Search
Close this search box.

পিকআপ ছিনিয়ে নিতেই চালককে হাত-পা বেঁধে জীবন্ত নদীতে ফেলে দেয়া হয়

স্টাফ রিপোর্টার- রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীতে নভেম্বরের শুরুতে অজ্ঞাত এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু কোনোভাবে মরদেহের পরিচয় সনাক্ত করা যাচ্ছিল না। ঘটনার একমাস পর সেই লাশের হত্যার রহস্য উন্মোচন করল নৌ-পুলিশ।

নৌ-পুলিশের তথ্যমতে হত্যার শিকার সেই যুবকের নাম মো. শাকিব। তিনি ভোলা জেলার দুলারহাট উপজেলার মো. কামালের ছেলে। পেশায় তিনি একজন পিকআপচালক ছিলেন। রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে শাকিব হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করেছে নৌ-পুলিশ।

নৌ পুলিশ বলছে, হত্যাকারীরা কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানি চালুর জন্য শাকিবের কাছ থেকে পিকআপ নিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটি মালিকের অনুমতি ছাড়া দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে মারধর করে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়। এরপর রাতের অন্ধকারে তারই পিকআপে নিয়ে গিয়ে জীবন্ত অবস্থায় হাত-পা বেঁধে ফেলে দেওয়া হয় নদীতে। মূলত পিকআপটি নিতেই হত্যাকারীরা চালককে মেরে ফেলেন।

সোমবার রাজধানীর নৌ পুলিশের বসিলা পুলিশ ফাঁড়িতে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা অঞ্চলের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস।

তিনি বলেন, হত্যার শিকার শাকিব জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় এসে ভাড়ায় পিকআপ চালানো শুরু করেন। গত ১ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানার রায়েরবাজার এলাকার সাদেক খান বাজারে কয়েকজন যুবক মুন্সীগঞ্জ থেকে আলু আনার জন্য ৫০০ টাকা অগ্রিম দিয়ে শাকিবের পিকআপভ্যান ভাড়া করেন। কথামতো ৩ নভেম্বর বিকালে পূর্ব নির্ধারিত ঠিকানায় গেলে শাকিবকে কুরিয়ারের ব্যবসার জন্য পিকআপ দিয়ে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দেয় হত্যাকারীরা। কিন্তু শাকিব রাজি না হওয়ায় হাত-পা বেঁধে ভয় দেখানো হয়। কিন্তু তাতেও রাজি না হওয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয় তারা। এরপর ঘাতকরা শাকিবের সঙ্গে থাকা পিকআপভ্যানটি নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে রাখে। নদীতে ফেলে দেওয়ার দুই দিন পর হাত-পা বাঁধা ও মুখে স্কচটেপ পেঁচানো অবস্থায় গলিত লাশ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশের মোহাম্মদপুরের বসিলা পুলিশ ফাঁড়ি। পরে নিহতের পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করেন।

ওই ঘটনায় কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হলে তদন্তের দায়িত্ব পান নৌ পুলিশের বসিলা ফাঁড়ির পরিদর্শক অনিমেশ হালদার। দীর্ঘ ১ মাস তদন্তের পর হত্যায় জড়িত তিন জনকে শনাক্ত করে তদন্তদল। রবিবার রাতে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার ভাঙ্গাবাড়ি ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যায় জড়িত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- মো. মিজানুর রহমান ওরফে সায়েম ও মো. সিয়াম। এছাড়া রিয়াজ নামের অপর এক আসামি পলাতক রয়েছেন। অভিযুক্তদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত রশি, স্কচটেপ ও দুটি মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

নৌপুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, শাকিব হত্যায় তিনজন জড়িত। তারা একসঙ্গে রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করতেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ঠিকমতো বেতন না দেয়ায় নিজেরাই আলাদা পিকআপ গাড়ি দিয়ে কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা করার পরিকল্পনা করেন। তাদের এই ব্যবসায়ে পিকআপ চালক প্রয়োজন হয়। তাদের পরিকল্পনা ছিলো মালামাল ডেলিভারি দিয়ে প্রাপ্ত কমিশনের টাকা তাকে অর্ধেক দিয়ে বাকি অর্ধেক তিনজনে ভাগ করে নেবে। পিকআপচালক যদি প্রস্তাবে রাজি হয় তো ভালো, না হলে তাকে হত্যা করে পিকআপ ছিনতাই করে নদীতে লাশ ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী মিজানুর রহমান ওরফে সায়েম ও রিয়াজ ১ নভেম্বর রায়ের বাজার সাদেক খান কৃষি মার্কেটের সামনে গিয়ে ৫০০টাকা দিয়ে শাকিবকে ভাড়ার কথা বলে টার্গেট করেন। পরে ৩ নভেম্বর শাকিবকে মিজানের বাসায় আসতে বলা হয়। ঘটনার দিনে শাকিব পিকআপ নিয়ে মিজানুর রহমানের বাসায় সন্ধ্যার দিকে আসে। শাকিব আসলে তাকে হত্যাকারীরা তাদের ব্যবসার পরিকল্পনার কথা বলেন। কিন্তু চালক শাকিব কোনোভাবেই তাতে রাজি হচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে মিজানের বাসায় থাকা কালো রশি দিয়ে হাত পা বেঁধে ও কালো স্কচটেপ দিয়ে শাকিবের মুখে লাগিয়ে ভয় দেখাতে থাকেন। কিন্তু কোনোভাবেই সে রাজি না হওয়ায় তারা তিনজন পিকআপটি ছিনতাই করার জন্য পিকআপটি চালিয়ে ভাঙ্গাবাড়ী ব্রিজের পূর্ব পাশে নদীতে আনার পর শাকিবকে জীবিত অবস্থায় নদিতে ফেলে দেয়। পরে পিকআপটিতে জিপিএস লাগানো থাকতে পারে এই সন্দেহে দুই তিন দিন পিকআপটির কোনো খোঁজ হয় কি না তা জানার জন্য অপেক্ষায় থেকে হাবিব চেয়ারম্যানের বাড়ির বিপরীত পাশে রাস্তার পাশে ফাঁকা জায়গায় পার্কিং করে তারা তিনজনই বাসায় চলে যান। কিন্তু গত ৫ নভেম্বর পিকআপ উদ্ধার ও পরের দিন ৬ নভেম্বর শাকিবের লাশ উদ্ধারের পর আসামিরা আত্মগোপনে চলে যান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ