স্টাফ রিপোর্টার : কোরবানির জন্য প্রস্তুত সোয়া ১ কোটির বেশি গবাদিপশু বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। কোরবানির জন্য দেশে এবার ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। চাহিদার তুলনায় কোরবানির পশুর সংখ্যা বেশি। কোরবানি উদযাপনে সরকারের পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ প্রস্তুতিও রয়েছে বলে জানান রেজাউল করিম।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ ও অবাধ পরিবহণ নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মন্ত্রী এ কথা জানান।
এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘অন্যান্য বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চাহিদা নিরপণ করা হয়েছে। কোরবানির চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত পশু প্রস্তুত আছে। ফলে, কোরবানির জন্য কোনোরকম সংশয়, সংকট বা আশঙ্কার কারণ নেই।’
‘কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হবে’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘রোগগ্রস্ত পশুর হাটে বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ হয়রানির শিকার হবেন না, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োগ করা হবে। আমরা সুন্দরভাবে আসন্ন ঈদুল আজহা উদযাপন করতে চাই।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ঈদুল আজহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি যাতে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে এবং পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে উদযাপন করা যায় সে লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সরকারের অন্যান্য দপ্তর-সংস্থা কাজ করছে। কোরবানির পশুর জন্য অতীতে পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হতো।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও কোনো খামারি নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলে তাকে হাসিল দিতে হবে না। কোনো খামারি তার পশু দূরবর্তী হাটে নিতে চাইলে, রাস্তাঘাটে জোর করে নামাতে বাধ্য করা যাবে না। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকারের ইউনিট (পৌরসভা), উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে।’
প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আরও বলেন, ‘হাটে আনার পথে কেউ প্রাণী বিক্রি করলে তার কাছ থেকে ইজারাগ্রাহক জোর করে চাঁদা বা হাসিল গ্রহণ করতে পারবে না। এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। নগদ টাকা বহন না করে বিকল্প উপায়ে স্মার্ট পদ্ধতিতে খামারিরা যাতে আর্থিক লেনদেন করতে পারে, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘গতবছর অনলাইন প্লাটফর্মে প্রচুর গবাদিপশু বিক্রি হয়েছিল। এ বছরও এই পদ্ধতি অব্যাহত থাকবে, যা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য সুখকর অবস্থা তৈরি করবে। ক্রেতারা যেন কোনোভাবেই প্রতারিত না হয়, সেজন্য অনলাইনে কেনা গরু পছন্দ না হলে, টাকা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থাও এবছর সংযোজন করা হচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘লাভের আশায় কোরবানির অনুপযুক্ত পশু বা রোগগ্রস্ত পশু যেন কেউ বিক্রির চেষ্টা না করে, এ বিষয়টি সকলকে তাগিদ দিতে হবে। প্রতিটি নির্ধারিত কোরবানির পশুর হাটে ভ্যাটেরিনারি সার্জন থাকবে। গবাদিপশু কোরবানির উপযোগী কি না বা তাদের শরীরে দূষিত পদার্থ প্রবেশ করানো হয়েছে কি না, তারা সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘মহাসড়কে বা যেখানে হাট বসালে যান চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমন কিছু যাতে না হয়, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে। সড়কে বা সেতুতে কোরবানির পশু পরিবাহী গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, যাতে রাস্তায় পশু আটকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না হয়। এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হবে।’
রেজাউল করিম বলেন, ‘সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে গবাদিপশু কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে গবাদিপশুর খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে, চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার বিষয়টিও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। কোরবানির সময় যাতে ওই অঞ্চলে দেশের অন্য অঞ্চল থেকে পশু যেতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, মো. তৌফিকুল আরিফ ও এস এম ফেরদৌস আলম, বিভাগীয় কমিশনারগণ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের উপপরিচালক মো. শেফাউল করিম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা সভায় অংশগ্রহণ করেন।