ফিরোজ মান্না
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়ে বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে দেশি বিদেশি চক্রান্তের প্রতিশোধের প্রতীক হিসাবে। সেতু নির্মাণের শুরুতেই দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলো অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়িয়ে যে অপমান করেছিল, সেই অপমানের ‘মধুর প্রতিশোধের প্রতীক’ হচ্ছে আজকের এই পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার। গোটা জাতি আজ সেতু উদ্বোধনের উপেক্ষায় অধীর আগ্রহে আছেন। ২৫ জুন সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে দিন সকাল ৬ টা থেকে সব ধরণের পরিবহন চলাচল করবে সেতুর উপর দিয়ে। গোটা দেশের সঙ্গে এই সেতু সংযোগ স্থাপন করবে। দেশের মানুষ সেই দিনের অপেক্ষায় রয়েছে। আর সেতু উদ্বোধনের উৎসবে দেশের সব মানুষ যুক্ত হবেন। সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সেতু মন্ত্রী বলেন,উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। ড. মুহম্মদ ইউনূস পদ্মা সেতুর চরম বিরোধীতা করেছিলেন। তিনি যাতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন সে বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই দুই জনকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হবে বলে জানিয়েছিলেন।
ওবায়দুল কাদের রবিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এই সেতু আমাদের সামর্থ্য, সক্ষমতার সেতু। এই সেতু একদিকে সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। অন্যদিকে আমাদেরকে যে অপমান করা হয়েছিল সে অপমানের প্রতিশোধের প্রতীক।’ বিশ্বব্যাংক এই সেতু প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার পর বিরুদ্ধ স্রোতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভূমিকা পালন করেছেন, তাতে এই সেতুর কৃতিত্ব আসলে তারই। তার একক সিদ্ধান্তেই পদ্মা সেতু হয়েছে। এখানে আর কারও কোন কৃতিত্ব নেই। আমরা শুধু তার নির্দেশ, নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি। এই সেতু নির্মাণ করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন আমরা বীরের জাতি। আমরা দুর্নীতি করি না। তিনি যে কারো কাছে মাথা নত করেননি কোন দিন পদ্মা সেতু তার একটি বড় প্রমাণ।
মন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণে যখন উদ্যোগ নেয়, তখন ঋণচুক্তি করা হয় দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবির সঙ্গে। তবে সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ তুলে এক পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক সরে গেলে অন্যরাও এই প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়। শুরু থেকেই সরকার এই অভিযোগকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে এসে বলতে থাকে, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে বেআইনিভাবে ড. ইউনূসকে রাখতে রাজি না হওয়ায় বিশ্বব্যাংককে দিয়ে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। এই ঘটনায় সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানিয়ে এই ব্যবস্থায় রাজি হয়নি।
পরে বিশ্বব্যাংক কানাডার আদালতে এসএনসি লাভালিন নামে দেশটির পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। এই প্রতিষ্ঠানটিই পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পাওয়ার কথা ছিল। তবে সেই মামলা টেকেনি, দেশটির একটি আদালতে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে ‘গালগপ্প’ বলে উড়িয়ে দেয়। বিশ্বব্যাংকের সে সময়ের ভূমিকার কথা তুলে আক্ষেপ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনাকে একা নয়, একটা ফ্যামিলিকে, গোটা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে টার্গেট করা হয়। আমি মন্ত্রী, আমার রুমে বসে অফিসে মন্ত্রণালয়ে বিশ্ব ব্যাংকের পাকিস্তানি ডিরেক্টর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির দিকে তাকিয়ে আমাকে বলছে ‘দিজ লেডি ইজ দ্যা মোস্ট করাপ্ট উইমেন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’। এ ধরনের অপমানজনক বক্তব্য তারা তখন বলেছিল। শেখ রেহানাকেও ছাড়েনি। জয়কে, পুতুলকে, ববিকে–গোটা পরিবারকে অপমানিত করল। সেজন্য আমরা বলছি, বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর বীর কন্যা শেখ হাসিনা তিনি সেদিন জোর গলায় সংসদে ভাষণ দিয়েছিলেন, আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। সেদিন আমাদের আশেপাশে অনেকই ছিল না। অনেককেই বিদ্রূপ করতে শুনেছি। এটা কি সম্ভব বিশ্ব ব্যাংক ছাড়া? শেখ হাসিনা বললেই হবে নাকি? কীভাবে হবে, কোথায় পাবে টাকা। আরও যে কত কথা আমাদের সহ্য করতে হয়েছে পদ্মা সেতুর জন্য।
মন্ত্রী বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলার গাড়ি যখন একসঙ্গে ঢাকায় ঢোকা শুরু হবে, তখন যে চাপ ঢাকার ওপর তৈরি হবে, সেটা নিয়ন্ত্রণে সরকার কী ভাবছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এসব অনেক ভাবনা চিন্তা আমাদের আছে। সংশয় ছিল পদ্মা সেতু হবে কী হবে না। সেটা যখন পেরেছি, এই চাপও আমরা মোকাবিলা করতে পারব।