বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি কর্মীদের

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পদত্যাগ দাবি করছেন বিএসইসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই পদত্যাগ দাবি সম্বলিত আন্দোলন সাম্প্রতিক সময়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিএসইসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করছেন, চেয়ারম্যানের একাধিক সিদ্ধান্ত এবং তাঁর অপশাসনের কারণে কমিশনের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

বিএসইসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করছেন, শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে কমিশনটি প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। তাঁদের মতে, কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপগুলো পেশাদারিত্বের ধার থেকে বিচ্যুত হয়েছে, যা বাজারের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

তারা আরও বলছেন, শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পছন্দের কর্মীদের নিয়োগ এবং পদোন্নতি প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। এজন্য কমিশনের মধ্যে অস্থিরতা এবং বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কর্মকর্তারা দাবি করছেন যে, তাদের কাজের পরিবেশ প্রতিদিনই খারাপ হচ্ছে এবং তারা একাধিকবার চেয়ারম্যানের কাছে তাদের সমস্যার সমাধান চেয়ে গেছেন, কিন্তু কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বিএসইসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন। তারা তাদের দাবি তুলে ধরতে শুরু করেছেন বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে। তাদের অভিযোগ, শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম কমিশনের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে তার আচরণে এক ধরনের অবমাননা দেখাচ্ছেন। কর্মকর্তাদের মতে, তারা কমিশনের জন্য অনেক পরিশ্রম করছেন, অথচ তাদের প্রাপ্য সম্মান এবং মর্যাদা প্রদান করা হচ্ছে না।

এছাড়া, তারা বলছেন, বিএসইসি’র চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সাধারণ কর্মকর্তাদের মতামত গুরুত্ব দেওয়া হয় না, যার ফলে দুর্নীতি এবং অনিয়মের আশঙ্কা বাড়ছে। তারা মনে করেন, কমিশনের অস্থিরতা এবং দুর্বল নেতৃত্বের কারণে দেশের পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিএসইসি’র চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এই দাবি নিয়ে কোনো সরাসরি মন্তব্য করেননি। তবে, তিনি একাধিক সভা এবং সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, তিনি কমিশনটির কার্যক্রম আরও শক্তিশালী এবং সুশাসিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, কিছু বিচ্ছিন্ন সমস্যার কারণে কর্মচারীরা অসন্তুষ্ট হতে পারেন, কিন্তু তিনি এর সমাধান করবেন।

চেয়ারম্যান আরও জানিয়েছেন, তার নেতৃত্বে বিএসইসি দেশের পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা আনতে এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা একটি উন্নত পুঁজিবাজার গড়তে বদ্ধপরিকর এবং এই উদ্দেশ্যে আমাদের কাজ অব্যাহত থাকবে।”

বিএসইসি’র মধ্যে চলমান অস্থিরতা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, একজন শক্তিশালী এবং দক্ষ নেতৃত্ব ছাড়া পুঁজিবাজারের সুশাসন নিশ্চিত করা কঠিন। বিশেষ করে, বিএসইসি’তে এরকম সমস্যার সমাধান না হলে তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে বাজারের সূচকও হ্রাস পেতে পারে।

বিএসইসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন এবং তাদের দাবির ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি এখনও। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, সরকারের উচিত হবে এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান করা, যাতে পুঁজিবাজারে আবারো স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। বিএসইসি’র চেয়ারম্যান পদত্যাগ করলে, নতুন নেতৃত্বে কমিশনটির কার্যক্রম শক্তিশালী হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

এদিকে, কর্মকর্তারা দাবি করছেন, যতদিন তাদের দাবি মেনে নেয়া না হবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তাঁরা শর্ত দিয়েছেন, শুধুমাত্র চেয়ারম্যানের পদত্যাগের পরই তারা আবার কাজে ফিরবেন এবং কমিশনের কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে সহায়তা করবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ