উৎসব মানেই যেন বেলাগাম উচ্ছ্বাস। দিনেদুপুরে খুল্লামখুল্লা জুয়ার আসর গ্রামে। পুরুষদের পাশাপাশি মনপ্রাণ খুলে জুয়া খেলছেন নারীরাও। তাও আবার পুলিশি প্রহরায়! এমনই অভাবনীয় দৃশ্য দেখা যাচ্ছে পশ্চিসবঙ্গের মালদহের মোকাতিপুর কলোনি এলাকায়।
বেহুলা নদীর তীরে জুয়ার টেবিল সাজিয়ে বসেছেন জুয়াড়িরা। সেখানেই দিনের আলোয় চলছে জুয়াখেলা। ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরে থাক উল্টো নারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সর্বক্ষণ পাহারায় থাকতে হচ্ছে পুলিশের। আজব গাঁয়ের আজব খেল!
উপলক্ষ্য মুলোষষ্ঠী। ওল্ড মালদহের মোকাতিপুর কলোনিতে বেহুলা নদীর ধারে এই সময় মুলোষষ্ঠী পুজোর রেওয়াজ রয়েছে। আর এই পুজো ঘিরেই বসে জুয়ার মেলা।
স্থানীয়দের দাবি, প্রায় চারশো বছরের পুরনো এই জুয়া খেলার মেলা আজো ঐতিহ্যবাহী। তাই পুলিশের ধরপাকড় চলে না। জুয়া খেলতে গিয়ে যাতে নারীদের কোনো রকম অসুবিধা না হয়, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বরং মোতায়েন থাকে পুলিশ। এটাই রেওয়াজ। পুরুষদের পাশাপাশি জুয়া খেলেন নারীরাও। তাও আবার কোনো ক্যাসিনো বা ক্লাবে বসে নয়। শ’য়ে শ’য়ে মানুষের ভিড়ের মধ্যে প্রকাশ্যেই চলছে তাদের জুয়া খেলা।
গৃহবধূ হেমলতা চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা জুয়াড়ি মেলায় এসেছি। জুয়া খেলছি।’ আর এক গৃহবধূর আফসোস, ‘আমি জুয়া খেলেছি। কিন্তু জিততে পারিনি, হেরে গিয়েছি।’
স্থানীয়দের বিশ্বাস, এখানে পুজো দিয়ে লক্ষ্মীলাভ হলে সারাবছর সুখে কাটে। আর এই বিশ্বাস থেকেই অসংখ্য জুয়ার বোর্ড বসে বেহুলা নদীর পাড়ে, আমবাগানে। পুরনো প্রথাকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি দিনের জন্য জুয়া খেলায় ‘অঘোষিত ছাড়’ দেয় পুলিশ।
নারীরা জানান, সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জুয়া খেলার অনুমতি রয়েছে। স্থানীয়দের অনেকেরই দাবি, মুলোষষ্ঠী পুজো দিয়ে ঘরের টাকাপয়সা জুয়ার বোর্ডে লাগান বাড়ির লক্ষ্মীরা।