Search
Close this search box.

প্রধানমন্ত্রীকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের খোলা চিঠিতে ৬ দাবি

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় সংঘর্ষ এবং প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ৬টি দাবি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে লেখা সংস্থাটির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ডের খোলা চিঠিতে তিনি বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাম্প্রতিক দমনাভিযানের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সহিংসতা বন্ধ, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং বিক্ষোভের সময় ২০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে জরুরি ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

ক্যালামার্ড লিখেছেন, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত ২৮ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, সহিংসতায় ১৪৭ জন নিহত হয়েছেন। আমরা দেখেছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলির বেআইনি ব্যবহার, টিয়ার গ্যাসের বিপজ্জনক ব্যবহার এবং এ কে মডেলের অ্যাসল্ট রাইফেলের মতো প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্রের নির্বিঘ্ন ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি আরও লিখেছেন, বিক্ষোভ চলাকালীন গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যা থেকে বাংলাদেশের মানুষ দেশ জুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টির মুখোমুখি হয়েছে। ১৯ জুলাই মধ্যরাতে পুলিশকে দেখামাত্রই গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং কারফিউ জারি করা হয়। ঢাকায় সব ধরনের বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর নজিরবিহীন দমন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

ক্যালামার্ড লিখেছেন, এই বিধিনিষেধ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ অনুসমর্থনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তার লঙ্ঘন। আমরা জানতে পেরেছি, ২৩ জুলাই দেশে ছয় দিন পর ইন্টারনেট ফিরে আসে এবং ২৪ জুলাই কারফিউ শিথিল হয়। আর ২৮ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট ফিরে আসে। তবে এখনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রয়েছে।

এই প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৬ টি দাবি পেশ করেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। দাবিগুলো হলো,

১) অবিলম্বে কারফিউ তুলে নিন, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস পুনরুদ্ধার করুন এবং নিশ্চয়তা দিন যে ভবিষ্যতে বিক্ষোভ দমনে কারফিউতে দেখা মাত্রই গুলি করার নির্দেশ ও ইন্টারনেট বন্ধ করা হবে না বা অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলো লঙ্ঘন করা হবে না।

২) অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে প্রতিবাদ করার অধিকার প্রয়োগ করার জন্য আটক বা গ্রেফতারকৃত সকলকে মুক্তি দিন।

৩) বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ না করতে এবং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ধৈর্যের পরিচয় দেওয়ার নির্দেশ দিন। এর মধ্যে রয়েছে পুলিশিং অনুশীলনের সংশোধন এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে মানবাধিকারের মানদণ্ডে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়া এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের সুরক্ষা ও সুবিধা নিশ্চিত করা।

৪) বিক্ষোভ পরিস্থিতিতে নিহত ও আহতের একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ, কার্যকর, স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করতে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করুন। বল প্রয়োগের বেআইনি ব্যবহারের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

৫) বেআইনি পুলিশি সহিংসতার শিকার এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের, যারা আহত হয়েছেন এবং যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ এবং এই ধরনের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার নিশ্চয়তা প্রদান করুন।

৬) বাংলাদেশের সংবিধান ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করুন। এ ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার মতো যেসব আইন বাধা রয়েছে, সেগুলা দূর করুন।

ক্যালামার্ড তার চিঠির শেষে লেখেন, আন্তর্জাতিক মঞ্চে মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার প্রদর্শিত হবে। বিশ্ব তাকিয়ে আছে এবং এটা অপরিহার্য যে, বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ