পান চাষ করে ভাগ্য ঘোরাতে গিয়ে বিপাকে বরজ চাষিরা

গ্রামগঞ্জের বিয়ে-সাদি ও মেলানিতে পান-সুপারি দিয়ে আতিথেয়তা পুরোনো সংস্কৃতি। যুগ যুগ ধরে যে কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানের মেহমানদারিতে গুরুত্বসহকারে রাখা হয় পান-সুপারি। মুরব্বীদের কাছেও পান-সুপারি বেশ জনপ্রিয়। খাওয়া-দাওয়া শেষে পান-সুপারি মুখে না দিলে যেন তাদের ঘুম হয় না। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক কিছুর পরিবর্তন হলেও অতিথেয়তার ঐতিহ্য পান-সুপারির কদর কমেনি বরং বেড়েছে। পান চাষ করে ভাগ্য বদল করেছেন অনেকে।

তবে পাট-পেঁয়াজ ও ধান উৎপাদনে বিখ্যাত ফরিদপুরের সালথায় পানের বরজ করে ধরা খেয়েছেন বেশ কয়েকজন চাষি। আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পান হাট-বাজার থেকে কিনে নিজেদের চাহিদা মেটাতেন এখানকার মানুষ। উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া ও রাজনগর গ্রামে এবারও সুস্বাদু মিষ্টি পানের চাষ হচ্ছে। নিজেদের ভাগ্য বদলের চেষ্টায় ৩০ বিঘা পতিত জমিতে পান চাষ করে করছেন অন্তত ২০ জন কৃষক।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, নিরাপত্তার জন্য পানের বরজগুলো চারদিক দিয়ে বেড়া দেয়া হয়েছে। জমির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে থাকা পাটকাঠির সঙ্গে জড়িয়ে আছে পানের গাছ। গাছগুলোতে ঝুলছে সবুজ রংয়ের মিষ্টি পান। কৃষকরা পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যদিও তীব্র শীত ও কুয়াশার প্রভাব নিয়ে কিছুটা দুঃশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে চাষিরা। কারণ শীত আর কুয়াশায় পানের ক্ষতি হবার শঙ্কা থাকে

পানের বরজ মালিকরা জানান, জীবন যুদ্ধে অভাব-অনটন লেগেছিল আমাদের। সংসারে দুঃখ ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। তখন নিজেদের কষ্ট দূর করতে আমরা পরিত্যক্ত জমিতে স্বল্প পুঁজিতে পান চাষে মনোনিবেশ করি। ধৈর্য আর পরিশ্রমের মাধ্যমে বদলানোর চেষ্টা করছি আমাদের জীবন। কিন্তু পান আবাদ করে আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ ধরা খেয়েছে। পানের উৎপাদন খরচও ঘরে তুলতে পারবে না তারা।

ফুলবাড়িয়া গ্রামের পান চাষি অসিত সাহা, সজীব চক্রবর্তী ও বিমল মন্ডল জানান, আমরা পাট-পেঁয়াজের পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে মিষ্টি পান চাষ করে আসছি। প্রতিবিঘায় পানের বরজে এক লাখ ২০ হাজার টাকা মতো খরচ হচ্ছে। ভাল ফলন পেলে দুই লাখ টাকার পান বিক্রি করা যায়। তবে বেশিরভাগ মালিকের বরজে পানের ফলন কম হয়েছে এবার। যে কারণে তাদের উৎপাদন খরচও উঠবে না। আর যারা হাইব্রিড জাতের পান চাষ করেছে, তারা লাভবান হবেন। তাদের বরজে পান যদি ভালো হয় তাহলে দ্বিগুণ লাভ হবে।

তারা আরও জানান, মিষ্টি পান চাষ করে ভাগ্য ঘোরানোর সুযোগ নেই। বাজারে হাইব্রিড জাতের বড় বড় পানের চাহিদা বেশি। দামও ভাল পাওয়া যায়। কিন্তু একবিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের পান চাষ করতে গেলে ২ লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়। যা বহন করা অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকার যদি আমাদের পুঁজির ব্যবস্থা করে আর কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে আমরাও হাইব্রিড জাতের পান চাষ করতে পাবরো। এতে আমাদের ভাগ্য বদলের সুযোগ পাবো।

সালথা উপজেলা কৃষি অফিসার সুদর্শন সিকদার জানান, সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নে এবার ৩০ বিঘা জমিতে পানের বরজ রয়েছে। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব পড়েনি পানের বরজে। এখনও পান খুব ভালো আছে। সার খৈল ও স্প্রেসহ পানের পরিচর্যায় নানা পরামর্শ দিয়ে আসছি কৃষকদের। ফলন ও দাম বেশি পেলে কৃষকরা দিন দিন পান চাষে আগ্রহী হবেন। সরকারিভাবে কোনো প্রণোদনা আসলে তাদেরকে দেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ