স্টাফ রিপোর্টার – বাংলাদেশে নবনিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপের (সিএমজি) বাংলা বিভাগকে একটি একান্ত সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারে দুই দেশের গভীর সম্পর্ক তুলে ধরতে গিয়ে বন্ধুত্ব, সহযোগিতা, সম্ভাবনা – এই তিন চাবিকাঠি শব্দ ব্যবহার করেন। এই দিয়ে বাংলাদেশ-চীন গভীর সম্পর্ক বর্ণনা করলেন চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন বাংলাদেশে নবনিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। পরে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে নিজের রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্র পেশ করেন তিনি। সে সময় তিনি জানান, দুই দেশের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক আরও স্থিতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে কাজ করবেন।
ঢাকায় প্রথম সফর প্রসঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশে এসে কাজ করার সুযোগ পেয়ে গর্ববোধ করছি। বাংলাদেশের সমাজের প্রাণশক্তি অনুভব করেছি। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বন, সুস্বাদু ইলিশ, সিলেটের সুগন্ধি কালো চা আমাকে মুগ্ধ করে। এ দেশের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে, যা চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করবে। চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব জনগণের আন্তরিক আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ। দুই দেশের সম্পর্কের সুন্দর ভবিষ্যতের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছি। তারা আমার সঙ্গে সাক্ষাতে ‘উন্নয়ন’ ও ‘ভবিষ্যৎ’— শব্দ দুটি সবচেয়ে বেশিবার উল্লেখ করেছেন।
চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে তার দাবি, চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বর্তমানে দ্রুতগতিতে বিকশিত হচ্ছে। তিনটি চাবিকাঠি শব্দ দিয়ে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে বর্ণনা করতে চান তিনি।
ইয়াও ওয়েন জানান, প্রথম শব্দ হচ্ছে বন্ধুত্ব। মৈত্রীর মাধ্যমে দুই দেশের প্রবীণ নেতাদের হাতে এ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং তা সবসময় দুই দেশের শীর্ষনেতাদের যত্ন ও নির্দেশনা পেয়েছে। দ্বিতীয় শব্দ হচ্ছে সহযোগিতা। সর্বাত্মক ও বিস্তৃত ক্ষেত্রের সহযোগিতা বরাবরই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভিত্তি ও নিশ্চয়তা। বাংলাদেশ সর্বপ্রথম ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছে। চীন ও বাংলাদেশের যৌথ প্রচেষ্টায় ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বিষয়ক অবকাঠামো নির্মাণকাজের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে, আন্তঃসংযোগের মান উন্নত হয়েছে। আর তৃতীয় শব্দ হচ্ছে সম্ভাবনা। আমার বিশ্বাস, চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক নিঃসন্দেহে সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরও বেশি চালিকাশক্তির জোগান দেবে এবং ব্যাপক সহযোগিতার সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।
তিনি জানান, চলতি বছর কর্ণফুলী নদীর খননকাজ, টেলিযোগাযোগ নেট আধুনিকীকরণ প্রকল্প, আইসলাম কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিঙ্গেল-পয়েন্ট মুরিং এবং ডাবল-লাইন পাইপলাইন প্রকল্প, রাজশাহীতে পৃষ্ঠতল পানি শোধনাগার প্রকল্প এবং পদ্মা সেতুর রেলপথ সংযোগ লাইনের প্রথম অংশ উন্মুক্ত হবে। আমার বিশ্বাস, ২০২৩ সালে চীন ও বাংলাদেশের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বিষয়ক সহযোগিতা থেকে অনেক সাফল্য অর্জিত হবে।
বাংলাদেশে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের ভূমিকা প্রসঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানান, চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান বুঝতে পারে। এ বিষয়ে চীন সবসময় ন্যায়সঙ্গত মনোভাব নিয়ে কাজ করে আসছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য চীন পরিবেশ সৃষ্টি করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে আসছে, যা বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সমাজ দেখছে। আগে দুজন চীনা রাষ্ট্রদূতও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তারা একাধিকবার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনও করেছেন।
চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়ন প্রসঙ্গে তার দাবি, দুই দেশের নেতৃবৃন্দ আর বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কৌশলগত যোগাযোগ জোরদার করব; পার্টি, সংসদ, থিঙ্ক ট্যাংক, গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করব, দেশ প্রশাসনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করব। আমার বিশ্বাস, আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায়, চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সৃষ্টি হবে।