, সমন্বয়হীনতার কারণে ত্রাণ দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছাচ্ছেনা। বিভিন্ন জেলা থেকে যে সব ত্রাণ আসছে সেগুলো সঠিকভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাচ্ছেনা।
জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৭ আগষ্ঠ) দিনে বৃষ্টি হয়নি। মধ্য রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন করে আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেজন্য বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন,নোয়াখালীতে স্মরণকালের বন্যায় আমরা প্রশাসন কাজ করছি। জেলার ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গম এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে সহায়তা আসছে। বিভিন্ন এলাকার মানুষ সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবীরা নিরলসভাবে কাজ করছে। বৃষ্টি না হলে আমাদের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।